টাকার অভাবে বসে গিয়েছিল বিজয় মাল্যের কিংফিশার। একই হাল হয়েছিল নরেশ গয়ালের জেট এয়ারওয়েজ়ের। এ বার সেই কারণে বসিয়ে দেওয়া হল ওয়াদিয়া গোষ্ঠীর কম খরচের পরিষেবা সংস্থা গো-ফার্স্টের ৫০ শতাংশেরও বেশি বিমান। সংস্থাকে বাঁচাতে দেউলিয়া আইনে আবেদন করল তারা। বাতিল করা হল উড়ান আজ ও কালের উড়ান। চরম ভোগান্তির মুখে পড়লেন যাত্রীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে সংস্থাটি জানায় নগদের অভাব গুরুতর জায়গায় পৌঁছে যাওয়ায় বুধ এবং বৃহস্পতিবার তাদের অর্ধেকের বেশি উড়ান বাতিল হয়েছে। রাতে খবর মেলে, মুম্বই, আমদাবাদের মতো বিভিন্ন শহরের বহু বেসরকারি বিমানবন্দর গো-ফার্স্টের বিমানকে নামতে দিচ্ছে না। কারণ আশঙ্কা, সংস্থা সেই বাবদ টাকা মেটাতে পারবে না। সূত্র জানায়, জম্মু থেকে রওনা হওয়া একটি বিমান মুম্বইতে নামতে না পেরে শেষে সুরাতে অবতরণ করতে বাধ্য হয়। যাত্রীরা কার্যত অথৈ জলে পড়েন।
তার আগে মঙ্গলবার সকালে বুধবারের উড়ানের জন্য ওয়েব চেক-ইন করতে গিয়ে হোঁচট খান অনেকে। যেমন, চিকিৎসক শতদল সাহার বাগডোগরা থেকে গুয়াহাটি যাওয়ার কথা ছিল। উড়ান বাতিলের কথা জানার পরে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যায় সড়কপথে রওনা দেন তিনি। সমস্যায় পড়েন এমন আরও অনেকে। বাতিল উড়ানের টিকিটের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও দানা বাঁধে সংশয়। অভিজ্ঞদের দাবি, কিংফিশার ও জেট বসে যাওয়ার সময়ে বহু যাত্রীর টিকিটের টাকা মার গিয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যা পরিস্থিতি তাতে আদৌ গো-ফার্স্ট নিয়মিত উড়ান চালাতে পারবে কি না সন্দেহ। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের অবশ্য অভিযোগ, আচমকা এ ভাবে উড়ান বাতিল করলে যে দুর্ভোগ হয়, তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? রাতে একাংশের গন্তব্য বদলের পরে ক্ষোভ বাড়ে।
১৭ বছরের পুরনো গো-ফার্স্টের কর্তা কৌশিক খোনা জানান, টাকার অভাবে বসিয়ে দিতে হচ্ছে বিমান। সংস্থাকে এই অবস্থা থেকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনালে (এনসিএলটি) আবেদন করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, তাঁরা বিমানে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি সংস্থার ইঞ্জিন ব্যবহার করে। টাকার অভাবে তা আনা যাচ্ছে না। তাই ২৮টি বিমান বসিয়ে দিতে হচ্ছে। ইঞ্জিনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও করা যাচ্ছে না। পুঁজির ঘাটতিতে মিলছে না যন্ত্রাংশ। আর্থিক দায়ও পূরণ সম্ভব নয়।
কৌশিকের দাবি, তিন বছরে ৩২০০ কোটি টাকা লগ্নি হলেও লাভ হয়নি। দুর্দশার কথা কেন্দ্রকে জানিয়েছেন।নিয়ন্ত্রক ডিজিসিএ-র কাছে শীঘ্রই রিপোর্ট জমা দেবেন। তবে তাঁর বার্তা, এনসিএলটি আবেদন মঞ্জুর করলেই গো-ফার্স্ট নিয়মিত উড়ান চালাবে। সেটা করতে দু’দিনই লাগবে। তবে, এই সিদ্ধান্তে গো-ফার্স্টের প্রায় ৫০০০ কর্মীর ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে। বিমানমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার অবশ্য বার্তা, এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। তবে কেন্দ্র সব রকম ভাবে সংস্থাকে সাহায্য করছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)