Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Plastic

পুনর্ব্যবহারই হল প্লাস্টিক দূষণের একমাত্র সমাধান

প্লাস্টিক যোদ্ধারা প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছেন সমাজে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে তার বদলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে আসার জন্য। সেই সঙ্গে চলছে পরিবেশ বদলের ছোট্ট প্রয়াসও।

বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:৫৯
Share: Save:

আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি, তার মধ্যে প্লাস্টিকের মতো বহুমুখী জিনিস খুব কমই আছে। আমাদের চারপাশে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে আছে প্লাস্টিক। আর এই ব্যপকভাবে বেড়ে যাওয়া প্লাস্টিকের অর্থই হল পরিবেশের ক্ষতি। অর্থাৎ এই পরিস্থিতিতে আমাদের আরও বেশ পরিমাণে প্লাস্টিকের নিষ্পত্তি করতে হবে। সতর্ক হতে আমাদের। সর্বোপরি প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার করা শুধুমাত্র প্রয়োজনীয়ই নয়, আবশ্যিকও বটে। আর সেই কারণেই আমাদের প্রত্যেকের এগিয়ে আসা বাঞ্ছনীয়।

এমন অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাঁরা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন এবং প্লাস্টিককে কী ভাবে নতুন করে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন। তাদের সমাধানগুলি হয়তো শুনতে সহজ, কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ যথেষ্ট কঠিন। তবুও এই প্লাস্টিক যোদ্ধারা প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছেন সমাজে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে তার বদলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে আসার জন্য। সেই সঙ্গে চলছে পরিবেশ বদলের ছোট্ট প্রয়াসও।

প্লাস্টিক দিয়ে বাঁধানো রাস্তা:

হ্যাঁ! আপনি ঠিকই পড়েছেন। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই ভারত প্রায় ১ লক্ষ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছে। প্লাস্টিকের বর্জ্য ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। এই কৌশলটি প্রথম আবিষ্কার করেন মাদুরাইয়ের থিয়াগরজার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপক শ্রী রাজাগোপালন বাসুদেবন। এর কিছুদিন পরেই সরকার থেকে রাস্তা নির্মাণকার্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এই উদ্যোগটি সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযানেরই একটি অংশ ছিল যা আদতে আবর্জনা সংকটের মোকাবিলাতেই সাহায্য করেছিল।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচলিত রাস্তাগুলির তুলনায় প্লাস্টিক ব্যবহার করে বানানো রাস্তাগুলি অনেক বেশি মজবুত। বন্যা কিংবা চরম উত্তাপের মতো কঠিন পরিবেশেও অনেক বেশি টেকসই।

প্লাস্টিক থেকে জ্বালানি:

মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারের অধ্যাপক সতীশ কুমারের প্রধান লক্ষ্যই ছিল এই মুহূর্তে পরিবেশের সব থেকে বড় সমস্যা - প্লাস্টিকের সমাধান করা। জীবানুবিয়োজ্য নয়, এমন ৫০ টন প্লাস্টিককে তিনি পেট্রলে রূপান্তরিত করেছেন। ছোট-খাটো উদ্যোগগুলির কাছে এই পেট্রল বিক্রি করেছেন মাত্র ৪০ টাকায়। যা বাজারচলতি পেট্রলের দামের প্রায় অর্ধেক।

যদিও এই পেট্রল এখনও পর্যন্ত গাড়িতে ব্যবহার করে দেখা হয়নি। বরং শিল্পস্থানগুলির মেশিন চালাতে এই পেট্রল ব্যবহার করা হয়। যদিও এই সাফল্য অনেকটাই। কুমারের মতে পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) এবং পলিথিলিন টেরেফথ্যালেট (পেট) বাদে অন্যান্য সমস্ত ধরণের প্লাস্টিক থেকে পেট্রল তৈরি করা সম্ভব।

প্লাস্টিক থেকে তৈরি আসবাব, ব্যাগ, খেলনা:

২০১৩ সালে দিল্লির দীনেশ পারেখ এবং শচীন শর্মা, প্লাস্টিক দিয়ে কী ভাবে উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করা যায় তা নিয়ে একটি ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই সহজ উদ্যোগটি পরিবেশ থেকে শুধুমাত্র ১.৪ লক্ষ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইডর নিঃসরণই আটকে দেয়নি, বরং বর্জ্য বাছাইকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে উপার্জনে সহায়তা করেছে। যদিও গোটা প্রক্রিয়াটি খুব একটা সহজ ছিল না। প্রথমে প্লাস্টিক সংগ্রহ, তার পরে সেটিকে ফাইবারে রূপান্তরিত করে টেকসই পণ্য বানানো, বড় কর্পোরেটদেরকে নথিভূক্ত করা, ব্যবহৃত প্লাস্টিককে আলাদা করা এবং সর্বোপরি বর্জ্য বাছাইকারীদের একটা ছাতার তলায় নিয়ে আসা — গোটা বিষয়টি ছিল অত্যন্ত কঠিন। এর পর থেকে যখনই আপনি জেইএম এর 'বিং রেসপন্সিবল' অভিযানের আওতায় থাকা কোনও পণ্য কিনবেন, তখন মাথায় রাখবেন আপনিও পৃথিবীর ফুসফুস বাঁচাতে কিছুটা অবদান রেখেছেন।

