Advertisement
E-Paper

প্রত্যর্পণ প্রশ্নে জোড়া ধাক্কা, মাল্য দূরেই

অপরাধ করেছে মেনে নিয়েও ভারতের হাতে বন্দি প্রত্যর্পণের দু’টি অনুরোধ সম্প্রতি খারিজ করে দিয়েছে ব্রিটেনের আদালত।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৪

অপরাধ করেছে মেনে নিয়েও ভারতের হাতে বন্দি প্রত্যর্পণের দু’টি অনুরোধ সম্প্রতি খারিজ করে দিয়েছে ব্রিটেনের আদালত।

প্রথম ক্ষেত্রে যুক্তি, ভারতে পাঠালে তিহাড় জেলে বন্দির মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আদালতের বক্তব্য, অপরাধের পরে সিকি শতক কেটে গিয়েছে। এত দিন পরে ফেরত পাঠানোটা অযৌক্তিক, অন্যায্য ও অত্যাচারের সমতুল।

আরও পড়ুন: উন্মাদনার চেনা ছবি আই ফোন-১০ ঘিরে

বিজয় মাল্যকে ভারতের হাতে তুলে নেওয়ার মামলা শুরু হওয়ার কথা ৪ ডিসেম্বর। সেই মামলা কবে কী ভাবে এগোবে, তা স্থির করার শুনানি হওয়ার কথা ২০ নভেম্বর। তার আগে এই জোড়া ধাক্কা স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তা বাড়াল ভারতের। কারণ, ভারতে পাঠালে যেখান তাঁর ঠাই হওয়ার সম্ভাবনা, সেই তিহাড় জেলে নিগ্রহের শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে মাল্যর তরফেও।

প্রথম ধাক্কাটি এসেছে ভারতে ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে অভিযুক্ত দম্পতি, জতীন্দ্র আঙ্গুরালা ও তার স্ত্রী আশার প্রত্যর্পণ মামলায়। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে জালন্ধরে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ছিলেন জতীন্দ্র। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটি থেকে নিজের ও স্ত্রীর নামে ঋণ মঞ্জুর করেন জতীন্দ্র। স্ত্রী ছিলেন সেই জালিয়াতির সঙ্গী। ব্যাঙ্কের ক্ষতি হয় ২০ লক্ষ টাকারও বেশি। অনিয়ম ধরা পড়ে যাওয়ায় জতীন্দ্র টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিছুটা দিলেও আজ পর্যন্ত পুরো টাকা ফেরত দেননি। বর্তমানে এই দম্পতি ব্রিটেনের নাগরিক। দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে একটি দোকান চালান। ২০১৫ সালে প্রত্যর্পণের জন্য পরোয়ানা জারি হলে গ্রেফতার করা হয় এই দম্পতিকে। পরে জামিনে ছাড়া পান তাঁরা।

গত ১২ অক্টোবর ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সিনিয়র জেলা বিচারক এমা আর্বুথনট এঁদের প্রত্যর্পণের আর্জি খারিজই শুধু করেননি, তদন্তে এত দিন লাগিয়ে দেওয়ার জন্য সিবিআইয়েরও কড়া সমালোচনা করেছেন। বিচারক এমা বলেছেন, ‘‘যৌবন ঢলে পড়েছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু সমস্যাও রয়েছে ৬৭ বছরের জতীন্দ্রের।... অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, তিনি ফেরারও নন। এখন তাঁকে ফেরত পাঠানোটা ঠিক হবে না।’’ বিলম্বের যুক্তিতেই খারিজ করা হয় জালিয়াতির সঙ্গী আশাকে ভারতে পাঠানোর আর্জি।

দ্বিতীয় ধাক্কাটি আসে এর চার দিনের মাথায়। ক্রিকেট বুকি সঞ্জীবকুমার চাওলাকে ভারতে আনার মামলায়। ২০০০ সালে ফেব্রুয়ারি-মার্চে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতে সফরে গিয়েছিল। সেই সিরিজে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে সঞ্জীবের ভূমিকা ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন জেলা বিচারক রেবেকা ক্রেন। কিন্তু রায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছেন আদালতের পরামর্শদাতা অ্যালান মিশেলের বক্তব্যে। পেশায় চিকিৎসক অ্যালান অতীতে স্কটল্যান্ডের জেলে মে়ডিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর বক্তব্যকে ভিত্তি করে গত ১৬ অক্টোবর দেওয়া রায়ে রেবেকা লিখেছেন, ‘‘তিহাড় জেলে ধারণ-ক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দির ভিড়। চিকিৎসার উপযুক্ত সুবিধা মেলে না। এটা বিশ্বাস করার জোরালো কারণ আছে যে, প্রার্থিত ব্যক্তি (সঞ্জীবকুমার চাওলা)-কে সেখানে পাঠালে বন্দিদের কিংবা জেলকর্মীদের হাতেই তিনি নিগৃহীত বা হিংসার শিকার হতে পারেন। এমন ঘটনা সেখানে প্রায়ই ঘটে থাকে। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়াটা হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।’’ ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণখেলাপি মাল্যও প্রত্যর্পণ ঠেকাতে এই যুক্তিকে হাতিয়ার করছেন যে, তিহাড় তাঁর পক্ষে নিরাপদ নয়।

মাল্য ছাড়া, আরও পাঁচ জনের প্রত্যর্পণ মামলা ঝুলে আছে ব্রিটেনে। রাজ্যসভায় জানানো তালিকা অনুযায়ী নামগুলি হল, রাজেশ কপূর, টাইগার হানিফ, অতুল সিংহ, রাজকুমার পটেল ও শেখ সাদিক। ভারত-ব্রিটেন প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়েছিল ১৯৯২ সালে। কার্যকর হয় পরের বছর। খুন করে ফেরার বাংলাদেশি মহম্মদ শাকুরকে চলতি বছরেই ব্রিটেনের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভারতের। যদিও ব্রিটেন থেকে ভারতে বন্দিদের পাওয়ার ছবিটা তেমন উৎসাহজনক নয়। গত মাসের দু’টি রায় স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তা আরও বাড়িয়ে তুলল দিল্লির। ভারতীয় জেলের পরিবেশ ও তদন্তে বিলম্ব— ব্রিটেন থেকে বন্দি প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে বড় কাঁটা এখন এই দু’টি।

Extradition Case Vijay Mallya The Westminster Magistrates' Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy