Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
প্রশ্ন উন্নয়নশীল দেশের তকমা নিয়েই

ট্রাম্পের ত্রিফলায় ফের বিদ্ধ বেজিং

তিন আক্রমণের প্রথমটি এসেছে খোদ ট্রাম্পের তরফ থেকে। নভেম্বরে জন প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত নিয়ে চিনকে ফের একহাত নিয়েছেন তিনি।

চিনকে ত্রিমুখী আক্রমণ করল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।

চিনকে ত্রিমুখী আক্রমণ করল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন ও নুসা দুয়া শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩৯
Share: Save:

বাণিজ্য যুদ্ধে আখেরে বিশ্ব অর্থনীতিরই ক্ষতি হবে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)। কিন্তু তার পরেও শুল্ক যুদ্ধের আগুনে জল ঢালার লক্ষণ দেখাচ্ছে না আমেরিকা। বরং বেজিংয়ের প্রতি বিদ্বেষের পারদ আরও খানিকটা চড়িয়ে এ বার চিনকে এ নিয়ে ত্রিমুখী আক্রমণ করল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। যা দেখে বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, বার বার চিনা পণ্যে শুল্ক চাপানো সত্ত্বেও আমেরিকার সঙ্গে বেজিংয়ের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত সেপ্টেম্বরে ফের নতুন রেকর্ড গড়েছে। তাই এখন বেজিংয়ের প্রতি ‘বাণিজ্য-বিষ’ আরও বেশি করে উগরে দিচ্ছে আমেরিকা।

তিন আক্রমণের প্রথমটি এসেছে খোদ ট্রাম্পের তরফ থেকে। নভেম্বরে জন প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত নিয়ে চিনকে ফের একহাত নিয়েছেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ার নুসা দুয়ায় আবার মার্কিন অর্থ সচিব স্টিভেন মনুচিন বলেছেন, বাণিজ্যে চিনের সঙ্গে সমানে টক্কর দিতে চায় আমেরিকা। ব্যবসায় সুবিধা নিতে কোনও দেশ যাতে নিজেদের মুদ্রার দাম ইচ্ছে করে কমিয়ে না রাখে, তা দেখা হবে বলেও জানান তিনি। এই দুইয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) মার্কিন দূত ডেনিস শিয়ার অভিযোগ। তাঁর দাবি, উন্নয়নশীল দেশের তকমা সেঁটে অনৈতিক সুবিধা নেয় চিন।

ডব্লিউটিও নিজেদের না পাল্টালে আমেরিকা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ছাড়বে বলে আগেই হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অভিযোগ করেছিলেন, সেখানে বাড়তি সুবিধা পায় চিন। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে শিয়ার দাবি, মাথা পিছু জিডিপি-র নিরিখে বিশ্বের প্রথম সারির ছ’টি দেশের মধ্যে পাঁচটিই ডব্লিউটিও-য় নিজেদের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেখায়। এই কৌশল নেয় চিনও। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি তারাই। যে কারণে উন্নয়নশীল দেশের সংজ্ঞা পাল্টানোর পক্ষে সওয়াল করেছে আমেরিকা। প্রসঙ্গত, জি-২০ গোষ্ঠীর ১০টি দেশই ডব্লিউটিও-য় উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত। এর আগেও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করেছে আমেরিকা।

আপত্তি তকমায়

• চিন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। প্রায় সমস্ত প্রথম সারির বহুজাতিকের কারখানা সেই দেশে। মাথাপিছু অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (মাথাপিছু জিডিপি) নিরিখেও তা দুনিয়ায় একেবারে প্রথম পঙক্তিতে। তার পরেও তারা উন্নয়নশীল দেশের তকমা গায়ে থাকার সুবিধা পাবে কেন?

