লগ্নির দুনিয়ায় সাফল্যের মূল মন্ত্র সদা সক্রিয় থাকা। কারণ, এই জগতের অনেকটাই দ্রুত চলমান এবং পরিবর্তনশীল। তাই দেশে-বিদেশে প্রতিনিয়ত কী ঘটে চলেছে, তার উপর নজর রাখতে হয়। পরিবর্তনশীলতার দিক থেকে লগ্নি প্রকল্পগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এক, স্থির আয়ের। দুই, অনিশ্চিত আয়ের।
স্থির আয়ের প্রকল্প সেগুলি, যেখানে ভবিষ্যতে কতটা টাকা মিলবে জানা থাকে। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন বদলের প্রভাব ছোট মেয়াদে তেমন পড়ে না। ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের মেয়াদি জমায় এক বার টাকা রাখা হলে, তা থেকে মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্দিষ্ট আয় আসে। তবে একই প্রকল্পে পরে টাকা রাখলে একই আয় না-ও হতে পারে। মূল্যবৃদ্ধির হার, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি ইত্যাদি অনুযায়ী সময়ে সময়ে সুদ বদলায়। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদ পুনর্বিবেচিত হয় তিন মাস অন্তর। ভারত সরকারের পরিবর্তনশীল সেভিংস বন্ডে ছ’মাসে এক বার। সিংহভাগ ক্ষেত্রে টাকা রাখার পরে চিন্তার কিছু নেই। সুদ বেশি হলে বড় মেয়াদে টাকা রাখা ভাল। নিয়মিত নির্দিষ্ট আয় করতে হলে এবং ঝুঁকি এড়াতে চাইলে এই পথই উপযুক্ত।
অনিশ্চিত আয়ের প্রকল্পে ভবিষ্যতে কতটা টাকা মিলবে জানা থাকে না। ক্ষতি হতে পারে, আবার বিপুল লাভও। কম সময়ে বেশি আয় করতে চাইলে এবং ঝুঁকি বইবার ক্ষমতা থাকলে বাজার নির্ভর এই সব প্রকল্প লগ্নির উপযুক্ত। উঁচু করের আওতাভুক্তরাও এই দলে শামিল। স্থির আয় প্রকল্পে সুদ কমে আসায় এগুলিতে ভিড় বাড়ছে। এই ক্ষেত্রে লগ্নিকারীদের বাজারে প্রতিনিয়ত নজর রাখতে হয়। শেয়ার বাজার খুব সংবেদনশীল। দেশে-বিদেশে ছোট এবং বড়, প্রায় সব ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে। আবার শেয়ারের ওঠানামার প্রভাব পড়ে মিউচুয়াল ফান্ডে। তাই প্রভাব ফেলতে পারে, এমন সমস্ত ঘটনায় নিয়মিত চোখ রাখতে হয় লগ্নিকারীদের। খবর অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তা কার্যকর করতে হয় চটজলদি।
বিনিয়োগের বাজারে সাফল্য পেতে জরুরি খবরগুলি হল—
- মূল্যবৃদ্ধির হার— খুচরো এবং পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হার প্রতি মাসের ১২-১৪ তারিখ নাগাদ জানা যায়। জিনিসের দাম বাড়তে থাকলে সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কা, কমলে উল্টোটা। অক্টোবরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি নেমেছে তলানিতে (০.২৫%)।
- রেপো রেট— পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা তুলতে থাকলে আরবিআই রেপো রেট (যে সুদে তারা ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) বাড়িয়ে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। রেপো বাড়লে বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন ঋণে সুদ বাড়ে। তা বাড়ে আমানতেও। উল্টোটা হয় মূল্যবৃদ্ধি বা দাম কমলে। এখন যেমন হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমেছে রেপো। আর্থিক বৃদ্ধিকে ঠেলে তুলতে সুদ আরও কমানো হতে পারে। এতে শেয়ার বাজার খুশি হয়। তবে আয় কমে সুদ নির্ভর মানুষের। সুদ বাড়লে বন্ডের দাম কমে, ইল্ড অর্থাৎ প্রকৃত আয় বাড়ে।
- বর্ষা— ভাল বৃষ্টি হলে ফসল ফলে বেশি। খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়।
- সংস্থার ত্রৈমাসিক ফল— সংস্থার আর্থিক ফল ভাল মানে, অর্থনীতি ভাল আছে। ব্যবসায় লাভ হচ্ছে। লগ্নির সম্ভাবনা। কর্মী নিয়োগ বাড়তে পারে। চাহিদায় ঘাটতি কম বা নেই।
- নির্বাচন— বিভিন্ন রাজ্য এবং দেশে নির্বাচনী ফলের ছাপ পড়ে বাজারে। যে দলই হোক, কেন্দ্রের সরকারে থাকা দলের ভাল ফল চায় তারা।
- ভূ-রাজনৈতিক ছবি— বিশ্বের নানা অঞ্চলে যুদ্ধ এবং অশান্তি ধাক্কা দেয় শেয়ার-সহ বাজার সংযুক্ত লগ্নিতে।
- মোট জাতীয় উৎপাদন— এর হার বৃদ্ধি মানে অর্থনীতির অগ্রগতি। লগ্নিকারী সেটাই চায়।
- কর ব্যবস্থা— নজর রাখতে হয় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ করের ওঠানামার উপরেও। কর সংস্কারকে বাজার সুনজরে দেখে।
- বিদেশি লগ্নি— টানা বিদেশি লগ্নি সূচককে শক্তি জোগায়।
নজর রাখা উচিত আমদানি-রফতানি, টাকার দাম, তেলের দর, বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার, আমেরিকা-সহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক, অন্য দেশের সূচক ইত্যাদিতে।মোদ্দা কথা, চোখ কান খোলা রাখাই লগ্নিতে সাফল্যের সোপান।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)