অবাধ পতন।
গত পাঁচ দিন ধরেই পড়ছে টাকা। বৃহস্পতিবার নজির গড়ে তা নতুন তলানিতে। ভারতীয় টাকা তার ইতিহাসে ডলারের তুলনায় কখনওই এত নীচে নামেনি। এ দিন দুপুরের দিকে এক ধাক্কায় ৩০ পয়সা পড়ে যায় টাকা। প্রতি ডলারে তা নামে ৬৮.৮৬-তে। এর আগে ২০১৩-র ২৮ অগস্ট অশোধিত তেলের চড়া দাম ও বিদেশি মুদ্রা জোগানে ঘাটতির জেরে টাকার দাম নেমেছিল ৬৮.৮৫-তে। দিনের শেষে তা সামান্য বাড়লেও সে দিন টাকা পড়েছিল ২৫৬ পয়সা। তার পরে আর এত নীচে নামেনি টাকা। মার্চের মধ্যেই প্রতি ডলারে তা ৭০-এ নামতে পারে বলেও আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
পতনের জন্য বাজার বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা যে-সব কারণকে মূলত চিহ্নিত করেছেন, সেগুলি হল:
• ভারতে নোট-কাণ্ডের জের
• আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়
• মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বাড়ানোর সম্ভাবনা
• বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার ভারতে শেয়ার বিক্রি
• ডলারের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কায় ভারতের রফতানিকারীদের ডলার কিনে রাখা, যা ওই মুদ্রার দাম আরও বাড়ায় ইন্ধন জোগাচ্ছে
• শেয়ার বাজারের পতন
বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধের সময়ে অবশ্য মূলত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপে কিছুটা বাড়ে টাকা। প্রতি ডলার দাঁড়ায় ৬৮.৭৩ টাকায়, যা বুধবারের তুলনায় ১৭ পয়সা কম। লেনদেনকারীদের সূত্রে খবর, এ দিন বাজারে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে আরবিআ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম পড়েছে ২.৯২%। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতে বড় অঙ্কের নোট বাতিলকে ঘিরে আশঙ্কা। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অবশ্য দাবি, তারা টাকার দামের উপর নজর রাখছে। তবে এখনই টাকার দামের পতন রুখতে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্র। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ডলারের দাম ৬৯ ছুঁলে তবেই কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে।
বিদেশি মু্দ্রার বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প যে-সব নীতি গ্রহণ করতে চলেছেন, তার আঁচ পাওয়ায় বিশ্ব জুড়েই হু হু করে বাড়ছে ডলারের দাম। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আর্থিক নীতির জেরে ওই দেশে মূল্যবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পাশাপাশি ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্রমশই উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এই ইঙ্গিতে ভর করেই আমেরিকায় বাড়ছে বন্ড থেকে আয় (ইল্ড)। এই পরিস্থিতিতে ডলারে লগ্নির আগ্রহ বেড়েছে প্রায় বিশ্ব জুড়েই। যা আখেরে বাড়াচ্ছে তার মূল্য।
এ দিন পড়েছে শেয়ার বাজারও। সেনসেক্স নেমেছে ১৯১.৬৪ পয়েন্ট। দাঁড়িয়েছে ২৫,৮৬০.১৭ অঙ্কে। নিফ্টি ৬৭.৮০ পয়েন্ট পড়ে ফের নামে ৭ হাজারের ঘরে। থামে ৭৯৬৫.৫০ অঙ্কে।
এ দিন শেয়ার বাজারের পতনে ইন্ধন জুগিয়েছে একাধিক কারণ।
১) আমেরিকায় সুদ বাড়ার সম্ভাবনায় বিদেশি লগ্নিকারীদের শেয়ার বিক্রি। গত দু’দিনের লেনদেনেই তারা ভারতে ৩০৩২ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। শুধু এ দিনই তাদের বিক্রির পরিমাণ ২০১০ কোটি টাকা।
২) আগের দু’দিন বাজার ওঠার পরে এ দিন মুনাফা তুলে নিতে শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন লগ্নিকারীরা।
৩) এ দিনই ছিল আগাম লেনদেনে নভেম্বরের সেট্লমেন্টের দিন। অনিশ্চিত বাজারে শেয়ার বেচে মুনাফা তুলে নিয়ে হাত খালি করাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন লগ্নিকারীদের মধ্যে অনেকেই।
৪) ট্রাম্প আউটসোর্সিং বন্ধ-সহ ভারতের অর্থনীতির পক্ষে ক্ষতিকারক বেশ কিছু নীতি গ্রহণ করতে পারে বলে যে ইঙ্গিত মিলেছে, তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে শেয়ার বাজারেও।
৫) ভারতে কেন্দ্রের বড় মূল্যের নোট বাতিল করার পদক্ষেপের পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে ক্রমশ দেশের মূলধনী বাজারে ঘনাচ্ছে অনিশ্চয়তা।
এই সব কারণে আগামী বেশ কয়েক দিন সূচক পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। নিফ্টির আরও ৪০০ ও সেনসেক্সের হাজারখানেক পয়েন্ট পড়াটা অস্বাভাবিক নয় বলে মন্তব্য অনেকেরই।
অবমূল্যায়ন চিনের। বিশ্ব বাজারে ডলারের দাম বাড়তে থাকায় চিনের শীর্ষ ব্যাঙ্ক তার মুদ্রা ইউয়ানের দাম কমিয়ে দিল। প্রতি ডলারে দাম নামানো হল ৬.৯-এর নীচে, যা বুধবারের তুলনায় ২৬ বেসিস পয়েন্ট কম। গত ৮ বছরে এত বেশি হারে অবমূল্যায়ন হয়নি বলে আমেরিকার বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় দফতর সূত্রের খবর। নির্দিষ্ট হারের তুলনায় ইউয়ানের ২ শতাংশের বেশি ওঠা-পড়ায় সায় দেয় না চিন।
পাঁচ দিনে মোট পতন ৯১ পয়সা
৩৯ মাসে সবচেয়ে নীচে টাকা | ওঠা/নামা পয়সায়
• দিনের এক সময়ে টাকার দাম ৩০ পয়সা নামায় এক ডলার ছোঁয় ৬৮.৮৬
• ২০১৩ সালের ২৮ অগস্ট ডলার বেড়ে ছুঁয়েছিল ৬৮.৮৫ টাকা
• কখনও টাকা এত নীচে নামেনি
• দিনের শেষে তা দাঁড়ায় ৬৮.৮০
• টাকার দাম পড়েছিল এক ধাক্কায় ২৫৬ পয়সা