• বাণিজ্যে অনৈতিক ভাবে বাড়তি সুবিধা পেতে ওই তকমা ব্যবহার করে অন্যান্য দেশও। জি-২০ গোষ্ঠীর দশটি দেশের গায়ে উন্নয়নশীলের তকমা। মাথাপিছু জিডিপির বিচারে প্রথম ছ’টি দেশের মধ্যে পাঁচটিই ওই পরিচিতি ধরে রেখেছে। ওয়াশিংটনের আপত্তি সেখানেও।

রাগের কারণ

• আমেরিকার দাবি, উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম তুলনায় অনেক শিথিল। কিছু ক্ষেত্রে মেলে বাড়তি সুবিধাও। দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চিন সেই সুবিধা পাবে কেন?
• ট্রাম্পের প্রশাসন আগে এই আপত্তি তুলেছে ভারত-সহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও। এমনকি হুমকি দিয়েছে যে, নিয়মনীতি না বদলালে ডব্লিউটিও ছেড়ে বেরিয়ে আসবে আমেরিকা।

শিয়ার দাবি, ডব্লিউটিও-র নিয়মের তোয়াক্কা করে না চিন। বর্তমান কাঠামোয় বেজিং ও তাদের বাণিজ্য নীতিকে সামলানোর ক্ষমতা নেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার। যে কারণে চিনের বাণিজ্য নীতি নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, জাপান ও ইউরোপের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে আমেরিকা। নজর দেওয়া হচ্ছে তিনটি বিষয়ে— প্রথমত, সংস্থাকে ভর্তুকি দেওয়া ও চিনের সরকারি সংস্থার প্রাধান্য। দ্বিতীয়ত, চিনে ব্যবসা করা বিদেশি সংস্থাগুলিকে প্রযুক্তি হস্তান্তরে বাধ্য করা। আর তৃতীয়ত, খোলা বাজারের অর্থনীতি কাকে বলা হবে, তার সংজ্ঞা স্থির করা। যদিও চিনের বরাবরই দাবি, বাণিজ্যে প্রাচীর তুলছে আমেরিকাই।

এ দিন শুল্ক যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হবে বলে আইএমএফের আশঙ্কা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন মনুচিন। তাঁর দাবি, বেজিংয়ের উপরে চাপ বাড়ানোর মার্কিন কৌশলে জাপান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো আমেরিকার ‘বন্ধুদেরই’ উপকার হবে। তা আদতে চিনের পক্ষেও ভাল বলে তাঁর মত। উল্লেখ্য, শুল্ক যুদ্ধের জেরে আইএমএফ ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিশ্বে বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে।

বেজিংয়ের যুক্তি

• পাল্টা হিসেবে প্রথম থেকে চিনের দাবি, অবাধ বাণিজ্যে দেওয়াল তুলছে ট্রাম্পের আমেরিকাই। তাই নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে, চুপ করে বসে থাকবে না তারা।
• চিনের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে ভেসে উঠেছে কটাক্ষ, ‘বুদ্ধিমানরা সেতু গড়ে। দেওয়াল তোলে বোকারা।’

মার্কিন অভিযোগ

• বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মনীতির তোয়াক্কাই করে না বেজিং। অবাধ বাণিজ্যের নিয়মের তোয়াক্কা না করে বরং চাপ খাটিয়ে হাতিয়ে নেয় সে দেশে ব্যবসা করা মার্কিন সংস্থার মেধাস্বত্ব (পেটেন্ট)।
• স্থানীয় সংস্থাকে বাধা দেয় না মেধাস্বত্ব ভেঙে পণ্য তৈরিতে।
• অঢেল ভর্তুকি দেয় নিজের দেশের সংস্থাগুলিকে। যাতে কম দামে পণ্য বেচে বিদেশে বাজার দখল করতে পারে তারা।
• সঙ্গে রয়েছে উঁচু শুল্কের প্রাচীরও। বলা চলে,
অবাধ বাণিজ্যের নিয়ম নিজেদের মতো করে ঠিক করে তারা!
• এই সমস্ত কারণেই চিনের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি অন্তত ৩৭,০০০ কোটি ডলার। যার মাসুল গুনে ২০ লক্ষ কাজের সুযোগ তৈরিই হয় না মার্কিন মুলুকে।

এর আগেই বাণিজ্য নিয়ে আলোচনার জন্য বেজিং প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। আর এ বার প্রেসিডেন্টের দাবি, চিনের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমাতে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি।

শুল্ক যুদ্ধে চিন, ভারত, ইউরোপের নানা দেশকে আক্রমণ করেছেন ট্রাম্প। অভিযোগ করেছেন, ডব্লিউটিওয় আমেরিকার প্রতি অবিচারের। এ বার এ নিয়ে চিনের উপরে আক্রমণ আরও তীব্র করল তাঁর প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE