Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Sovan Chatterjee

আবার গোসা বৈশাখীর, যাচ্ছেন না মিছিলে, নাজেহাল বিজেপি

সোমবারের র‌্যালির জন্য পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় বিপাকে বিজেপি। তবে বৈশাখীর গোসা নিয়ে বিজেপি বিব্রত শনিবার রাত থেকেই।

প্রস্তাবিত মিছিলে যাচ্ছেন না বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রস্তাবিত মিছিলে যাচ্ছেন না বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ ১২:১৭
Share: Save:

না আঁচালে বিশ্বাস নেই। সোমবারের বাইক র‌্যালি নিয়ে রবিবার এমনই মন্তব্য করেছিলেন শোভন-জায়া রত্না চট্টোপাধ্যায়। সোমবার শোভন-বৈশাখীর নির্ধারিত বাইক র‌্যালি শুরু হওয়ার আগে রত্নার আশঙ্কা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। শেষ পর্যন্ত বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানভঞ্জন করা যায়নি। প্রস্তাবিত মিছিলে যাচ্ছেন না বৈশাখী। তিনি তা প্রকাশ্যে জানিয়েও দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মিছিলে তিনি ‘আমন্ত্রিত’ নন। সূত্রের খবর, বৈশাখীর গোসার খেসারত দিতে হতে পারে রাজ্য বিজেপি-র এক যুবনেতাকে।

এমনিতেই সোমবারের র‌্যালির জন্য পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় বিপাকে বিজেপি। তবে বৈশাখীর গোসা নিয়ে বিজেপি বিব্রত শনিবার রাত থেকেই।

ঘটনার সূত্রপাত বিজেপি-র কলকাতা জোনের কমিটি ঘোষণা নিয়ে। ওই কমিটিতে পর্যবেক্ষক শোভন চট্টোপাধ্যায়। আহ্বায়ক রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন যুব সভাপতি দেবজিৎ সরকার। সহ-আহ্বায়ক পদে বৈশাখী। তবে বৈশাখীর পাশাপাশি যুব বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাকেও ওই কমিটির সহ-আহ্বায়ক করা হয়েছে। গত ২৭ ডিসেম্বর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ওই কমিটি ঘোষণা করেন। সেই সময়ে ব্যক্তিগত কারণে ভুবনেশ্বরে ছিলেন শোভন-বৈশাখী। কমিটি নিয়ে কোনও আপত্তিও শোনা যায়নি বৈশাখীর মুখে। কিন্তু রবিবার কলকাতায় পা রেখেই কমিটিতে একই পদে তিনি ও শঙ্কুদেব কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বৈশাখী। রবিবার রাতে শোভনের গোলপার্কের বাড়িতে এক বৈঠকে দেবজিৎ, রাকেশ, শঙ্কুদেবের উপস্থিতিতেই আপত্তির কথা জানান বৈশাখী। সূত্রের খবর, বৈশাখী তখন এমনও জানান যে, শঙ্কুদেব থাকলে তিনি সোমবারের র‌্যালিতে অংশ নেবেন না। শেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, এখনই কমিটি বদল না করা হলেও আপাতত ঠিক হয়েছে সোমবারের র‌্যালিতে অংশ নেবেন না শঙ্কুদেব। গরহাজির থাকতে পারেন দেবজিৎও। শঙ্কু-দেবজিতের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি। কিন্তু সোমবার সকালে জানিয়েছেন, বৈশাখী ওই মিছিলে যাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় শোভন মিছিলে যাবেন কি না, তা নিয়েও একটা ‘অনিশ্চয়তা’ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি যে ‘অস্বস্তিতে’ সেটা স্পষ্ট করেও দলের শীর্ষনেতৃত্ব এ নিয়ে আপাতত মুখ খুলতে নারাজ।

আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখীর বাইক ব়্যালি নিয়ে সংঘাতের আবহ, চ্যালেঞ্জ বিজেপির

আরও পড়ুন: কবে থেকে, কী ভাবে টিকা? নিতে পারবেন কারা? নানা প্রশ্নের উত্তর দিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক

রবিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে শোভন-জায়া রত্না বলেছিলেন, ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই। আগামিকাল (সোমবার) সকালে যখন ফ্ল্যাট থেকে নেমে বিজেপি-র কর্মসূচিতে যোগ দিতে গাড়িতে উঠবেন, তখন বুঝতে পারব উনি (শোভন) শুরু করলেন। অনেক নাটক তো এর আগে দেখেছি। এই হল না। ওই হল। পদ দিল না। আমাকে দিল, বৈশাখীকে দিল না। এভাবেই তো দেড় দু’বছর কেটে গেল। আগে সার্দান অযাভিনিউয়ের ন’তলার ফ্ল্যাট থেকে নেমে গাড়িতে উঠে উনি রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করুন! তারপর না হয় বিশ্বাস করা যাবে।’’ দেখা গেল, সেই আশঙ্কা সত্যি করে বৈশাখী সত্যিই মিছিলে যেতে অস্বীকার করলেন। রাজ্য বিজেপি নেতারা যে শোভন-বান্ধবীর আচরণে যে খুব খুশি নন, সেটা মুখে না বললেও একান্ত আলাপচারিতায় কেউ কেউ বুঝিয়ে দিয়েছেন। তেমনই এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এই সব ঘটনায় বিজেপি-র ক্ষতি তো হচ্ছেই। তবে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে শোভনদার।’’

বৈশাখীর গোসা নিয়ে অবশ্য অভ্যস্ত বিজেপি। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর ১৪ অগস্ট বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। তারপর রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতরে সংবর্ধনা নিতে গিয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে শোভনকে ডাকা হলেও ব্রাত্য ছিলেন বৈশাখী। তখনও গোসা হয় বৈশাখীর। ওই দিনই শোভন-বৈশাখীকে ‘ডাল-ভাত’ বলে বসেন দিলীপ ঘোষ। তাতে বিতর্ক আরও বাড়ে। রাজ্য বিজেপি-র বিজয়া সম্মিলনীতে আমন্ত্রণ নিয়েও গোসা হয়েছিল বৈশাখীর। গত ২২ নভেম্বর সল্টলেকে পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল রাজ্য বিজেপি। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য শোভনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিজেপি দফতর থেকে বৈশাখীর কাছেই না কি আমন্ত্রণের ফোন গিয়েছিল। ফোনে তাঁকে বলা হয়, রবিবারের অনুষ্ঠানে শোভনকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন রাজ্য সভাপতি। বৈশাখীকেও যেতে হবে, এমন কোনও কথা সে ফোনে বলা হয়নি বলেই দাবি করেন বৈশাখী। বান্ধবীর অপমানে অপমানিত বোধ করেন শোভনও। সে বারও মানভঞ্জনে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সক্রিয় হতে হয়। শেষে মান ভাঙাতে বৈশাখীকে ফোন করেন দিলীপ। সে বার ফোনালাপে এতটাই ‘উষ্ণ আবহ’' তৈরি হয়েছিল যে, দিলীপকে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণও জানান বৈশাখী। সেই ‘মধ্যাহ্নভোজ‌-সাক্ষাৎ’ এখনও হয়ে ওঠেনি। কিন্তু তার আগেই আরও এক প্রস্থ ‘গোসা’ সামলাতে হচ্ছে বিজেপি-কে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE