চালু হয়েছিল তিন বছর আগে। লক্ষ্য ছিল গ্রামাঞ্চলে মানুষের কাছে আর্থিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। অথচ উদ্যোগের অভাবেই থমকে ছিল পেট্রোল পাম্পের কিসান সেবা কেন্দ্রগুলি (কেএসকে) থেকে টাকা দেওয়ার প্রকল্পের গতি। অথচ দৃশ্যটা বদলে গিয়েছে নোট বাতিলের পর থেকে। পরিসংখ্যানে ইঙ্গিত, এখন সেই কেন্দ্রগুলিই কার্যত ‘অন্ধের যষ্টি’ হয়ে উঠেছে মানুষের কাছে। লাফিয়ে বাড়ছে পাম্পে টাকা তোলার অঙ্ক।
গত ৮ নভেম্বর পুরনো ৫০০ এবং ১,০০০ টাকা বাতিলের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তার পরে ১৮ নভেম্বর গ্রামীণ এলাকায় নগদের জোগান বাড়াতে কার্যত নতুন করে পাম্প থেকে টাকা দেওয়ার এই ব্যবস্থা চালুর কথা জানায় স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ও তেল সংস্থাগুলি। ঘোষণা করা হয় তোলা যাবে দিনে ২,০০০ টাকা। প্রতি লেনদেনের জন্য সংশ্লিষ্ট পাম্প পাবে ৫ টাকা।
তেল সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল সূত্রে খবর, গত ১-৫ অক্টোবর তাদের পাম্পগুলি থেকে ১.০৩ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছিল বলে জানিয়েছে এসবিআই। নোট বাতিলের পরে ১-৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা একলাফে বেড়ে হয়েছে ১.৩৪ কোটি। গ্রামীণ এলাকায় সংস্থার মোট পাম্পের সংখ্যা ৩১৮টি। এর মধ্যে ১৬৯টি-কে ইতিমধ্যেই পিওএস যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। আর ১২৩টি পাম্পে এই পরিষেবা চালু হয়েছে। বাকিগুলিতেও শীঘ্রই তা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সে ক্ষেত্রে আরও কিছুটা সুরাহা হবে বলে মনে করছে সংস্থা।
অন্য দিকে স্টেট ব্যাঙ্কও জানিয়েছে, অক্টোবরে চালু পাম্পগুলি থেকে মোট ২১৮ কোটি টাকা বণ্টন করা হয়েছিল। যা নভেম্বরে বেড়ে হয়েছে ৩২০ কোটি। ডিসেম্বরে তা আরও বেড়ে ৫৫০ কোটি টাকায় পৌঁছবে বলে তাদের আশা।
যেমন, হুগলির তারকেশ্বরের বাবা তারকনাথ সার্ভিস স্টেশনের মালিক অতীন কুমার সাহা বলেন, ‘‘এই ব্যবস্থায় স্থানীয় মানুষের উপকার হয়েছে। আমাদের পাম্প থেকে থেকে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরা দৈনিক গড়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকা তুলছেন। লেনদেন হচ্ছে গড়ে ৩০০-৩৫০টি।’’ রোজ স্টেট ব্যাঙ্কের থেকে ৫০ ও ১০০ টাকার নোট পাচ্ছেন বলেও তাঁর দাবি। ছোট মূল্যের নোট পাওয়ায় আমজনতারও সুবিধা হচ্ছে বলে জানান অতীনবাবু।
ওই ক’দিনে নদিয়ার ফুয়েল পার্ক কেএসকে ৫.০৯ লক্ষ টাকা, হুগলির বাবা তারকনাথ সার্ভিস স্টেশনের কেন্দ্র ১১.৬ লক্ষ এবং রাজারহাটের শ্রীকৃষ্ণ সার্ভিস সেন্টার ৮.২০ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের বণ্টন করেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে তেল সংস্থা ও ব্যাঙ্ক সূত্রের ইঙ্গিত, নোট বাতিলের জেরে নগদের অভাবে দুর্ভোগে পড়া মানুষকে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে এই ব্যবস্থা।