প্রয়াত হলেন হিন্দুজা গোষ্ঠীর কর্ণধার গোপীচাঁদ হিন্দুজা। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। পরিবার সূত্রের খবর, ক’সপ্তাহ ধরে অসুস্থ ছিলেন। মঙ্গলবার লন্ডনের এক হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান হয়। রেখে গিয়েছেন স্ত্রী সুনীতা, দুই ছেলে সঞ্জয় ও ধীরাজ এবং কন্যা রীতাকে।
ব্রিটেনের সব থেকে বিত্তবান পরিবার হিন্দুজারা। ব্যবসা ছড়িয়ে ভারত-সহ ৪৮টি দেশে। দীর্ঘদিন গোষ্ঠীর বিভিন্ন ব্যবসার দায়িত্ব সামলানোর পরে ২০২৩ সালে বড় ভাই শ্রীচাঁদের মৃত্যু হলে চেয়ারম্যান হন গোপীচাঁদ। একদা বফর্স কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো হিন্দুজা কর্ণধারের হাত ধরেই গোষ্ঠীর ব্যবসা পৌঁছেছে ৩৫০০ কোটি পাউন্ডে (প্রায় ৪.১৩ লক্ষ কোটি টাকা)। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ব্রিটেন-ভারতের শিল্প ও রাজনৈতিক মহলের ব্যক্তিত্বেরা।
১৯৪০-এ জন্মানো গোপীচাঁদ মুম্বইয়ের জয় হিন্দ কলেজ থেকে পাশ করেন ১৯৫৯ সালে। এর পরে ইরানের তেহরানে বাবার লেনদেন ব্যবসা দিয়ে কাজে হাতেখড়ি। শিল্প জগতে পরিচিত ছিলেন জিপি নামে। ব্যবসার কাজে তাঁর সঙ্গী ছিলেন দাদা শ্রীচাঁদ, দুই ভাই অশোক এবং প্রকাশ।
গোপীচাঁদের নেতৃত্বেই ১৯৮৪-তে গাল্ফ অয়েল হাতে নেয় হিন্দুজারা। ভারতে ১৯৮৭-তে কেনে অশোক লেল্যান্ড। এটি কোনও অনাবাসী ভারতীয়ের প্রথম এত বড় লগ্নি। বলা হয়, ধুঁকতে থাকা অশোক লেল্যান্ড কার্যত গোপীনাথের জাদুস্পর্শেই হয়ে ওঠে দেশের অন্যতম বড় গাড়ি সংস্থা। ইন্দাসইন্ড ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আর্থিক পরিষেবা চালু করে হিন্দুজারা। তাঁর পরিবারের হাতে আছে ব্রিটেনে অষ্টাদশ শতাব্দীতে তৈরি কার্লটন হাউস টেরেস, হোয়াইটহলে বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত ওল্ড ওয়ার অফিস এবং সুইৎজ়ারল্যান্ডের একমাত্র ভারতীয়দের দখলে থাকা ব্যাঙ্কও (এসপি হিন্দুজা ব্যাঙ্কি প্রিভি)।
তবে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি গোপীচাঁদকে। শ্রীচাঁদ ও প্রকাশের সঙ্গে মিলে তিনি সুইডিশ এবি বফর্সকে ভারতে যুদ্ধাস্ত্র তৈরির বরাত পাইয়ে দিতে ৬৪ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও ২০০৫ সালে দিল্লি হাই কোর্ট তা খারিজ করে। নব্বইয়ের দশকে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পেতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল গোপীচাঁদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, শ্রীচাঁদের মৃত্যুর আগে থেকেই সুইস ব্যাঙ্কের মালিকানা নিয়ে তাঁর মেয়েদের সঙ্গে বাকি তিন ভাইয়ের লড়াই গড়ায় আদালতে। পরে সমঝোতায় এলেও, বিবাদ পুরো মেটেনি। এই অবস্থায় চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পরে হিন্দুজা গোষ্ঠীর দায়িত্ব কোন হাতে যায়, নজর সে দিকেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)