জেইএম প্রতিনিয়ত উদ্ভাবনী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ফেলে দেওয়া বোতল সংগ্রহের জন্য এরা 'রিভার্স ভেন্ডিং মেশিন'ও তৈরি করেছে। এই মুহূর্তে ১৫টি রাজ্যে মোট ৫০টি সংগ্রহ কেন্দ্র রয়েছে। এই সংস্থাটি এখনও পর্যন্ত এক লক্ষ টনেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

প্লাস্টিক আদিবাসীদের জীবনকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করেছে:

প্রায় ৫ বছর আগে প্রযুক্তিবিদ অমিতা দেশপান্ডে এবং নন্দন ভাট তাদের বিলাসবহুল চাকরি ছেড়ে আরোহন ইকোসোশ্যালের শুরু করেন যার মূল লক্ষ্যই ছিল গ্রামীণ মহিলাদের দিয়ে প্লাস্টিকের ফাইল, কভার, ঘর সাজানোর সামগ্রী, যোগাসনের ম্যাট ইত্যাদি তৈরি করানো। একটি আরোহনা বিচ ব্যাগ বানাতে প্রায় ৫০টি ছোট প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগের প্রয়োজন হয়। প্রতিষ্ঠাতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ থেকে এখনও পর্যন্ত সাড়ে সাত লক্ষেরও বেশি প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করতে পেরেছেন তারা। তাদের পরিবকল্পনা রয়েছে এখন মহারাষ্ট্রের অন্যান্য গ্রামীন এলাকায় পৌঁছানোর। যেখানে তারা এই ধরনের কাজে শিক্ষাপ্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে কর্মসংস্থান বাড়িয়ে তুলতে পারবেন।

‘বোটল ফর চেঞ্জ’:

ব্যবহৃত প্লাস্টিককে বর্জ্য নয়, সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করচে হবে। এই লক্ষ্য নিয়েই গত বছর মুম্বই এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় 'বোতল ফর চেঞ্জ'- নামে একটি উদ্যোগ নিয়েছিল বিসলারি। মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে, বিভিন্ন আবাসন, কলেজ, অফিসের ১৫ লক্ষেরও বেশি মানুষকে নিয়ে ২০০টি সচেতনতা প্রোগ্রাম এবং ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছে বিসলারি। এই বিষয়টি অন্যান্য ভারতের অন্যান্য শহরেও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিসলারির এই প্রোগ্রামের আওতায় ইতিমধ্যেই ৪৮০০ টনেরও বেশি প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে এবং শহরের বর্জ্য বাছাইকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে জোট বেঁধে ফাইবার, উইন্ডো ব্লাইন্ডস, হাতের ব্যাগ ইত্যাদি তৈরি করে চলেছে। হয়তো এটাও হতে পারে, আপনি এখন প্লাস্টিকের যে বস্তুটি ব্যবহার করছেন, সেটি আপনারই ব্যবহার করা প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহৃত সামগ্রী।

এছাড়াও আমাদের আশেপাশে বর্জ্য বাছাইকারী, কাবাড়িওয়ালা, পুনর্ব্যবহারকারী সামগ্রী তৈরির কারখানা ইত্যাদি মিশিয়ে বিশাল একটি অসংগঠিত একটি সেক্টর রয়েছে যারা ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক সংগ্রহ করে সঠিক স্থানে পাঠিয়ে দেয়।

বিভিন্ন রিপোর্টে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০-এর মধ্যে পুনর্ব্যবহারের এই পক্রিয়ার ৬ গুণ বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং প্রায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকার সাশ্রয় করবে। যা আমাদের বার্ষিক জিডিপির প্রায় ১১ শতাংশ। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬২ মিলিয়ন টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে যা পুনর্ব্যবহৃত হয় তাদের মধ্যে প্লাস্টিকের হারই সর্বাধিক—৬০ শতাংশ। যার বেশিরভাগটাই করে অসংগঠিত বিভাগগুলি।

পলিথিলিন টেরেফথ্যালেট (পেট) খাবার বা পানীয়র প্যাকেজিং-এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে পেট প্রোডাক্টের ৯৫ শতাংশই পুনর্ব্যবহার করা হয়।

পাশাপাশি বেশ কিছু রিপোর্টে এও জানা গিয়েছে যে পুনর্ব্যবহার শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ যুক্ত রয়েছেন। যখন থেকে জানা গিয়েছে যে পেট বোতলের পুনর্ব্যবহারের হার সর্বোচ্চ, এবং এটি থেকে বেশ ভাল আয়ের উৎস হতে পারে, তখন থেকে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যাও ব্যপকভাবে বেড়ে চলেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সারা বিশ্বে পুনর্ব্যবহার শিল্পে ব্যবসার অঙ্কটা ছিল ২৫,৬০০ মার্কিন ডলার। ২০২৫ এর মধ্যে এই অঙ্কটাই বেড়ে ৪১,২০০ মার্কিন ডলার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এটি একটি বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন। স্পনসরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Plastic pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE