আর্থিক কর্মকাণ্ড প্রত্যাশা অনুযায়ী মাথা তোলেনি। বাজারে ঝিমিয়ে চাহিদা। অর্থনীতি শ্লথ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে ৫.৪ শতাংশে নেমেছে আর্থিক বৃদ্ধি। এই আবহে উদ্বেগ আরও বাড়াল বেকারত্ব সম্পর্কে খোদ কেন্দ্রের রিপোর্ট। মঙ্গলবার সেখানে দাবি, গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার (১৫ বছর বা তার বেশি সকলের) ৬.৪%। যা এক বছর আগের (৬.৫%) তুলনায় সামান্য কম। তবু যথেষ্ট আশঙ্কাজনক বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তার আগের অর্থাৎ, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই হার ৬.৪% ছিল। অর্থাৎ কাজের বাজারে কোনও উন্নতি হয়নি। এমনকি জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় পুরুষদের বেকারত্ব বেড়েছে। ১৫-২৯ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রেও বেকারত্ব ছিল ২০২৩-এর মতো ১৬ শতাংশের উপরে। এ ক্ষেত্রে জুলাই-সেপ্টেম্বরের ১৫.৯% থেকে তা বেড়ে হয়েছে ১৬.১%।
দুশ্চিন্তার ছবি রাজ্যেও। সম্প্রতি বাজেটে রাজ্য সরকার দাবি করেছে, দেশে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ হওয়ার নজির গড়লেও পশ্চিমবঙ্গে তা ক্রমশ কমেছে। এ দিন পরিসংখ্যানে প্রকাশ, ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে তা ২০২৩-এর ওই সময়ের ৫.৩% তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৭%। যা আগের ত্রৈমাসিকের ৫.৫ শতাংশের থেকেও বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সিদের ধরলে ১৪.৬% থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬.০২%। এই হারও ছাড়িয়েছে জুলাই-সেপ্টেম্বরের ১৫ শতাংশকে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কিছু বেসরকারি উপদেষ্টা সংস্থার হিসাব বেশি দেখালেও কেন্দ্র দাবি করে দেশে বেকারত্বকে ৩.২ শতাংশে নামানো গিয়েছে। কিন্তু সেই সরকারই যদি জানায় শহরাঞ্চলে তা এখনও ৬ শতাংশের উপরে, তা হলে কর্মসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক। অনেকে মনে করাচ্ছেন, জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের (এনএসও) ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের বেকারত্বের রিপোর্ট ফাঁস হওয়ায় বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, দেশে বেকারত্ব ৬.১% ছুঁয়ে চড়েছে ৪৫ বছরের শিখরে। পরে মোদী সরকারও রিপোর্টের সত্যতা স্বীকার করে। এ দিন হিসাব অনুসারে শহরাঞ্চলে বেকারত্ব সেই হারের চেয়েও চড়া। উল্লেখ্য, বেশ কিছু দিন ধরে নিম্নমুখী চাহিদা ধাক্কা দিচ্ছে অর্থনীতিকে। চিন্তায় রেখেছে শিল্প এবং সরকারকেও। প্রশ্ন উঠেছে, চাহিদা না বাড়লে কল-কারখানায় উৎপাদন বাড়বে কী ভাবে? আর তা না হলে নতুন কাজই বা তৈরি হবে কী করে?
আইসিএআই-এর পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্ত বলেন, ‘‘ঠিক এই আশঙ্কা দূর করতেই বাজারকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে বাজেটে করছাড় দিয়ে মধ্যবিত্তের হাতে বাড়তি টাকা রাখার ব্যবস্থা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বিক্রিবাটা ও কাজের বাজারে তার কোনও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে কি না, তা আগামী অর্থবর্ষের গোড়া থেকে বোঝা যাবে। তবে বাজেটের সুরাহা পৌঁছবে হাতে গোনা করদাতার ঘরে। ফলে সার্বিক অর্থনীতিতে তার প্রভাব কতটা পড়বে সন্দেহ থাকছেই।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)