Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

৫ হাজার কোটির অনুৎপাদক সম্পদ বেচার পথে স্টেট ব্যাঙ্ক

চলতি আর্থিক বছরের শেষ ত্রৈমাসিকেই (জানুয়ারি-মার্চ) মুনাফা বাড়াতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অনুৎপাদক সম্পদ বিক্রির পথে পা বাড়াচ্ছে স্টেট ব্যাঙ্ক। নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথম বার যা করতে চলেছে দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কটি। সম্প্রতি কলকাতায় ব্যাঙ্কের সদর দফতরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের শেষে দায় কমাতে অনুৎপাদক সম্পদ বিক্রির ওই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০২:১৪
Share: Save:

চলতি আর্থিক বছরের শেষ ত্রৈমাসিকেই (জানুয়ারি-মার্চ) মুনাফা বাড়াতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অনুৎপাদক সম্পদ বিক্রির পথে পা বাড়াচ্ছে স্টেট ব্যাঙ্ক। নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথম বার যা করতে চলেছে দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কটি।

সম্প্রতি কলকাতায় ব্যাঙ্কের সদর দফতরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের শেষে দায় কমাতে অনুৎপাদক সম্পদ বিক্রির ওই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এ বার তারই অঙ্গ হিসেবে পাঁচ হাজার কোটির অনুৎপাদক সম্পদ অ্যাসেট রিকনস্ট্রশন কোম্পানির (এআরসি) কাছে বিক্রি করতে চলেছে ব্যাঙ্কটি।

দেশে শিল্পের হাল খারাপ হওয়ায় ব্যাঙ্কের ধার শোধ করতে পারেনি বহু সংস্থাই। যার ফলে চলতি আর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রায় প্রতিটি ব্যাঙ্কেরই অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। যেমন, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন করে স্টেট ব্যাঙ্কেরই অনুৎপাদক সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে ১১,৪০০ কোটি টাকার। তার মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭,৭৯৯ কোটি। শুধু তা-ই নয়, মূলত এর জেরেই চলতি তৃতীয় ত্রৈমাসিকে স্টেট ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা আগের বারের থেকে কমে গিয়েছে ৩৪%। উল্লেখ্য, প্রতি ত্রৈমাসিকে নিট মুনাফা হিসাব করার সময় অনুৎপাদক সম্পদ বাবদ তুলে রাখা টাকা (প্রভিশনিং) ব্যাঙ্কগুলিকে মোট মুনাফা থেকে বাদ দিতে হয়।

অনুৎপাদক সম্পদ কমানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং অন্য কিছু সংস্থা মিলে দেশে ১৪টি এআরসি গঠন করেছে। বর্তমানে দেশে এ ধরনের একাধিক সম্পদ পুনর্গঠন সংস্থা চালু আছে। এদের কাছে অনুৎপাদক সম্পদ বিক্রি করে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। সাধারণত তার মোট মূল্যের থেকে কম দামে। বিক্রি করে কেমন দাম পাওয়া যাবে, তা নির্ভর করে ওই অনুৎপাদক সম্পদের মানের উপর। যে ঋণ আদায়ের সম্ভবনা যত কম, সাধারণত তা তত কম দরে বিক্রি করতে হয় ব্যাঙ্ককে।

অনুৎপাদক সম্পদ কেনার পর এআরসি তা আদায়ের চেষ্টা করে। কেনা দামের থেকে বেশি টাকা আদায় করতে পারলে, তার মুনাফা। নইলে লোকসান। অন্য দিকে, ব্যাঙ্কগুলির সুবিধা হল, কিছু টাকা লোকসান করেও বাকিটুকুকে উৎপাদক সম্পদ হিসেবে ঘরে তোলা। কারণ, যে অনুৎপাদক সম্পদ একবার বিক্রি হয়ে যায়, ব্যাঙ্কের ব্যালান্স শিটেও তা ওই খাত থেকে বাদ পড়ে। ফলে তার জন্য আর আলাদা করে আর্থিক সংস্থান করতে হয় না ব্যাঙ্ককে। টান কম পড়ে নিট মুনাফায়। তা ছাড়া, অনুৎপাদক সম্পদ বিক্রি করে পাওয়া টাকা ফের ঋণ দিয়েও সুদ বাবদ আয় বাড়াতে পারে তারা।

স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে-এআরসি সব থেকে বেশি দাম দেবে, তার কাছেই ওই ৫ হাজার কোটির অনুৎপাদক সম্পদ বিক্রি করা হবে। তবে বিষয়টি শেষ করা হবে মার্চের মধ্যেই। আগের ত্রৈমাসিকে নিট মুনাফা দ্রুত কমে আসায় চতুর্থ ত্রৈমাসিকে মুনাফা বাড়িয়ে সারা বছরের (২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষ) লাভের অঙ্ক বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। আর সেই কারণেই মার্চের মধ্যে অনুৎপাদক সম্পদ বিক্রির এই উদ্যোগ।

শুধু স্টেট ব্যাঙ্ক নয়। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে অনুৎপাদক সম্পদ উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সব ব্যাঙ্কই। যে কারণে মোট ৪৩ হাজার কোটি টাকার অনুৎপাদক সম্পদ এআরসিগুলির কাছে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তারা।

প্রসঙ্গত, অনুৎপাদক সম্পদ কমানোর কয়েকটি উপায় রয়েছে। যেমন, টাকা আদায়ের জন্য বিশেষ ভাবে চেষ্টা চালানো। অনেক ঋণগ্রহীতা ধার শোধে ইচ্ছুক হলেও ব্যবসার বেহাল দশার কারণে তা করতে পারেন না। সে সব ক্ষেত্রে ঋণ শোধের সময় বাড়িয়ে বা কিস্তির অঙ্ক কমিয়ে ঋণ ঢেলে সাজার চল রয়েছে। তবে ১ এপ্রিল থেকে যে নতুন নিয়ম চালু হবে, তাতে ঢেলে সাজা ঋণের ৫% টাকা আর্থিক সংস্থান করতে হবে। আগে তুলে রাখতে হত ২%। এ ছাড়া, এআরসিগুলির কাছে অনুৎপাদক সম্পদ বিক্রি করে কিংবা ঋণের দাবি ছেড়েও (রাইট অফ) ওই দায় কমাতে পারে ব্যাঙ্কগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sbi property 5 thousand crore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE