‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রতীক স্বত্বের (ট্রেডমার্ক) অধিকার চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়। বিষয়টি নিয়ে গোটা দেশে দানা বাঁধে বিতর্ক। এই অবস্থায় আবেদনের এক দিনের মাথায় তা প্রত্যাহার করে নিল মুকেশ অম্বানীর সংস্থাটি! তবে স্বত্বের অধিকার চেয়ে আরও আবেদন জমা পড়েছে সরকারের কাছে।
বৃহস্পতিবার রিলায়্যান্স বিবৃতিতে দাবি করেছে, বায়ুসেনা অভিযানের প্রতীক স্বত্ব হাতে নেওয়ার কোনও ইচ্ছা তাদের নেই। এক ‘জুনিয়র’ কর্মী ‘অসাবধানবশত’ ওই আবেদন জানিয়েছিলেন। যদিও অনেকের বক্তব্য, আবেদনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে প্রতিক্রিয়া ছড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে। যা সমাজমাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। তার পরেই পিছিয়ে এসেছে রিলায়্যান্স। এই বিষয়ের উল্লেখ না করে বিবৃতি দিয়ে সেনা অভিযানের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুকেশ।
মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে ন’টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় বায়ুসেনা। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। আর সেই রাত কাটতে না কাটতেই বুধবার সকাল ১০টা ৪২ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিটের মধ্যে একের পর এক মোট চারটি আবেদন জমা পড়ে ‘কন্ট্রোলার জেনারেল অব পেটেন্টস, ডিজ়াইন্স অ্যান্ড ট্রেডমার্কস’-এর (সিজিপিডিটিএম) দফতরে। প্রথমটি ছিল রিলায়্যান্সের। বাকি তিন জন হলেন মুম্বইয়ের এক বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত বায়ুসেনা আধিকারিক এবং দিল্লির এক আইনজীবী। সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, ‘নাইস ক্লাসিফিকেশন’-এর ৪১ নম্বর শ্রেণির অধীনে আবেদনগুলি করা হয়েছিল। সিনেমা, তথ্যচিত্র, বই, ডিজিটাল কনটেন্ট, অনুষ্ঠান, প্রশিক্ষণ, ক্রীড়া কর্মসূচির মতো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এই ধরনের প্রতীক স্বত্ব চাওয়া হয়। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের সংগঠন আইসিএআই-এর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্ত জানাচ্ছেন, সরকারি কর্মসূচি বা অভিযানের প্রতীক স্বত্ব চেয়ে কেউ আবেদন জানাতেই পারেন। তবে সে সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সিজিপিডিটিএম-এর হাতে। যা রয়েছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনে।
এ দিন রিলায়্যান্স বলেছে, ‘‘তাদের শাখা জিয়ো স্টুডিও অপারেশন সিঁদুরের প্রতীক স্বত্বের আবেদন প্রত্যাহার করছে। এক জুনিয়র কর্মী অসাবধানবশত তা পাঠিয়েছিলেন। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় এবং সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষ অপারেশন সিঁদুর নিয়ে গর্বিত।... এই অভিযান একটি জাতীয় চেতনা তৈরি করেছে।’’ অনেকে মনে করাচ্ছেন, কারগিল, উরি-সহ বিভিন্ন জায়গায় ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভিযানকে বিষয় করে সিনেমা হয়েছে। কিন্তু জঙ্গিদের হাতে পর্যটক হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা এবং তার পরে ভারতের প্রত্যাঘাতের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে নিয়ে বিনোদনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি আমজনতার ক্ষোভের কারণ। অনির্বাণের বক্তব্য, ‘‘কোনও কোনও মহল ব্যবসায়িক স্বার্থে এই অভিযানকে ব্যবহার করতে চাইছে। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। সরকারেরও উচিত নয় এই আবেদনে সম্মতি দেওয়া।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)