রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস ছিল, এপ্রিল-জুনে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৮%। তবে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান জানাল, বাস্তবে তা থমকেছে ৭.৮ শতাংশে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এই হার উঁচু দেখতে লাগলেও উদ্বেগ যাচ্ছে না। কারণ আনাজ-সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের হাত ধরে মাথা তোলা মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো না গেলে বৃদ্ধি ধাক্কা খেতে পারে।
গত বছর একই সময় বৃদ্ধি ছিল ১৩.১%। এ বার তার অনেক কম। তবু বৃহৎ অর্থনীতিগুলির মধ্যে এখনও দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ ভারত। কারণ, চিনে এই হার নেমেছে ৬.৩ শতাংশে। সরকারি তথ্য বলছে, ২০১১-১২ অর্থবর্ষের মূল্যহারের নিরিখে ভারতের জিডিপি ৪০.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। আর এখনকার দাম ধরে ৭০.৬৭ লক্ষ কোটি। কৃষি এবং পরিষেবা ক্ষেত্র উন্নতি করেছে। কিন্তু চিন্তা বহাল কল-কারখানায় শিল্পের উৎপাদন নিয়ে। মুখ্য আর্থিক পরামর্শদাতা ভি অনন্ত নাগেশ্বরনও মানছেন, বিশ্ব বাজারে ফের চড়তে থাকা অশোধিত তেল, প্রতিকূল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আঁটোসাঁটো আর্থিক ব্যবস্থা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধাক্কা দিতে পারে। যদিও একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস চলতি অর্থবর্ষে ৬.৫% বৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ হবে। কারণ, চাহিদা ফিরছে। খাদ্যপণ্যের দাম কমবে নতুন জোগান এলেই। মূলধনী খরচ বাড়ছে। এগোচ্ছে পরিষেবা ক্ষেত্র।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ২০২০-২১ অর্থবর্ষের এপ্রিল-জুনে কোভিড রুখতে লকডাউনের জেরে অর্থনীতি সঙ্কোচনের খাদে পড়েছিল। ওই নিচু ভিতের কারণে তার পর থেকে প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার উঁচু থাকছে। তাঁর দাবি, বৃদ্ধির হার আদতে শ্লথ হচ্ছে। তার উপর চিন্তা বাড়িয়েছে উৎপাদন। তার বৃদ্ধি ৬.১% থেকে নেমেছে ৪.৭ শতাংশে।
আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলেন, ‘‘এতটা আর্থিক বৃদ্ধির কারণ মূলত আর্থিক পরিষেবা এবং আবাসন শিল্পের অগ্রগতি। তবে কাজ তৈরি এবং অর্থনীতির ভিত পোক্ত হওয়ার অন্যতম জায়গা কল-কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমেছে। খনন এবং নির্মাণেও গতি শ্লথ। বেকারত্বের সমস্যা দূর হবে না ছবিটা না পাল্টালে।’’ এপ্রিল-জুনে নিশ্চিন্ত হওয়া গেলেও যথেষ্ট বর্ষার অভাবে সারা বছরের আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খেতে পারে, আশঙ্কা পটনা আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকেরও। তিনি বলেন, বর্ষা কম হলে গ্রামীণ চাহিদায় ভাটা পড়বে। চাষবাস ভাল না হলে খাদ্যপণ্যের দামও বাড়বে। ফলে অনিশ্চয়তা বহাল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)