Advertisement
E-Paper

মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ না-বাড়ানোর সিদ্ধান্তেই তেতে উঠেছে দেশের বাজার

গত সপ্তাহটা ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। নানান ঘটনায় ভরপুর। সেখানে কখনও আশা, আবার কখনও আশঙ্কার দোলাচল। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই উত্থান ও পতন, দুই-ই দেখা গিয়েছে। যা এই ঘটনাবহুল সপ্তাহে টানটান উত্তেজনায় সদাব্যস্ত করে রেখেছিল লগ্নিকারীদের। অবশ্য গোটা সপ্তাহের হিসেব নিলে দেখা যাবে এই সপ্তাহেও সেনসেক্স শেষ পর্যন্ত এগিয়েই গিয়েছে।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৯

গত সপ্তাহটা ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। নানান ঘটনায় ভরপুর। সেখানে কখনও আশা, আবার কখনও আশঙ্কার দোলাচল। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই উত্থান ও পতন, দুই-ই দেখা গিয়েছে। যা এই ঘটনাবহুল সপ্তাহে টানটান উত্তেজনায় সদাব্যস্ত করে রেখেছিল লগ্নিকারীদের। অবশ্য গোটা সপ্তাহের হিসেব নিলে দেখা যাবে এই সপ্তাহেও সেনসেক্স শেষ পর্যন্ত এগিয়েই গিয়েছে। এবং এর ফলে তার এই এগিয়ে যাওয়ার ধারা বজায় থেকেছে টানা তিন সপ্তাহ। সে ক্ষেত্রে গত দু’ বছরে এটিই সেনসেক্সের সবথেকে টানা লম্বা দৌড়।

সপ্তাহের প্রথম দিকটা ছিল আশঙ্কায় ভরপুর। ভয় ছিল মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ বা ‘ফেড’ সুদের হার বাড়াতে পারে। কারণ ওবামার দেশে সুদের হার বাড়লে ভারত থেকে মোটা আকারে লগ্নি ফিরে যেতে পারে সেখানে। এই আশঙ্কায় ভাল রকম দুর্বল হয়ে পড়ে শেয়ার বাজার। মঙ্গলবার ৮২৯ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। সেনসেক্স ৩২৪ পয়েন্ট কমে নেমে আসে ২৬,৪৯২ অঙ্কে। ওই দিন ৩ থেকে ৪ শতাংশ মেদ ঝরে যায় মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপ সূচকের। কিন্তু এই রকম ঝিমিয়ে পড়া বাজারই আবার বৃহস্পতিবার অস্বাভাবিক রকম তেতে ওঠে, যখন খবর আসে শীর্ষ ব্যাঙ্ক এখনই সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটছে না। ফের আশায় বুক বাঁধে শেয়ার বাজার মহল।

ফেডের এই সিদ্ধান্তের খবর পেয়ে বাজার এক লাফে ১.৮১ শতাংশ বা মোট ৪৮০ পয়েন্ট বেড়ে পৌঁছে যায় ২৭,১১২ অঙ্কে। অবশ্য এর পাশাপাশি, ভারতের শেয়ার সূচক তেতে ওঠার আরও একটি বড় কারণ হল, ভারত সফরে এসে চিনা প্রেসিডেন্টের এ দেশে ১০,০০০ কোটি ডলার লগ্নির অঙ্গীকার।

এ দেশে জাপান আগেই ৩,৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ বার চিনের এই অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হলে ভারতে শিল্পে বিদেশি লগ্নির জোয়ার আসবে, এই আশাতেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে সূচক।

বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, আগামী এপ্রিলের আগে ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ আশু কোনও বিপদ ঘনিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না এই মুহূর্তে। অন্য দিকে ভারতীয় অর্থনীতির সামনে আরও এক রুপোলি রেখা হল বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেকটা কমে যাওয়া। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমা ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যে কিছুটা ভারসাম্য আনতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বর্তমানে পরিস্থিতি বেশ অনুকূলেই মনে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন রাজ্যে সম্প্রতি হওয়া উপনির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল না-করা সত্ত্বেও তার তেমন প্রতিকূল প্রভাব বাজারে দেখা যায়নি। এখনও পর্যন্ত শিল্প-বাণিজ্য বিদেশ নীতির ব্যাপারে নেওয়া মোদীর নানা সিদ্ধান্ত বাজারের মনে ধরেছে। বাজেট পর্যন্ত আগামী পাঁচ মাসে এই সরকার আর কী কী সংস্কারমুখী সিদ্ধান্ত নেয়, তার উপর নজর রাখবেন লগ্নিকারীরা।

মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক যেমন সুদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত বিরত থেকেছে, তেমনই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনই সুদ কমাবে, তেমন আশাও কেউ করছেন না। এই পরিস্থিতিতে কিন্তু গত সপ্তাহে মেয়াদি জমায় সুদের হার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। ১ থেকে ৩ বছরের মেয়াদি জমায় সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৮.৭৫ শতাংশ। এক দিকে ব্যাঙ্কের আমানত বেড়ে ওঠা এবং অন্য দিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ঋণের চাহিদা তেমন না-বাড়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অবশ্য ভারতের এই বৃহত্তম ব্যাঙ্ক একই সঙ্গে ছোট মেয়াদে সুদ বাড়ানোর কথাও ঘোষণা করেছে। ১৮০ দিন থেকে ২১০ দিন মেয়াদের আমানতে সুদের হার ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.২৫ শতাংশ করা হয়েছে। একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, গোটা ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সম্প্রতি আমানত যেখানে বেড়েছে ১৪ শতাংশ হারে, সেখানে ঋণ বৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশেরও কম।

এ দিকে, দেশের বৃহত্তম লগ্নি তথা বিমা সংস্থা এলআইসি আবার ছক কষছে ইউলিপের দুনিয়ায় নতুন করে প্রবেশ করার জন্য। শেয়ার বাজারের এতটা তেতে ওঠাই উৎসাহ দিচ্ছে এই জীবন বিমা সংস্থাকে। চলতি বছরে এলআইসি শেয়ার বাজারে ৫৫,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। বাজারের কাছে এটি অবশ্যই একটি বড় খবর।

এ বার আসি সমাজের সব স্তরে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা করা জন-ধন প্রকল্পের কথায়। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের উদ্যোগে জোর কদমে চলছে জন-ধন প্রকল্পের অধীনে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার পর্ব। এই অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে অবশ্য অনেকেরই তেমন স্পষ্ট ধারণা নেই। তবু এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই প্রকল্পের রূপরেখা—

যে-পরিবারে কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, সেই পরিবারের সদস্যরা এই প্রকল্পের অধীনে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ পাবেন। এটি হবে একটি ‘শূন্য ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট’ অর্থাৎ এখানে অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম টাকা জমা রাখার শর্ত আরোপ হবে না।

জন-ধন প্রকল্পে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুললে, এর সঙ্গে পাওয়া যাবে ‘রূপে’ ডেবিট কার্ড। থাকবে ১ লক্ষ টাকা মূল্যের দুর্ঘটনা বিমার সুবিধাও।

যাঁরা ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারির মধ্যে অ্যাকাউন্ট খুলবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বিমার পরিমাণ বেড়ে হবে ১,৩০,০০০ টাকা।

যিনি ওই অ্যাকাউন্ট খুলবেন তাঁকে ঋণ পাওয়ার সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। অ্যাকাউন্ট খোলার ৬ মাস পরে ৫,০০০ টাকা ঋণ পাওয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে।

সাধারণ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠানো যাবে। স্মার্ট ফোন না-হলেও চলবে।

amitava guha sarkar Federal Reserve country market latest news online news latest news online
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy