গত ন’বছরে এই প্রথম। মুছে যাওয়ার পথে হাঁটতে পারে বিদেশি মুদ্রা আয়-ব্যয়ের ঘাটতি।
বিশেষজ্ঞরা এ রকম ইঙ্গিত দিয়েই বলেছেন, চলতি ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের এপ্রিল থেকে জুনে এই ঘাটতি বদলে যেতে পারে উদ্বৃত্তে। এই পূর্বাভাস মিললে ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ ত্রৈমাসিকের পরে এটিই হবে চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনে উদ্বৃত্তের প্রথম নজির। প্রসঙ্গত, চলতি মাসেই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এপ্রিল থেকে জুনের জন্য বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতির হিসেব জানাবে।
মূলত অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও শিল্পমহলের তরফ থেকেই এ রকম ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনে উদ্বৃত্ত ৪০০ কোটি ডলার বা ২৬,৮০০ কোটি টাকা ছুঁতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়াবে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি-র ০.৮%।
বাড়তি বিদেশি মুদ্রা এলে তা টাকার দাম বাড়াতে সাহায্য করবে ও রাজনৈতিক স্তরে তা নিয়ে অনেক ঢাক-ঢোল পেটানো হবে বলেই মনে করছেন ওই বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ভারতের মতো অর্থনীতির পক্ষে এই উদ্বৃত্ত যে পুরোপুরি সুখের হবে না, সেটাই যুক্তি তাঁদের। তাঁরা মনে করেন, এটা দেশে শিল্পে লগ্নি কমার লক্ষণ হতে পারে, যার জেরে তলানিতে নামতে পারে কাঁচা মাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি। পাশাপাশি, তাঁদের ধারণা, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিশ্চয়ই চাইবে না, টাকার দাম খুব বেশি বাড়ুক। কারণ তা হলে মার খাবে রফতানি।
তবে, ঘাটতি যদি উদ্বৃত্তে রূপান্তরিত হয়, তা হলে সেটা নিয়ে সরকারি প্রচার যে তুঙ্গে উঠবে, সে ব্যাপারে সংশয় নেই বিশেষজ্ঞদের। কারণ, বিদেশি মুদ্রা আয়-ব্যয়ের বাড়তে থাকা ফারাক ঘুম কেড়ে নিয়েছিল পূর্বতন ইউপিএ সরকারের। নিজের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে এক সময়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল চলতি খাতে ঘাটতি। ছুঁয়েছিল মোট অভ্যন্তরীণ উত্পাদনের ৬.৭ শতাংশ। এর মাসুল গুনে টাকার সাপেক্ষে রেকর্ড উচ্চতায় উঠে গিয়েছিল ডলার। এর পরেই বিদেশি মুদ্রা আসা বাড়ানো এবং দেশ থেকে তা বেরোনো কমাতে একাধিক পদক্ষেপ করে কেন্দ্র। যেমন, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি বিধিনিষেধ চাপানো হয় বিদেশ থেকে সোনা-রুপো আনায়। এই সবের প্রভাবেই ধীরে ধীরে কমেছে ঘাটতি।
এ নিয়ে যে অহেতুক উচ্ছ্বাসের কারণ নেই, সেই ইঙ্গিত দিয়ে আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজ প্রাইমারি ডিলারশিপ-এর অর্থনীতিবিদ এ প্রসন্ন বলেন, ‘‘শিল্পে লগ্নি যে যথেষ্ট দুর্বল, বিদেশি মুদ্রা উদ্বৃত্ত হলে তার প্রমাণই মিলবে। আমদানি-রফতানির পরিসংখ্যানে ইতিমধ্যেই বিপদ সঙ্কেত মিলেছে বলে সাবধান করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মাসের পরিসংখ্যান অনুসারে এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে আমদানি ১৬.৩৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১,৪০০ কোটি ডলার। রফতানিও ৩.৬২ শতাংশ কমে হয়েছে ৮৭০০ কোটি ডলার।