Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Yes Bank

তোলা যাবে না ৫০ হাজারের বেশি, ইয়েস ব্যাঙ্কে টাকা তোলায় নিয়ন্ত্রণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের

নিজস্ব প্রতিবেদন 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০ ০৪:১৬
Share: Save:

সারা দিন ছড়াল স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর মাধ্যমে মূলধন ঢেলে তাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর জল্পনা। আর সন্ধ্যায় চাপল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একগুচ্ছ কড়াকড়ি। বৃহস্পতিবার দিনভর এমনই পালাবদল চলল বেসরকারি ইয়েস ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ ঘিরে। ইদানীং যাদের পুঁজির পরিস্থিতি বেশ টালমাটাল। আবার বেশি রাতে স্টক এক্সচেঞ্জকে স্টেট ব্যাঙ্ক জানাল, ইয়েস ব্যাঙ্কে পুঁজি ঢালার ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে তাদের পর্ষদ। সূত্রের খবর, কেন্দ্র চাইছে স্টেট ব্যাঙ্ক ও এলআইসি মিলে ইয়েস ব্যাঙ্কের মোট ৪৯% অংশীদারি হাতে নিক। সেই এলআইসি, যাদের কাঁধে এর আগে লোকসানে ডোবা আইডিবিআই ব্যাঙ্ককেও চাপানো হয়। ফলে প্রশ্ন ওঠে, সংস্থায় পলিসিহোল্ডারদের টাকার সুরক্ষা নিয়ে।

এ দিন সন্ধ্যায় এক নির্দেশিকা জারি করে ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে গ্রাহকদের টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা সাময়িক বেঁধেছে আরবিআই। জানিয়েছে, ৩ এপ্রিলের মধ্যে আমানতকারীরা ৫০,০০০ টাকার বেশি তুলতে পারবেন না। ড্রাফট বা পে-অর্ডারের ক্ষেত্রে অবশ্য এই ঊর্ধ্বসীমা কার্যকর হবে না। টাকা তোলা যাবে অসুস্থতা, পড়াশোনা বা বিয়ের জন্য। দেওয়া যাবে ২০,০০০ কর্মীর বেতনও। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কোনও ঋণ দিতে পারবে না ব্যাঙ্কটি। ইয়েস ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএফও প্রশান্ত কুমারকে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ব্যাঙ্কটির সম্পদের পুনর্গঠন করে আমানতকারীদের আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যেই কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।

কিন্তু কেন এই পদক্ষেপ?

গত দু’বছর ধরেই পরিচালন ব্যবস্থা এবং মূলধনের অবস্থা নিয়ে ইয়েস ব্যাঙ্ক নাকানিচোবানি খাচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করাচ্ছেন, বছর দু’য়েক আগে থেকেই ব্যাঙ্কে পরিচালনা ও ঋণ নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। এই অবস্থায় তৎকালীন সিইও রানা কপূরকে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। পরবর্তী সিইও রবনীত গিলের সময়ে ব্যাঙ্কটি বিপুল অঙ্কের অনাদায়ি ঋণের কথা জানায়। এমনকি, গত বছরই জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে প্রথম বার ক্ষতির মুখে পড়ে তারা। ডিসেম্বরে শেষ ত্রৈমাসিকে সংস্থার আর্থিক ফলাফল জানাতেও দেরি হয়েছিল তাদের। পুঁজি সংগ্রহের প্রক্রিয়াও ধাক্কা খাচ্ছিল বারবার।

বস্তুত, এ দিনের নির্দেশিকায় এই সমস্যাগুলির কথাই তুলে ধরেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। জানিয়েছে, গত ছ’মাসে ক্রমাগত চেষ্টা করেও পুঁজি জোগাড়ে ব্যর্থ হয়েছে ইয়েস ব্যাঙ্ক। সেই সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে তহবিল। ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্তের কথায়, ‘‘এখন ব্যাঙ্কটির যা আর্থিক অবস্থা, তাতে অন্য কোনও শক্তিশালী ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতে তাদের নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু অংশীদারি হাতে নেওয়ার আগে তারা ব্যাঙ্কটির মূল্যায়ন করে নেবে। আর ক্রমাগত তহবিল বেরিয়ে গেলে মূল্যায়ন ভাল হবে না। সে কারণেই সাময়িক কড়াকড়ি।’’ অনেকে আবার পিএমসি ব্যাঙ্কের ঘটনার সঙ্গে ইয়েস ব্যাঙ্কের পরিস্থিতির তুলনায় টানছেন।

এর আগে এ দিন সকালে খবর ছড়ায়, পুঁজি ঢেলে ইয়েস ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গোষ্ঠীকে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্র। শীঘ্রই হতে পারে ঘোষণা। এর পরেই ইয়েস ব্যাঙ্কের শেয়ার দর প্রায় ২৫% বাড়ে। যদিও স্টেট ব্যাঙ্ক ও ইয়েস ব্যাঙ্ক তখন খবরের সত্যতা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেনি। এ দিন মুম্বইয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের পর্ষদ বৈঠক ছিল। অনেক রাতে ব্যাঙ্কটি জানায়, ইয়েস ব্যাঙ্কে পুঁজি ঢালার ক্ষেত্রে সম্মতি দিয়েছে পর্ষদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Yes Bank SBI LIC RBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE