প্রতীকী চিত্র
পেট্রল-ডিজেলের উপরে ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকার যে কর বসাত, তার একশো ভাগই কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হত। কিন্তু মোদী সরকারের সাত বছর কাটার পরে এখন তারা জ্বালানি দু’টিতে যে কর আদায় করছে, তার ৯৪ থেকে ৯৬ শতাংশই নিজের পকেটে পুরছে। বাকি ২%-৪% রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করছে। কারণ, মোদী সরকার তেলে সেস-সারচার্জ বাড়িয়েছে। যাতে তা রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করতে না হয়।
এই প্রেক্ষিতে তেলের দাম কমানোর জন্য এ বার মাঠে নেমেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। তারা দরবার শুরু করেছে কেন্দ্রের কাছে। গত ৪ জুন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি তাদের বিবৃতিতে পেট্রল-ডিজেলে করের বোঝা কমানোর পক্ষে সওয়াল করেছিল। যাতে সেগুলির দাম কমে। মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো যায়। কারণ পাইকারি এবং খুচরো, দুই বাজারেই মূল্যবৃদ্ধির হার এখন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। সরকারি সূত্রের দাবি, বিবৃতিতেই থেমে না-থেকে শীর্ষ ব্যাঙ্ক এ বার প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছে। কেন গাড়ির জ্বালানির দাম কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো দরকার, তা বোঝানোর চেষ্টা চলছে।
বহু রাজ্যে পেট্রল-ডিজেল ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কিছু রাজ্যে ১০০-র দোরগোড়ায়। অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও মনে করছেন, সেঞ্চুরি পার এই দামে রাজনৈতিক ভাবে ভুল বার্তা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গেও অর্থ মন্ত্রকের আলোচনা চলছে। উপদেষ্টা সংস্থা ইক্রার মতে, লকডাউন শিথিলের পরে তেলের বিক্রি বাড়বে। ফলে কর আদায়ও বাড়বে। তখন সরকারের পক্ষে লিটারে ৪.৫০ টাকা মতো সেস ছাঁটাই সম্ভব হবে।
তেলের উপরে নির্ভরতা মেনেই তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের যুক্তি, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল যথেষ্ট চড়া। তা ছাড়া, তেলে যে কর আদায় হয়, তা কোভিডের মোকাবিলায়, গরিবদের সুরাহায় কাজে লাগানো হচ্ছে। পেট্রলের দামের ৫৮%, ডিজেলের ৫২ শতাংশই কেন্দ্র-রাজ্যের কর। তাই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক কেন্দ্র-রাজ্য, দুই পক্ষকেই কর কমাতে বলেছিল। কিন্তু তামিলনাড়ুর অর্থমন্ত্রী পি থিয়াগা রেড্ডির অভিযোগ, “কেন্দ্র যে কর নিচ্ছে, তার সিংহভাগই রাজকোষে রাখছে। অর্থ কমিশনের সূত্র মেনে ৪২% রাজ্যগুলির মধ্যে বিলি করছে না। ২০১৪ সালে পেট্রলে কেন্দ্র লিটারে ৯.৪৮ টাকা আদায় করত। তার ৩.০৩ টাকা রাজ্য পেত। এখন কেন্দ্র ৩২.০৯ টাকা আদায় করছে। তার ৫৭ পয়সা রাজ্য পাচ্ছে। ডিজেলের ক্ষেত্রেও একই ছবি। রাজ্য ভ্যাট ইত্যাদি বসিয়ে যে কর নিচ্ছে, সেটুকুই তাদের আয়।” প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য রথীন রায়ের মন্তব্য, এর থেকেই স্পষ্ট, কেন্দ্রের রাজকোষের সঙ্কট কত গভীর। তাই রাজ্যের থেকে যতখানি সম্ভব শুষে নিতে চাইছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy