ওয়াকিবহাল মহলের মতে, শহরের পাশাপাশি অর্থনীতিকে এখন বেগ দিতে শুরু করেছে গ্রাম ও মফস্সলে চাহিদা কমাও। সেই ধাক্কা এসে লেগেছে বিস্কুট শিল্পের উপরে।
১০০ ছুঁতে ১০ বছর বাকি থাকা সংস্থাতেই এখন ১০,০০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের রক্তচক্ষু!
২০০৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বিস্কুট ব্র্যান্ডের তকমা পেয়েছিল পার্লে। কিন্তু সম্প্রতি চাহিদায় ধাক্কায় তাদের ব্যবসাই পড়েছে জোর বিপাকে। শুরু হয়েছে উৎপাদন কমানোর ভাবনা। খোদ সংস্থার কর্তাই মানছেন, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র যদি হস্তক্ষেপ না করে তা হলে সমস্যা বাড়বে। হাত পড়তে পারে কাজেও। আর পার্লের এই সমস্যাকে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক ছবির খণ্ডচিত্র হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, পার্লে কর্তা যে দাবি করেছেন তা আদতে গোটা শিল্পেরই। চাহিদার টানে জর্জরিত শিল্প সম্প্রতি ১ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্প চেয়েছে কেন্দ্রের কাছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, শহরের পাশাপাশি অর্থনীতিকে এখন বেগ দিতে শুরু করেছে গ্রাম ও মফস্সলে চাহিদা কমাও। সেই ধাক্কা এসে লেগেছে বিস্কুট শিল্পের উপরে। তাদের বক্তব্য, সমস্যার সূত্রপাত জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে। যখন কম ও বেশি দামি সমস্ত বিস্কুটের উপরে এক হারে (১৮%) জিএসটি বসানো হয়। তার আগে কিন্তু ১০০ টাকা কেজির থেকে কম দামের বিস্কুটকে উৎপাদন শুল্কের বাইরে রাখা হয়েছিল। ফলে জিএসটি চালুর পরে বিস্কুটের খরচ বেড়ে গিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দাম এক রাখতে গিয়ে কমাতে হয়েছে ওজন তথা বিস্কুটের সংখ্যা। শিল্প সূত্রের খবর, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ছোট প্যাকেটের বিস্কুটের চাহিদা কমেছে ৭%-৮%।
সমস্যায় পার্লে
• চাহিদা কমায় ব্যবসা ধাক্কা খেয়েছে বিস্কুট সংস্থা পার্লের।
• ইঙ্গিত উৎপাদন কমানোর।
• কাজ যেতে পারে ৮,০০০-১০,০০০ কর্মীর। ৯০ বছরের সংস্থাটির কর্মী সংখ্যা এখন প্রায় ১ লক্ষ।
ব্যবসার হাল
• এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ২,৯৭৬টি সংস্থার (যারা ফল প্রকাশ করেছে) ব্যবসার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছে কেয়ার রেটিংস।
• সংস্থাগুলির নিট বিক্রি বৃদ্ধির হার ৪.৬%। এক বছর আগে ছিল ১৩.৫%।
• নিট মুনাফা বৃদ্ধি ৬.৬%। ছিল ২৪.৬%।
বৃদ্ধিতে প্রভাব
• জানুয়ারি-মার্চ বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৮%।
• চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও মূল্যায়ন সংস্থাগুলি।
বেসামাল অর্থনীতি
• টানা প্রায় এক বছর ধরে কমছে গাড়ির পাইকারি ও খুচরো বিক্রি।
• বন্ধ হয়েছে ৩০০ ডিলারশিপ। কাজ গিয়েছে আড়াই লক্ষ।
• যন্ত্রাংশ শিল্পে ১০ লক্ষ কাজ যাওয়ার আশঙ্কা।
• বিক্রি না হয়ে পড়ে রয়েছে বহু আবাসন।
• বিমান, টেলিকম-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পড়েছে প্রভাব।
• ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার।
• বড় ধাক্কা ভোগ্যপণ্য ক্ষেত্রেও।
পার্লে প্রোডাক্টসের কর্তা ময়াঙ্ক শাহের দাবি, ‘‘কী দামে কতটা পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, সে ব্যাপারে ভারতের ক্রেতারা যথেষ্ট সচেতন।’’ পার্লের অন্যতম প্রতিযোগী ব্রিটানিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বরুণ বেরিও সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘অর্থনীতি সত্যিই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যার জন্য এখন ৫ টাকা দামের পণ্য কেনার আগেও ভাবছেন ক্রেতারা।’’
মূল্যায়ন সংস্থা কেয়ার রেটিংসের একটি সমীক্ষায় ফুটে উঠেছে সামগ্রিক ভাবে দেশের ব্যবসায় ভাটার ছবি। আবার নোমুরার রিপোর্টে পূর্বাভাস, চাহিদায় টান, লগ্নি কমার পাশাপাশি পরিষেবা শিল্পও ধাক্কা খাওয়ায় প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার আরও নামতে পারে। হতে পারে ৫.৭%।
এ দিন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা এক টুইটে দু’টি চা ও বস্ত্রের দুই সংগঠনের দেওয়া বিজ্ঞাপনের ছবি তুলে ধরেছেন। যেখানে তারা ওই দুই শিল্পকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছে। প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, এত দিন শিল্প বিজ্ঞাপনে ব্যবসায় উন্নতির দাবি করত। কিন্তু সমস্যা তুলে ধরে আবেদন জানাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy