মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।
করোনা সংক্রমণ গত বছরে আচমকা স্তব্ধ করে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। সেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝাঁপ বন্ধ থাকা অবস্থাতেও ন্যূনতম দৈনন্দিন জীবন সচল রাখতে মূল ভরসা ছিল ডিজিটাল প্রযুক্তি। এ বার নতুন স্ট্রেনের সংক্রমণ ঘিরে ফের সংশয়ের যে মেঘ ঘনাচ্ছে, তা সামলে এগোতে ইনফোকমের উদ্বোধনী মঞ্চে আরও বেশি ও দ্রুত ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসায়িক কৌশল স্থির করায় জোর দিলেন প্রযুক্তি ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ডিজিটাল প্রযুক্তি এখনকার ‘নিউ নর্মাল’-এ যে কোনও ব্যবসার মেরুদণ্ড। ছোট-বড়, কোনও সংস্থার পক্ষেই তা উপেক্ষা করা সহজ নয়। তাই আরও দ্রুত ডিজিটাল প্রযুক্তির পরিকাঠামো জোরদার করতে সে ক্ষেত্রে লগ্নি করতে হবে সকলকে।
গত বছর অতিমারির প্রথম ধাক্কার পরে স্বাভাবিক পরিস্থিতির সংজ্ঞাই কার্যত বদলে গিয়েছিল। তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে পরের ধাপে পা রাখার কৌশল স্থির করার কথা ছিল গত ইনফোকমের প্রতিপাদ্য। যার ভিত ছিল ডিজিটাল প্রযুক্তি। এ বার প্রযুক্তির ব্যবহারে গতি আনার দিশা পাওয়াই মূল লক্ষ্য এই মঞ্চের। তাই এ বছরের থিম ‘অ্যাকসেলারেটিং ডিজিটাল’।
বুধবার এই ‘ভার্চুয়াল’ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনার আগে এবং পরের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে শুরুতেই সুর বেঁধে দেন এবিপি গোষ্ঠীর সিইও ধ্রুব মুখোপাধ্যায়। জানান, তথ্যপ্রযুক্তি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য থাকলেও পরে ব্যবসা, প্রযুক্তি ও নেতৃত্ব, সব পক্ষকে এক জায়গায় আনার মঞ্চ গড়াই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য। রাজ্যও কী ভাবে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে লগ্নির পরিবেশ গড়ে তুলছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে আরও লগ্নির আহ্বান জানান মমতা।
অনুষ্ঠানে অ্যাকসেঞ্চারের চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার ভাস্কর ঘোষের মতে, ডিজিটাল প্রযুক্তি এখন যে কোনও শিল্প বা ব্যবসার মেরুদণ্ড। ডেল টেকনোলজিসের সিনিয়র ডিরেক্টর (সেলস) কমল অরোরার বক্তব্য, অতিমারির আগে ডিজিটালে নির্ভরতা বাড়ছিল ঠিকই। কিন্তু যে পথ পেরোতে হয়তো আরও ক’বছর লাগত, করোনা ধাক্কায় ক’মাসেই তার অনেকটা সম্ভব হয়েছে। এক সমীক্ষা বলছে, ২০২৩ সালের মধ্যে ৯০% সংস্থাই ডিজিটালে লগ্নিকে অগ্রাধিকার দেবে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রযুক্তি আর পছন্দের বিষয় নয়। ব্যবসায়িক কৌশলের মূল ভিত্তি।’’
আর ঠিক এই কারণেই নতুন উদ্যোগ (স্টার্ট-আপ) এবং প্রতিষ্ঠিত সংস্থা, সকলকে ‘ডিজিটাল’ কৌশল স্থির করার পরামর্শ দিয়েছেন ভাস্কর। বলেছেন, যে কোনও জায়গা থেকে কাজের সুযোগের ব্যবস্থা গড়ার কথাও। আর কমল মনে করিয়েছেন, ক্রেতারাও এখন ডিজিটালে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। তাই সংস্থা, কর্মী ও ক্রেতার মধ্যে সংযোগ নিবিড় করতে সঠিক প্রযুক্তিতে লগ্নি করা জরুরি।
বরাবরই নতুন ভাবনাকে উস্কে দেওয়া লক্ষ্য ইনফোকমের। সেই প্রেক্ষিতে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক অব ইন্ডিয়ার ডিজি ওমকার রাই জানান, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহ দিতে ২২টি কেন্দ্র চালু করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘ইউনিকর্ন’ (যে সংস্থার সম্পদ মূল্য ১০০ কোটি ডলারের বেশি) স্টার্ট-আপের সংখ্যা এ বছরেই বেড়েছে ২৬টি। আবার করোনাকালে সংযোগের মূল ভরসা ছিল টেলি পরিষেবা। ডিজিটাল লেনদেনেও যা গুরুত্বপূর্ণ। সেই পরিকাঠামোয় আরও বেশি লগ্নি করে প্রযুক্তির অগ্রগতির পথে সঙ্গী হওয়ার কথা বলেছেন এয়ারটেলের সিইও (পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা) সিদ্ধার্থ শর্মা।
২০০২ সালে ইনফোকম শুরুর বছর ছিল ঘটনাবহুল, এ দিন সে কথা মনে করিয়ে দেন ধ্রুব। যার অন্যতম ছিল সে বছরে পাওয়া সার্স ভাইরাসের খোঁজ। আর ইনফোকম যখন ২০ বছরে পা রাখছে, সে সময়েই বিশ্ব ফের নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। তাই এই মোড়ে পৌঁছে ভবিষ্যতে এগোনোর কিছু দিশা মিলবে আগামী তিন দিন, আশায় সংশ্লিষ্ট মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy