পর পর দু’টি দাওয়াই। তবু চনমনে হল না বাজার। বান এল না লগ্নিতে।
মাসের প্রথম দিনে অভাবনীয় বাজেট। মধ্যবিত্তের হাতে এক লক্ষ কোটি টাকা বাড়তি পুঁজির ব্যবস্থা। পরের সপ্তাহে ঋণে সুদ ছাঁটাই। শিল্পের সঙ্গে ফের মধ্যবিত্তদের একাংশের ঋণে সুদের খরচ কমানো। আশা ছিল, এত বাড়তি নগদে চাহিদায় জোয়ার আসবে ভেবে শেয়ার বাজার উচ্ছ্বাসে ভাসবে। কিন্তু আদতে দু’টি দাওয়াই-ই একক কিংবা যৌথ প্রয়াসে ঝিমিয়ে পড়া বাজারকে ঠেলে তুলতে ব্যর্থ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাই দুনিয়াভর এমন উদ্বেগের বাতাবরণ তৈরি করেছেন যে, তা কাটিয়ে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হতে পারছে না। ট্রাম্পের মন পেতে বাজেটে দামি গাড়ি, মোটরবাইক-সহ বহু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে শান্তি এবং নতুন ব্যবসার খোঁজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার আমেরিকা যাচ্ছেন। ওই দিনই জানা যাবে জানুয়ারির মূল্যবৃদ্ধি এবং ডিসেম্বরের শিল্পবৃদ্ধির হার।
গত সেপ্টেম্বরে সেনসেক্স সর্বোচ্চ (৮৬ হাজারের কাছে) হওয়ার পরে বড় সংশোধনের দরকার ছিল। অক্টোবর থেকে অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়তেই তা আসতে শুরু করে। সেই সংশোধন এখনও চলছে। ফলে অনেক ভাল শেয়ারের দাম কমায় সেগুলি কেনার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বহু ফান্ডের ন্যাভও কমেছে। ভাল শেয়ার ও ফান্ডে পুঁজি ঢালতে পারেন লগ্নিকারী। আশা, কর ও সুদ কমায় অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরলে বাজারও ঘুরে দাঁড়াবে।
বাজেট প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা চলছে জোরকদমে। কার হাতে বাড়তি কত টাকা আসবে, সেই টাকায় কী করা হবে— এ সব নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। যাঁরা ঋণ শোধের মাসিক কিস্তির (ইএমআই) বোঝা বইছেন, তাঁদের কিছুটা সুরাহা হবে। করমুক্ত আয়ের সীমা ১২ লাখ হওয়ায় যে বিপুল করদাতা করের জাল থেকে বেরিয়ে গেলেন, তাঁদের অনেকে অস্থির ও ঝুঁকির বাজার থেকে সরে স্থির আয়ের প্রকল্পে ঝুঁকবেন। বিশেষত এখানে পুরো আয়ই যেহেতু পকেটে ঢুকবে। করের বালাই থাকবে না।
তবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোয় আমানতেও কিছুটা সুদ কমতে পারে। অন্য দিকে ৩০% করের আওতায় থাকলে ৭%-৭.৫% স্থির আয়ের আকর্ষণ থাকবে না। কারণ কর বসার পরে সেগুলির প্রকৃত আয় দাঁড়াবে ৫ শতাংশের আশপাশে। দেখা যাচ্ছে, বছরে আয় ১২ লক্ষ টাকা হলে কর বাবদ সাশ্রয় হবে ৮০,০০০ টাকা। ১.১০ লক্ষ আয়কর কমবে ২৪ লক্ষ টাকা রোজগেরেদের। এর সঙ্গে চাকুরে এবং পেনশনভোগী, সকলের ক্ষেত্রেই ৭৫,০০০ টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন এবং দেয় করের উপর ৪% স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেস ধরলে সাশ্রয় আরও বাড়বে। অনেকেরই মাসিক সাশ্রয় হবে ৫০০০-১০,০০০ টাকা। এই বাড়তি পুঁজি স্বস্তির। তা দিয়ে লগ্নি করা যায়, বেড়ানোয় খরচ করা যায় বা ধার শোধের মাসিক কিস্তির (ইএমআই) ভিত্তিতে গাড়ি, বাইক, এমনকি ফ্ল্যাটের মতো সম্পদ কেনার পরিকল্পনাও করা যায়। সরকার যে ১ লক্ষ কোটি টাকার আয় ছেড়ে দিচ্ছে, তার বড় অংশে কেনাকাটা হলে শিল্প উপকৃত হবে।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির দিল্লি জয় বাজারের পালে হাওয়া জোগাতে পারে। ট্রাম্প-মোদীর আলোচনায় শুল্ক নিয়ে সুরাহা হলে, তা-ও শক্তি দিতে পারে দুই সূচককে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)