কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণায় উৎকর্ষের স্বাক্ষর রাখা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির প্রাপ্তির ভাঁড়ার কার্যত শূন্য। ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে গবেষণা খাতে সিংহভাগ বরাদ্দই ছিনিয়ে নিয়েছে বেসরকারি-ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রিত গবেষণাপ্রকল্প। এর মধ্যে কর্পোরেট বা শিল্পসংস্থাও থাকতে পারে।
গবেষণা, উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনী প্রয়োগে বেসরকারি ক্ষেত্রগুলির প্রকল্পে অর্থমন্ত্রী ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করেছেন। গত জুলাইয়ের অন্তর্বর্তী বাজেটে এই উদ্যোগটির কথা প্রথম শোনা যায়। এর বাইরে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য ‘পিএম রিসার্চ ফেলোশিপ’ প্রকল্পে আইআইটি, আইআইএসসি-র জন্য ১০ হাজারটি ফেলোশিপ নির্দিষ্ট হয়েছে। বলা হয়েছে, এর জন্য বাড়তি অর্থের সংস্থান করা হবে।
স্টার্টআপ ক্ষেত্র উজ্জীবিত করতে বাজেটে শোনা গিয়েছে ‘ডিপ টেক’ তহবিলে গুরুত্বের কথা। সেই সঙ্গে এআই বা কৃত্রিম মেধার প্রসারে দেশে চতুর্থ একটি উৎকর্ষ কেন্দ্রের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। গত বছর কৃষি, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশবান্ধব নগরের প্রসারে তিনটি এআই উৎকর্ষ কেন্দ্রের কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এ বারেরটি শিক্ষাক্ষেত্রে এআই প্রয়োগ বিষয়ক। দেশে ২০১৪-র পরে শুরু হওয়া পাঁচটি আইআইটিতে আরও ৬৫০০ জন পড়ুয়ার শিক্ষার পরিকাঠামো তৈরির কথাও বলেছেন নির্মলা। আইআইটি পটনার হস্টেল এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আইআইটি খড়্গপুরের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও দুর্গাপুর এনআইটি-র প্রাক্তন অধিকর্তা অনুপম বসুর কথায়, “ডিপ টেক, এআই— এই বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ সব ক্ষেত্রে পরিকল্পনার রূপরেখাটি স্পষ্ট নয়। আর ধারাবাহিক গবেষণায় উৎকর্ষের ছাপ রাখা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে উপেক্ষাও দুর্ভাগ্যজনক।” শিক্ষাজগতের বাইরের কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের চেষ্টার মতো শিক্ষাব্যবস্থাটাই বেসরকারি উদ্যোগের উপরে নির্ভরশীল করা হচ্ছে, মনে করছেন অনেকে। সমাজবিজ্ঞান, ‘হিউম্যানিটিজ়’-কে সম্পূর্ণ উপেক্ষার আক্ষেপও রয়েছে শিক্ষাজগতে।
‘ভারতীয় ভাষা পুস্তক প্রকল্পে’ স্কুল এবং উচ্চ শিক্ষায় বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার ডিজিটাল বই তৈরির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সদ্য প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন সংস্কৃতিসচিব জহর সরকার। তাঁর কথায়, “ভাষিণী অ্যাপটির মাধ্যমে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা তর্জমা করে আদানপ্রদানের কথা বহু দিন ধরে বলা হলেও তা এখনও নড়বড়ে। ভাষা চর্চায় ভারতের বহুভাষিক ঐতিহ্য রক্ষার বদলে ঘুরপথে হিন্দির প্রভাব বাড়ানোই এই সরকারের লক্ষ্য।” প্রাচীন ভারতের গরিমা মেলে ধরতে পুঁথি ঐতিহ্যের সমীক্ষা, পঞ্জিকরণ, সংরক্ষণের কথা শোনা গিয়েছে এই বাজেটেও। ‘জ্ঞান ভারতম মিশনে’র উদ্যোগে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাদুঘর, গ্রন্থাগার, ব্যক্তিগত সংগ্রাহকদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কথা বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর দাবি, “এই প্রকল্পে এক কোটির বেশি পুঁথি অন্তর্ভুক্ত হবে। ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের অন্তর্গত একটি জাতীয় ডিজিটাল সংরক্ষণাগার গড়ে তুলব।”
জহর বলেন, “এই কেন্দ্রীয় সরকার পুরনো প্রকল্পকে নতুন নামে চালাতে সিদ্ধহস্ত। ২০০৬ থেকে পুঁথি বিষয়ক জাতীয় মিশন প্রকল্পে দেশের বেশিরভাগ পুঁথির ঠিকানাই নাড়াচাড়া করা হয়। হাজার হাজার পাতা সংগ্রহ বা স্ক্যান আগেই হয়েছে। জানি না, এখন কী অবস্থায়।” সরকারি স্কুলগুলিতে ব্রডব্যান্ড সংযোগের কথা ঘোষণা হয়েছে। পড়ুয়াদের কৌতূহল, উদ্ভাবনী ক্ষমতা উসকে দিতে সরকারি স্কুলে অটল টিঙ্কারিং ল্যাবরেটরি গড়ার কথাও বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy