রফতানি বাণিজ্যের ঘাটতি নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বাড়ছে উদ্বেগ। চলতি বছরের অক্টোবরে সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছেছে সেই ফারাক। টাকার অঙ্কে যেটা প্রায় ৪,২০০ কোটি ডলার। এ-হেন বাণিজ্যিক ঘাটতির নেপথ্যে মূলত দু’টি কারণকে চিহ্নিত করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। সেগুলি হল, রফতানির সূচকে ১২ শতাংশ পতন এবং ব্যাপক পরিমাণে সোনার আমদানি।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ঘাটতি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক। সেখানে বলা হয়েছে, অক্টোবরে বিদেশের বাজারে পণ্য বিক্রির পরিমাণ কমে ৩,৪৩৮ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। অন্য দিকে আমদানি বেড়েছে ১৬.৬৩ শতাংশ, যা রেকর্ড। উৎসবের মাসে ৭,৬০৬ কোটি ডলারের সামগ্রী বিদেশ থেকে ঘরে তুলেছে নয়াদিল্লি, বলছে মোদী প্রশাসন।
উল্লেখ্য, অক্টোবরে আমদানি করা পণ্যগুলির মধ্যে একেবারে সামনের সারিতে ছিল সোনা এবং রুপো। উৎসবের মাসে বিদেশ থেকে ‘হলুদ ধাতু’ কেনার পরিমাণ ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি করে নয়াদিল্লি। রুপোর ক্ষেত্রে ৫২৮ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে এই সূচক। এই দুই ধাতুর অপ্রত্যাশিত চাহিদা আমদানিতে প্রভাব ফেলে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের সোনা এবং রুপো নয়াদিল্লিকে সরবরাহ করে একাধিক বিদেশি রাষ্ট্র। আগামী মাসগুলিতে ‘হলুদ ধাতু’র আমদানি হ্রাস পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোনা-রুপো বাদ দিলে অক্টোবরে বিদেশ থেকে অন্যান্য সামগ্রী কেনার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ১২.৪ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে সার, যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক পণ্য এবং লোহা ও লৌহঘটিত ধাতু। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, উৎসবের মাসে অপরিশোধিত তেলের আমদানি ১,৪৮০ কোটিতে নামিয়ে আনে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন:
অন্য দিকে ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের ৭১ শতাংশ, তৈরি করা পোশাকের ক্ষেত্রে আট শতাংশ এবং রত্ন এবং গয়নার ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ রফতানি হ্রাস পেয়েছে। এই তালিকায় একমাত্র ইতিবাচক জায়গায় রয়েছে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম। তাতে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম রফতানিতেও তেমন আশা জাগাতে পারেনি এ দেশের ফার্মা শিল্প।
এ বছরের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩,১১৫ কোটি ডলার। অক্টোবরে সেটা বেড়ে ৪,১৬৯ কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে। এর নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় পণ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেওয়া এবং ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বাণিজ্য সচিব রাজেশ আগরওয়াল। তাঁর কথায়, ‘‘রফতানির কিছু ক্ষেত্রে সূচক নিম্নমুখী হয়েছে। তবে সেটা সাময়িক। প্রতিযোগিতার বাজারে এ দেশের পণ্য টিকে আছে।’’