Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘সিঙ্গেলদের বিবাহ অভিযান’, হৃদ্‌মাঝারে ভেসে পড়তে পথ দেখাচ্ছে ফেসবুক গ্রুপ

এই ফেসবুক গ্রুপ যে এমন সাড়া ফেলবে, শুরু করার সময়ে তা ভাবেনইনি তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই গ্রুপ তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত।

অলঙ্করণ - শৌভিক দেবনাথ

অলঙ্করণ - শৌভিক দেবনাথ

সুজিষ্ণু মাহাতো
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩১
Share: Save:

বৈশাখে দেখা হওয়া আর জ্যৈষ্ঠে পরিচয়ের দিন ফুরিয়েছে। আষাঢ়ের আগে ‘কী জানি কী হয়’ মন নিয়ে অপেক্ষারও প্রয়োজন নেই। ফেসবুক গ্রুপে নিজের পরিচয় দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে, কখনও বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিলে যাচ্ছে বন্ধু বা বান্ধবী। এমন যোগাযোগ ঘটিয়েই হালে ফেসবুকে জনপ্রিয় হয়েছে একটি গ্রুপ, ‘সিঙ্গেলদের বিবাহ অভিযান’। তৈরি হওয়ার দেড় মাস গড়াতে না গড়াতেই সেই গ্রুপের সদস্য ছাড়িয়েছে সওয়া লক্ষ!

এই ফেসবুক গ্রুপ যে এমন সাড়া ফেলবে, শুরু করার সময়ে তা ভাবেনইনি তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই গ্রুপ তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। কলেজশিক্ষিকা তরুণিমা বলছেন, ‘‘খাওয়া-ঘোরা-সাহিত্য— ফেসবুকে অনেক ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনার গ্রুপ রয়েছে। আমি অনেকগুলোর সদস্যও। তবে এই ধরনের গ্রুপ নেই বলে এমন কিছু শুরু করার কথা ভাবছিলাম।’’ শেষমেশ হঠাৎই ২৭ অগস্ট গ্রুপ শুরু করে ফেলেন তরুণিমা। এখন গ্রুপের সদস্য-সংখ্যা ১ লক্ষ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

একেবারে সাবেক পত্রমিতালির বিজ্ঞাপনের ধাঁচেই ফেসবুক গ্রুপে সদস্যেরা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন। সেই পরিচয় দেওয়ার ভঙ্গিতে থাকছে রঙ্গ-রসিকতাও। সেই সঙ্গে দিচ্ছেন নিজের ছবি। সেই সব পোস্টে মন্তব্য করছেন গ্রুপের বাকি সদস্যেরা। কাউকে কারও ‘বিশেষ’ পছন্দ হলে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করে নিচ্ছেন পোস্টদাতার সঙ্গে। এমন ভাবে অন্তত ৩৮টি সম্পর্ক, অর্থাৎ ৭৬ জনকে এর মধ্যেই এই গ্রুপ পরিচিতির বাঁধনে বেঁধেছে বলে জানাচ্ছেন তরুণিমা। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রুপের মাধ্যমে যাঁদের পরিচয় হয়েছে, তাঁরা নিজেরাই তা গ্রুপে স্বীকার করায় ৩৮ সংখ্যাটা আমরা পেয়েছি। তার বাইরেও অনেকে রয়েছেন নিশ্চয়ই।’’

এই ৩৮ জোড়ার মধ্যে রয়েছেন শিমুল হালদারও। রাজ্য সরকারি কর্মী শিমুল অবশ্য নিজের জন্য নয়, নিজের বন্ধুদের জন্যই ‘বিজ্ঞাপন’ লিখে দিয়েছিলেন গ্রুপে। কিন্তু মজার সেই লেখা পড়ে শিমুলের সঙ্গেই যোগাযোগ করেন এক তরুণী। শিমুল বলছেন, ‘‘আমি চাকরি সূত্রে দার্জিলিঙে থাকি। পুজোর ছুটিতে কলকাতায় এসে ওঁর সঙ্গে দেখাও করি। এই গ্রুপের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।’’

হালফিলের দুনিয়ায় সঙ্গী বা সঙ্গিনী খোঁজার জন্য ডেটিং অ্যাপের অভাব নেই। তাতে ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখা করতে পারেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ফেসবুকের মতো একটা খোলা মঞ্চে যোগাযোগ করার জন্য বিপুল চাহিদা দেখা যাচ্ছে এই গ্রুপে। যাঁরা বন্ধু পাচ্ছেন, তাঁরা তো বটেই, যাঁরা একা, তাঁরাও নিজেদের নিয়ে মজা করে পোস্ট করছেন নানা লেখা, বানাচ্ছেন নানা মিম। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টাই সরগরম এই গ্রুপ।

তরুণিমা জানাচ্ছেন, দিনে প্রায় ৬০০-৭০০ পোস্ট হচ্ছে। এই চাপ সামলাতে তরুণিমা তাঁর ছয় বন্ধুকেও অ্যাডমিন করেছেন গ্রুপের। তাঁর মতে, ‘‘এখন অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই নিজেকে জাহির করা বা নিজের জনপ্রিয়তা জরিপ করে নেওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ফেসবুক গ্রুপে তা সম্ভব। কিন্তু ডেটিং অ্যাপের আলাপচারিতা পুরোটাই ব্যক্তিগত, তাই সেখানে সেই সুযোগ নেই। তাই হয়তো এমন প্রকাশ্য গ্রুপের চাহিদা বেশি।’’

কিন্তু যেখানে দেখনদারিই মুখ্য, সেখানে এ ভাবে গড়ে ওঠা সম্পর্কের স্থায়িত্ব ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র। তিনি বলছেন, ‘‘দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যমের তৈরি সমাজই বুঝি আসল সমাজ! সমাজটাকে পুরোপুরি সেই ভাবে গ্রহণ করতে এখনও আমার বাধে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সমাজের একটা ভিত রয়েছে। এই ধরনের সম্পর্ক তো তৈরি হচ্ছে একটা বায়বীয় জগতে। তার ভিত্তি কী? স্বাভাবিক, রক্তমাংসের সমাজ থেকে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তার সঙ্গে এর কোনও তুলনাই চলে না।’’

আশঙ্কার কথাও শোনাচ্ছেন অভিজিৎ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অসৎ উদ্দেশ্যে ভুয়ো পরিচয়ে যদি কেউ এই সব গ্রুপে ফাঁদ পাতে, তা হলে সেই দায়িত্ব কে নেবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Facebook Group Community Love
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE