E-Paper

নতুন কর ব্যবস্থা আর চড়া সুদের জমানায় ফিকে ফান্ড

চলতি অর্থবর্ষে আয়কর আইনে আসা দু’টি পরিবর্তন। যার কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফান্ড শিল্পের উপরে। জমার উপর সম্প্রতি সুদের হার ভাল রকম বাড়ায় ব্যাঙ্ক-ডাকঘরও মোটা অঙ্কের লগ্নি টানছে।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৩ ০৫:২১
An image representing mutual funds

১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর করের হার কমিয়ে এ বার আকর্ষণ বাড়ানো হয়েছে নতুন কর কাঠামোর। প্রতীকী ছবি।

টাকা রাখার ভাল জায়গা হিসেবে মধ্যবিত্তের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে মিউচুয়াল ফান্ড। অনেকে ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের তুলনায় বেশি আয়ের খোঁজ করেন। কিন্তু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার বাজারকে এড়াতে চান। তাঁদের কাছে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে ফান্ড ভাল লগ্নির জায়গা। একটু বড় মেয়াদে একলপ্তে টাকা রেখে বা মাসে মাসে জমিয়ে সম্পদ তৈরির সুযোগ এতে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করেছে। গত ক’বছরে ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং অন্যান্য স্থির আয় প্রকল্পে সুদ কম থাকায় হু হু করে লগ্নি ঢুকেছে ফান্ডে। ফলে ফান্ডে পরিচালনাধীন মোট সম্পদের (এইইউএম) পরিমাণ সম্প্রতি পৌঁছেছে সর্বকালীন উচ্চতায়। এপ্রিলের শেষে সব ফান্ড মিলিয়ে এইউএম ছুঁয়েছে ৪১.৫২ লক্ষ কোটি টাকা। তবে ছবিটা বদলেও গিয়েছে এপ্রিল থেকেই। সেখানে নতুন লগ্নি ঢোকার ক্ষেত্রে এ বার স্পষ্ট ভাটার টান।

এর কারণ, চলতি অর্থবর্ষে আয়কর আইনে আসা দু’টি পরিবর্তন। যার কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফান্ড শিল্পের উপরে। এ ছাড়া, জমার উপর সম্প্রতি সুদের হার ভাল রকম বাড়ায় ব্যাঙ্ক-ডাকঘরও মোটা অঙ্কের লগ্নি টানছে। বিষয়টি স্পষ্ট ধরা পড়েছে গত মাসের পরিসংখ্যানেই।

১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর করের হার কমিয়ে এ বার আকর্ষণ বাড়ানো হয়েছে নতুন কর কাঠামোর। ফলে আয়কর জমার পুরনো বিকল্পে যাঁদের বেশি ছাড় পাওয়ার নেই, তাঁদের সিংহভাগই সম্ভবত ঝুঁকছেন নতুন ব্যবস্থায়। যেটি এখন আয়কর দেওয়ার প্রধান ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এর আওতায় স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ছাড়া অন্য ছাড় খুব বেশি মেলে না। অর্থাৎ যাঁরা নতুন কর কাঠামো বেছে নেবেন, তাঁদের কর সাশ্রয়ের জন্যে আয়কর আইনের ৮০সি ধারা অনুযায়ী আর ১.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নির প্রয়োজন পড়বে না। যে সমস্ত লগ্নিতে করছাড় পাওয়া যায়, তার মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ডের কর সাশ্রয়কারী ইএলএসএস প্রকল্প অন্যতম। বেশিরভাগ মানুষ নতুন ব্যবস্থায় এলে মোটা অঙ্কের লগ্নি কমবেই ইএলএসএস প্রকল্পগুলিতে। গত মার্চে এগুলির পরিচালনাধীন মোট সম্পদ ছিল ১.৫০ লক্ষ কোটি টাকা, যা শেয়ার ভিত্তিক (একুইটি) ফান্ডে লগ্নি করা মোট সম্পদের প্রায় ১০%। চলতি অর্থবর্ষে (২০২৩-২৪) এই প্রকল্পে বিনিয়োগে ভাটা পড়ার আশঙ্কা প্রবল।

আয়করের দ্বিতীয় পরিবর্তনটাও ফান্ডের দিক থেকে শুভ নয়। যে সব ঋণপত্র ভিত্তিক (ডেট) ফান্ডের ৩৫% পর্যন্ত তহবিল শেয়ারে লগ্নি করা হয়, সেগুলিতে মূল্যবৃদ্ধি সূচক প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভ করে ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যাবে না। এর ফলে লগ্নি কমবে এই ধরনের ফান্ডেও। লগ্নিকারীদের অনেকেই এখন ঝুঁকবেন উঁচু সুদযুক্ত ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত-সহ বিভিন্ন স্থির আয় প্রকল্পের দিকে।

অনেক দিন ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরে জমার উপর সুদ তলিয়ে থাকার পরে, সম্প্রতি তা মাথা তুলেছে। বর্তমানে তার হার খুচরো মূল্যবৃদ্ধির চেয়ে অনেকটাই উপরে। ব্যাঙ্ক জমায় সুদ মিলছে ৭%-৮%। সরকার সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমে সুদ বাড়িয়ে করেছে ৮.২%। এ ছাড়া এই প্রকল্পে লগ্নির সীমা ১৫ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ লক্ষ। ফলে মোটা টাকা টানছে সেটি। গত মাসে এই প্রকল্পে ঢুকেছে প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Interest Rates Mutual Funds investments Banks

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy