ফের রেপো রেট হ্রাস করল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআই। এর জেরে গৃহঋণে কমতে পারে মাসিক কিস্তির অঙ্ক। পাশাপাশি, রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত বা এফডিতে (ফিক্সড ডিপোজ়িট) সুদ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেল বলেই মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। গৃহঋণের ক্ষেত্রে মাসিক কিস্তির পরিমাণ দু’হাজার টাকা পর্যন্ত কমার ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা।
শুক্রবার, ৬ জুন তিন দিনের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক শেষে নতুন রেপো রেট ঘোষণা করেন আরবিআইয়ের গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্র। ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে এই সূচককে ৫.৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন তিনি। যে সুদের হারে সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে আরবিআই ঋণ দিয়ে থাকে, অর্থনীতির পরিভাষায় তাঁকে বলে রেপো রেট। সেই কারণে এটি হ্রাস পেলে সঙ্গে সঙ্গে কমে যায় গাড়ি বা বাড়ির ঋণের মাসিক কিস্তি।
আরও পড়ুন:
রেপো রেট কমায় গৃহঋণে কতটা প্রভাব পড়বে, একটি উদাহরণের সাহায্যে তা বুঝে নেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, একজন গ্রাহক ব্যাঙ্ক থেকে ৩০ বছরের মেয়াদে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর জন্য বছরে ৮.৭ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হচ্ছে তাঁকে। অর্থাৎ, বর্তমানে তাঁর মাসিক কিস্তির পরিমাণ ৩৯ হাজার ১৩৬ টাকা। এখন আরবিআই রেপো রেট কমানোয় ওই সুদের হার নেমে আসবে ৮.২ শতাংশে। ফলে মাসিক কিস্তি কমে দাঁড়াবে ৩৭ হাজার ৩৪৬ টাকা।
এই হিসাবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক প্রতি মাসে ১,৭৯০ টাকা করে বাঁচাতে পারবেন। এক বছরে তাঁকে ২১ হাজার ৪৮০ টাকা কম দিতে হবে। আর মেয়াদ শেষে দেখা যাবে ৬ লক্ষ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা সাশ্রয় হয়েছে ওই ব্যক্তির। বর্তমানে দু’টি পদ্ধতিতে গৃহঋণ দিয়ে থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক। একটি স্থায়ী এবং অপরটি ভাসমান সুদ। আরবিআইয়ের রেপো রেটের সঙ্গে দ্বিতীয়টি সম্পৃক্ত। ফলে কেবলমাত্র ভাসমান সুদের গৃহঋণের গ্রাহকেরাই এই আর্থিক সুবিধা পাবেন, অন্যেরা নয়।
চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত মোট তিন বার রেপো রেট হ্রাস করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে আরবিআই। আর তাই আর্থিক বিশ্লেষকদের দাবি, ২০ বছরের মেয়াদে ৫০ লক্ষ টাকার গৃহঋণের মাসিক কিস্তিতে মাসে ৩,৮০০ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় করার সুযোগ থাকছে গ্রাহকদের কাছে।
অন্য দিকে, আরবিআই রেপো রেট হ্রাস করায় ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। সরকারি এবং বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি কিছু দিনের মধ্যে এফডির নতুন সুদের হার প্রকাশ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যাঙ্কভেদে এতে তারতম্য দেখতে পাওয়া যাবে বলে স্পষ্ট করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।