প্রত্যাশার থেকে অনেকটাই ভাল ফল করল অর্থনীতি। কিন্তু আর্থিক অসাম্যের লক্ষণ চাপা থাকল না।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান জানিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বরে) দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৬% ছুঁয়েছে। অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাস অর্থাৎ এপ্রিল-জুনে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৮%।
গত অক্টোবরে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস ছিল, জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশে আটকে যাবে। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান তাকে ভুল প্রমাণিত করল। এর ফলে অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) বৃদ্ধি ৭.৭% ছুঁয়ে ফেলেছে। তবে গত অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে ৯.৫ শতাংশের তুলনায় তা অনেকটাই কম।
সরকারি মহলের ব্যাখ্যা, মূলত তিনটি চাকায় ভর করে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি জোর গতিতে দৌড়েছে— খনি, কারখানায় উৎপাদন এবং নির্মাণ। তিনটি ক্ষেত্রেই বৃদ্ধির হার দু’অঙ্কের ঘরে। কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রে চাকা আটকেছে অনিয়মিত বৃষ্টির জালে। বর্ষার মরসুমে অগস্টে তেমন বৃষ্টি হয়নি। ফলে সব ফসলেরই উৎপাদন মার খেয়েছে। তাই কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধি আটকে গিয়েছে ১.২ শতাংশে। গত সাড়ে চার বছরে এই ক্ষেত্রে এতটা কম বৃদ্ধি দেখা যায়নি। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি কম হওয়ায় খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কাও ঘনাতে শুরু করেছে।
চিন্তায় রাখছে কেনাকাটাও। বেসরকারি খরচ বেড়েছে মাত্র ৩.১% হারে। অর্থনীতি মূলত দৌড়চ্ছে সরকারি খরচ ও সরকারি পরিকাঠামো তৈরির জ্বালানিতে। উপদেষ্টা সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংয়ের অর্থনীতিবিদ সুনীল কুমার সিন্হার মতে, ‘‘বাজারে চাহিদা মূলত শহরে, সেটাও বেশি আয়ের মানুষের মধ্যে। ফলে বিদেশ থেকে পণ্য ও পরিষেবার আমদানি ১৬.৭% বেড়েছে।’’ বিরোধীরা একে মোদী জমানায় ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্যের প্রতিফলন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য নিজে আর্থিক বৃদ্ধির পরিসংখ্যান প্রকাশের পরে বলেছেন, কঠিন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মধ্যেও এই বৃদ্ধির হার ভারতের অর্থনীতির শক্তি ও মজবুত ভিতের প্রমাণ। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকও ‘ভারত এখনও বিশ্বের দ্রুত গতির অর্থনীতি’ দাবি করে উল্লসিত।
পরিসংখ্যান বলছে, বৃষ্টি কম হওয়ায় বর্ষার মরসুমে খনি, নির্মাণ কাজে বাধা পড়েনি। তার উপরে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে খনি ও কারখানা উৎপাদনে সঙ্কোচন দেখা গিয়েছিল। সেই নিচু ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে এই বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে খনিতে ১০%, কারখানা উৎপাদনে ১৩.৯% বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। বর্ষার মরসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদাও বেশি ছিল। ফলে বিদ্যুৎ, গ্যাসের মতো পরিষেবা ক্ষেত্রেও ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকাঠামো নির্মাণে জোর দেওয়ার সুফল দেখা গিয়েছে নির্মাণ ক্ষেত্রের ১৩.৩% বৃদ্ধিতে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আর একটি আশার কথা পণ্য, পরিষেবা রফতানি ক্ষেত্রে ৪.৩% বৃদ্ধি। বিশ্বে টালমাটাল পরিস্থিতি সত্ত্বেও অন্তত পরিষেবা ক্ষেত্রে রফতানি বেড়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)