Advertisement
০৭ মে ২০২৪

পরিকাঠামোর অভাব আর চড়া দামেই হোঁচট স্পেকট্রাম নিলামে

নিলামে বাঁধা ন্যূনতম দর ছিল আকাশছোঁয়া। মনে করা হচ্ছিল, শুধু ৭০০ মেগাহার্ৎজ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম থেকেই কেন্দ্রের কোষাগারে আসবে অন্তত ৪ লক্ষ কোটি টাকা। অথচ ওই স্পেকট্রামের জন্য এখনও তৈরি নয় পরিকাঠামো। অধিকাংশের পকেটের নাগালে নয় তাতে দেওয়া পরিষেবা ব্যবহারের হ্যান্ডসেটের দামও।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৫৩
Share: Save:

নিলামে বাঁধা ন্যূনতম দর ছিল আকাশছোঁয়া। মনে করা হচ্ছিল, শুধু ৭০০ মেগাহার্ৎজ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম থেকেই কেন্দ্রের কোষাগারে আসবে অন্তত ৪ লক্ষ কোটি টাকা। অথচ ওই স্পেকট্রামের জন্য এখনও তৈরি নয় পরিকাঠামো। অধিকাংশের পকেটের নাগালে নয় তাতে দেওয়া পরিষেবা ব্যবহারের হ্যান্ডসেটের দামও। ফলে ৭০০ মেগাহার্ৎজের স্পেকট্রামের জন্য দরই হাঁকেনি কেউ। দরপত্র জমা পড়েনি ৯০০ মেগাহার্ৎজের জন্যও। বাকি যে স্পেকট্রাম ‘ক্রেতা’ পেয়েছে, সেখানেও ন্যূনতম দরের থেকে বেশি উপরে ওঠেনি চূড়ান্ত দাম। আর এই সব কারণেই স্পেকট্রাম নিলামে কেন্দ্রের আয় ৬৫,৭৮৯ কোটি টাকায় থমকেছে। যেখানে মনে করা হয়েছিল, অন্তত ৫.৬ লক্ষ কোটি আসবে কোষাগারে।

বৃহস্পতিবার নিলাম শেষে দেখা গিয়েছিল, বিক্রি হয়েছে ২,৩৫৪.৫৫ মেগাহার্ৎজ স্পেকট্রামের মাত্র ৪০%। তুলনায় কম ন্যূনতম দরের ১৮০০, ২১০০, ২৩০০ ও ২৫০০ মেগাহার্ৎজের স্পেকট্রামও বিক্রি হয়েছে ৬৫%-৭০%। টেলি সংস্থাগুলির মতে, সেখানেও ন্যূনতম দর বেশি ঠেকেছে তাদের। তাই নিলাম শেষে তাদের হাঁকা দাম তার থেকে খুব বেশি ওঠেনি। অর্থাৎ, ন্যূনতম দর ১০ টাকা হলে, চূড়ান্ত দাম হয়তো উঠেছে ১১ টাকা। আগের কয়েক বারের নিলামে কিন্তু এই ফারাক ছিল অনেক বেশি। কেন্দ্রের ঘরে এ বার প্রত্যাশিত টাকা না-যাওয়ার এটিও কারণ।

তা ছাড়া, টেলিকম শিল্প সূত্রে খবর, চড়া দর এবং ঘাড়ে বিপুল ঋণ চেপে থাকায় সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যার যতটুকু বাড়ানো দরকার, ঠিক ততটুকু স্পেকট্রামই কিনেছে সেই সংস্থা। মুম্বই ও রাজস্থান ছাড়া অন্য সার্কেলে ন্যূনতম দরের চেয়ে সংস্থাগুলির দেওয়া দামও খুব বেশি ওঠেনি। মুম্বইয়ের মতো জায়গায় কড়া প্রতিযোগিতায় যুঝতে ঝাঁপিয়েছিল সংস্থাগুলি। কিন্তু বাকি জায়গায় মূলত জিও-র সঙ্গে টক্কর দিতে ৩জি ও ৪জি স্পেকট্রাম কেনার উপরেই গুরুত্ব দিয়েছে অন্য সংস্থাগুলি।

৭০০ মেগাহার্ৎজের স্পেকট্রামে প্রধানত নজর দেওয়া হয়েছিল। অথচ তা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন ছিল টেলিকম শিল্পের। কারণ, শুরুতে ৪জি-র মতো এই ব্যান্ডের মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়ার উপযুক্ত ফোন, যন্ত্রপাতি-সহ পরিবেশ এখনও তেমন নেই। এই শিল্পে যুক্ত অনেকের মতে, বছর ছয়েক আগে ২,৩০০ মেগাহার্ৎজ স্পেকট্রাম বিক্রির সময়েও তা দিয়ে ‘এলটিই’ বা ৪জি পরিষেবা দেওয়ার ফোন বা যন্ত্রপাতি ছিল না। কিন্তু তা ব্রডব্যান্ড পরিষেবার উপযুক্ত হওয়ায় ধীরে ধীরে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হতে অসুবিধা হয়নি।

তাঁদের মতে, হয়তো ভবিষ্যতের কথা ভেবে টেলি শিল্পের একাংশ ৭০০ মেগাহার্ৎজ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম কিনত। কিন্তু নিলামে অন্তত ৫ মেগাহার্ৎজ কেনা বাধ্যতামূলক ছিল। তাতে খরচ অন্তত ৫৫ হাজার কোটি। টেলিকম শিল্পের সংগঠন সিওএআইয়ের ডিজি রাজন এস ম্যাথুজের প্রশ্ন, ৩.৮ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ (নিলামের পরে ৪.২৫ লক্ষ কোটি) ঘাড়ে চেপে থাকা শিল্পের পক্ষে এত টাকা ঢালা সম্ভব কি? যেখানে তাদের মোট ব্যবসাই ঋণের থেকে কম? এই শিল্পের এক প্রাক্তন কর্তারও প্রশ্ন, ‘‘এত ধার থাকলে কে টাকা ঋণ দেবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

spectrum auctions Infrastructure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE