ভারতকে বিশ্বের উৎপাদন তালুক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক দশক আগে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প গ্রহণ করেছিল কেন্দ্র। গত শুক্রবার রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা জানতে চান, তাতে অর্থ ব্যবস্থায় উৎপাদন ক্ষেত্রের অবদান ঠিক কোন জায়গায় পৌঁছেছে। বিভিন্ন তথ্য পরিবেশনের পাশাপাশি কেন্দ্রের উত্তর, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে দেশে উৎপাদিত পণ্য ও পরিষেবার অবদান (জিভিএ বা গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড) ছিল ১৭.২%। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে তা হয়েছে ১৭.৫%। কংগ্রেসের ব্যাখ্যা, উৎপাদনের উন্নতিতে বিপুল বরাদ্দ এবং একাধিক নীতি সত্ত্বেও বিগত এক দশকে ওই ক্ষেত্রের অবদান বেড়েছে যৎসামান্য। এই নিয়ে মোদী সরকারের উদ্দেশে নতুন করে আক্রমণ শানিয়েছে তারা।
সুরজেওয়ালার প্রশ্ন ছিল, ‘‘এটা কি সত্যি যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ চালুর এক দশক পার হয়ে গেলেও জিডিপি-তে উৎপাদন ক্ষেত্রের অবদান উল্লেখযোগ্য কিছু বাড়েনি? এই অভিযোগ ঠিক হলে তার কারণ কী?’’ উত্তরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ জানিয়েছেন, বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনে উন্নতির লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ওই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল দেশে সেরা পরিকাঠামো তৈরি এবং ভারতকে উৎপাদন তালুক হিসেবে গড়ে তোলা। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময়ে উৎপাদন ক্ষেত্রের জিভিএ ছিল ১৫.৬ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২-২৪ সালে তা পৌঁছেছে ২৮.২৫ লক্ষ কোটিতে। সামগ্রিক জিভিএ-তে তার অনুপাত ১৭.২% থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭.৫%। এর পাশাপাশি, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে নেওয়া হয়েছে ‘ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং মিশন’। তার বরাদ্দ অঙ্ক ১০০ কোটি টাকা। তাতে ছোট সংস্থাগুলি উপকৃত হচ্ছে। ১৪টি শিল্প ক্ষেত্রের জন্য চালু হয়েছে উৎপাদন নির্ভর ভর্তুকি প্রকল্প (পিএলআই)। তাতে কেন্দ্র ১.৯৭ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করছে। এই প্রকল্পের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে ১২ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
এই উত্তরের প্রেক্ষিতে শনিবার এক্স-এ সুরজেওয়ালা লিখেছেন, এক দশক পার করেও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ আদতে স্লোগান হয়েই থেকে গিয়েছে। বিপুল খরচ, বিদেশ সফর, বাণিজ্য সম্মেলন, সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে উৎপাদন ক্ষেত্রের গুরুত্ব বাড়েনি। পিএলআই নিয়ে অনেক দাবি করা হলেও, ১০ বছরে শ্রমিকেরা কাজ পাননি, ছোট সংস্থা স্বস্তি পায়নি, উন্নতি হয়নি ব্যবসার পরিবেশের। প্রযুক্তি হস্তান্তরও উল্লেখযোগ্য কিছু নয়।
সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, ‘‘মোদীজি, দেশ বলছে, নাম বড় হলেওদর্শন ছোট।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)