গত পঁচিশ বছর যাবৎ টেলিকম আপিল ট্রাইবুনাল রাজধানীর সরকারি সম্রাট হোটেলের একটি ঘর থেকে কাজ চালাচ্ছে! যাবতীয় শুনানিও হয় সেখানে। অথচ প্রাথমিক যে উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল, তার থেকে কাজের পরিধি অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আপিল ট্রাইবুনালের। ফলে পড়ে রয়েছে ছ’হাজারের বেশি মামলা। রাজনৈতিক সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে।
কর্মীবর্গ, জন অভিযোগ, আইন ও বিচার সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির আজকের বৈঠকে ট্রাইবুনালের আধিকারিকরা যে সমস্ত তথ্য তুলে ধরেছেন, তাতে এই ছবি স্পষ্ট হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে কমিটির কাছে। সূত্রের খবর, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমিটির বিজেপি সদস্যরাও গোটা ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সূত্রে প্রকাশ, বৈঠকে উপস্থিত বিজেপি-র রাজ্যসভার সদস্য হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, দিল্লিতে কিছু সরকারি ভবন থেকে নানা মন্ত্রক স্থানান্তরিত হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই সব ভবনের কোথাও ট্রাইবুনালকে নিয়ে যাওয়া যায় কি না, সে চেষ্টা করতে পারেন সেখানকার আধিকারিকেরা।
এই ট্রাইবুনাল ১৯৯৭-এ তৈরি হয়েছিল টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির মধ্যে মামলার আপিলের শুনানি এবং নিষ্পত্তি ঘটাতে। গ্রাহকদের পরিষেবা সংক্রান্ত আপিলেরও নিষ্পত্তি করাও তাদের কাজের মধ্যে ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের ঘাড়ে একের পর এক বাড়তি দায়িত্ব চাপানো হয়। যেমন— সম্প্রচার ও কেব্ল পরিষেবা, সাইবার অপরাধের ফলে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের আপিল, এমনকি আধার কার্ডের মাধ্যমে পরিষেবা এবং এয়ারপোর্ট শুল্ক সংক্রান্ত আপিলও।
সংশ্লিষ্ট মহলের আরও অভিযোগ, তাদের কাজের পরিধি বিপুল বাড়ানো হলেও অন্যান্য আইন সংক্রান্ত বিষয়ে আপিল শোনার জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়নি। সেই ১৯৯৭ থেকে ট্রাইবুনালে মাত্র একজন চেয়ারম্যান, একজন টেকনিক্যাল সদস্য, আর একজন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস-এর পদ রয়েছে। চেয়ারম্যান পদে সাধারণ ভাবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকই থাকেন। সূত্রের খবর, বিভিন্ন আপিল মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা জন্মলগ্ন থেকে এখনও পর্যন্ত ১৮,৪৫৯টির মধ্যে ১২,৪৬০টি শেষ করা গিয়েছে। এখনও ৬০০০ বিচারাধীন।
রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আজকের বৈঠকে টেলিকম মন্ত্রকের কেউ না থাকায় সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপি-র ব্রিজলাল জানান, এই বিষয়ে আবারও বৈঠক ডাকা হবে। সে দিন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের আধিকারিকদের হাজির থাকতে হবে বলে জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, কমিটির সদস্য তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, সাইবার অপরাধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের যে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে সেখান থেকে ক্ষতিপূরণ না পেলে যে এই ট্রাইবুনালে আপিল করা যায়, তা অনেকেই জানেন না। তাই এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের সাহায্যে ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)