সোনার দাম লক্ষাধিক। রুপো ছুটছে দু’লক্ষ টাকার দিকে। ফলে আসন্ন ধনতেরসের বিক্রিবাটা নিয়ে সংশয় দানা বেঁধেছিল। তবে বৃহস্পতিবার বেশির ভাগ গয়না ব্যবসায়ীর মুখে শোনা গেল আকাশছোঁয়ার দামের আবহে বিত্তবানদের পাশাপাশি সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষদেরও বদলে যাওয়া লক্ষ্যের কথা। যেখানে সোনা আর শুধু সাজগোজের বস্তু নয়। বরং লগ্নির এক অপরিহার্য মাধ্যম। বিশেষজ্ঞদেরও দাবি, মধ্যবিত্তদের বড় অংশ এখন শুধু বিনিয়োগের তাগিদেই পা রাখছেন গয়নার বাজারে। চড়া রিটার্নের আশায় কষ্ট করে কেনাকাটা করছেন, কেউ কেউ এমনকি ধার নিয়েও। আর বদলে যাওয়া এই লক্ষ্যই চাঙ্গা রাখছে ধনতেরসের বাজারকে। সূত্রের দাবি, পাড়ার একেবারে ছোটখাটো দোকানগুলির হাল তেমন ভাল না হলেও, বড় এবং মাঝারিগুলিতে ভিড় জমতে শুরু করেছে। আগামী শনি ও রবিবার ধনতেরসের দু’দিনে বিক্রি আরও বাড়বে বলেই আশা।
গিনি এম্পোরিয়ামের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সমর দে বলেন, ‘‘অতীতে সোনার দাম চড়লে বহু ক্রেতা ফের তার নেমে আসার অপেক্ষায় বসে থাকতেন। এখন সকলে ধরে নেন দাম আরও বাড়বে। সেই হিসেব-নিকেশ করেই কিনতে হাজির হন।’’ পরিসংখ্যানে প্রকাশ, গত এক বছরে প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট খুচরো পাকা সোনার দাম বেড়েছে ৫২ হাজার টাকা। বিশ্ব জুড়ে অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা বহাল থাকায় তা আরও চড়ার আশঙ্কা। তাই গয়না কেনাও দ্রুত বাড়ছে। ধনতেরসের দিনে যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, ওই দিন সোনা বা রুপোর মতো দামি কিছু কেনা সৌভাগ্য বয়ে আনে বলে বিশ্বাস করেন অনেকে।
রাখালচন্দ্র দে জুয়েলার্সের কর্তা নবীন চন্দ্রের দাবি, ‘‘সকলে ভেবেছিলেন, একান্ত প্রয়োজন না পড়লে এত দামে কেউ গয়না কিনতে আসবেন না। কিন্তু বাস্তবে কেনার ঝোঁক বাড়ছে। কারণ— এক, গয়না কিনলে ব্যবহার করার সুযোগ থাকছে। দুই, প্রয়োজনে তা বিক্রি করে কেনা দামের থেকেও বেশি টাকা হাতে পাচ্ছেন ক্রেতা।’’ নবীন জানান, গাড়ি-সহ ব্যবহারের জন্য সমস্ত পণ্যের দামই পুরনো হলে কমে। একমাত্র গয়না পুরনো হলে বাড়ে।
অঞ্জলি জুয়েলার্সের ডিরেক্টর অনর্ঘ উত্তীয় চৌধুরীও বলেন, ‘‘বর্তমানে লগ্নির অন্য বিকল্পগুলির তুলনায় সোনায় মুনাফা বেশি হচ্ছে। তাই হাল্কার পাশাপাশি বেশি সোনার ভারি গয়নার চাহিদাও বেড়েছে। ধনতেরসের দিন কিনবেন বলে অনেকে গয়নার খোঁজ করতে দোকানে আসছেন। ক্রেতা টানতে বাজারে আসছে নানা প্রকল্প।’’
অনেকে ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়েও গয়না কিনছেন। যেমন, মেদিনীপুরের শঙ্কর মাইতি। তিনি জানান, ব্যাঙ্কে টাকা রেখে দ্বিগুণ করতে বছর দশেকের বেশি লাগে। সোনার দাম দ্বিগুণ হয়েছে বছর দুয়েকের মধ্যে। তাই ধার করে গয়না কিনেছেন লগ্নির জন্য। পরিসংখ্যানও বলছে, ব্যাঙ্কে ৭% বার্ষিক সুদে টাকা দ্বিগুণ হতে সময় লাগে ১৪ বছরের বেশি। অথচ সোনার লেগেছে ১৮ মাস। ২০২৪-এর ২ মার্চ খুচরো ছিল ৬৪,২৫০ টাকা। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,২৮,৪৫০ টাকা। সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের এমডি শুভঙ্কর সেন মনে করেন, সাধারণ ব্যাঙ্ক ঋণে সুদ চড়া। এই জন্য প্রতিটি ব্যাঙ্কে কম সুদে স্বর্ণঋণের সুবিধা চালু হওয়া দরকার। তাতে আমজনতার একটু সুবিধা হবে। স্বর্ণশিল্পও বাঁচবে।
বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির চেয়ারম্যান টগর পোদ্দার জানান, একাংশ রুপোতেও লগ্নি করছেন হাত খুলে। এক বছরে যা বেড়েছে ৮৫,৪৫০ টাকা। ধনতেরসে সোনা ছাড়াও রুপোর গয়না ও বাসনের চাহিদা বাড়বে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)