কেন্দ্রীয় বাজেটে আয়করে বিপুল ছাড়ের ঘোষণা করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ফলে আগামী অর্থবর্ষে (পড়ুন ২০২৫-’২৬) পুরনো না নতুন, কোন কাঠামোতে গেলে বেশি টাকা সাশ্রয় করতে পারবেন করদাতারা? এই নিয়ে ইতিমধ্যেই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। বেতন বা বার্ষিক রোজগারের ভিত্তিতে কত টাকা কর দিতে হতে পারে, তা ঘরে বসেই হিসাব করার সুযোগ রয়েছে করদাতাদের। এর জন্য লগ ইন করতে হবে দু’টি বিশেষ ওয়েবসাইট।
বর্তমানে আয়করের ক্ষেত্রে চালু রয়েছে দু’টি কাঠামো। একটি পুরনো এবং অপরটি নতুন কর ব্যবস্থা। ‘ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর’-এর মাধ্যমে নতুন কাঠামোতেই কত টাকা কর দিতে হতে পারে, তা জেনে নিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট করদাতা। এর জন্য প্রথমে তাঁকে ওই ওয়েবসাইটটিতে লগ ইন করতে হবে। এর পর করদাতাকে জানাতে হবে বাড়ির ঠিকানা এবং বার্ষিক করযোগ্য আয়ের অঙ্ক-সহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সব শেষে সাবমিট অপসানে ক্লিক করলে স্ক্রিনে ফুটে উঠবে আয়করের পরিমাণ।
পুরনো কাঠামো মেনে কর দিতে চাইলে ‘এগজিস্টিং ইনকাম ট্যাক্স ক্যালকুলেটর’ নামের পোর্টালে লগ করতে হবে। এর পর সেখানে বেতন, ভাড়া বাবদ আয়, ব্যবসায়িক আয় এবং অন্যান্য আয়ের তথ্য দেবেন সংশ্লিষ্ট করদাতা। এই ব্যবস্থায় আয়কর আইনের ৮০সি এবং ৮০ডি ধারা-সহ একাধিক নিয়মে ছাড়া পাওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি। ফলে সেই সংক্রান্ত তথ্যও ওই পোর্টালে দিতে হবে তাঁকে। এখানেও সব শেষে সাবমিটে ক্লিক করলে মোট বার্ষিক করের পরিমাণ জানতে পারেবেন ওই ব্যক্তি।
২০২৫-’২৬ আর্থিক বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে স্বস্তি দিতে নতুন কর কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করেছে সরকার। তবে পুরনো কর ব্যবস্থায় কোনও বদল করেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। নতুন কাঠামোতে সরকারি এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের বার্ষিক ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগারে দিতে হবে না একটা টাকাও কর। একই ভাবে ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ছাড় দিয়ে করের অঙ্ক শূন্য রেখেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:
নতুন কর কাঠামোতে রয়েছে মোট সাতটি স্ল্যাব। এ বারের বাজেটে সেখানেও কিছু রদবদল করেছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী নির্মলা। বার্ষিক চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে করের পরিমাণ শূন্য রেখেছেন তিনি। চার লক্ষ এক টাকা থেকে আট লক্ষে পাঁচ শতাংশ, আট লক্ষ এক টাকা থেকে ১২ লক্ষে ১০ শতাংশ এবং ১২ লক্ষ এক টাকা থেকে ১৬ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে ১৫ শতাংশ কর ধার্য হয়েছে। ১৬ লক্ষ এক টাকা থেকে ২০ লক্ষ, ২০ লক্ষ এক টাকা ২৪ লক্ষ এবং ২৪ লক্ষের বেশি আয়ের ক্ষেত্রে করের পরিমাণ যথাক্রমে ২০, ২৫ এবং ৩০ শতাংশ ঠিক করা হয়েছে।
নতুন কর ব্যবস্থায় স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশান বাবদ ৭৫ হাজার টাকা ছাড় পাবেন করদাতা। এ বারের বাজেটে এই অঙ্কে কোনও বদল করেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পুরনো কর কাঠামোতে আবার স্ল্যাব রয়েছে মোট চারটি। এতে বার্ষিক আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে দিতে হবে কোনও কর। আড়াল লক্ষ এক টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লক্ষ, পাঁচ লক্ষ এক টাকা থেকে ১০ লক্ষ এবং ১০ লক্ষের বেশি আয়ের ক্ষেত্রে বার্ষিক করের পরিমাণ যথাক্রমে পাঁচ, ২০ এবং ৩০ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।
পুরনো কর ব্যবস্থায় ৬০ থেকে ৮০ বছর বয়সীরা বছরে তিন লক্ষ এবং ৮০ ঊর্ধ্বরা বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাবেন। এ ছাড়া আয়কর আইনের ৮০সি ধারা অনুযায়ী এতে করদাতা পিপিএফ, ইএলএসএস এবং জীবন বিমায় দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পেতে পারেন। ৮০ডি ধারায় আবার রয়েছে স্বাস্থ্য বিমায় ছাড়। পাশাপাশি পুরনো ব্যবস্থায় আয়কর আইনের ২৪ (বি) ধারায় গৃহঋণের সুদের হারে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পেয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট করদাতা।