Advertisement
১১ মে ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

করোনার আতঙ্কে কনস্টেবলেরা, দুষ্কৃতী ধরবে কে

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, আনলক-১ পর্ব শুরু হওয়ার পরে শহরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা শুরু হয়েছে।

করোনা-আতঙ্কে কনস্টেবলের বদলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসারকেই ধৃতদের গাড়িতে তোলার কাজ করতে হচ্ছে।—প্রতীকী ছবি।

করোনা-আতঙ্কে কনস্টেবলের বদলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসারকেই ধৃতদের গাড়িতে তোলার কাজ করতে হচ্ছে।—প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৫:২৭
Share: Save:

সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। তালতলা থানা এলাকায় একটি মারধরের ঘটনায় ধৃতকে থানার লকআপ থেকে নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে। নিয়মমতো ধৃতদের গাড়িতে তোলার কাজটি করার কথা থানার কনস্টেবলের। কিন্তু করোনা-আতঙ্কে তা করতে রাজি হননি কনস্টেবল। ফলে সেই কাজ করতে হয় সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসারকেই। সপ্তাহখানেক আগে একটি খুনের ঘটনায় ধৃতকে থানার লকআপ থেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গিয়ে একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল কসবা থানার এক সাব-ইনস্পেক্টরকে।

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, আনলক-১ পর্ব শুরু হওয়ার পরে শহরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা শুরু হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে। কিন্তু করোনা-আতঙ্কেই তাদের আশপাশে ঘেঁষতে চাইছেন না শহরের বেশির ভাগ থানার কনস্টেবলেরা। তাই ধরা পড়লেও ধৃতদের কাছে যাবেন কে, এই প্রশ্নটাই এখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা পুলিশের কাছে।

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের ৭১টি থানার বেশির ভাগ কনস্টেবলই করোনার ভয়ে ত্রস্ত। শহরে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বেশ কিছু থানায় কনস্টেবলদের মধ্যে ছুটি নেওয়ার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। ফলে চাপ বাড়ছে আধিকারিকদের উপরে। দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সাবার্বান ডিভিশনের আওতায় থাকা এক থানার সাব-ইনস্পেক্টরের আক্ষেপ, ‘‘ধৃতকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা পর্যন্ত সম্পূর্ণ দায়িত্ব তদন্তকারী আধিকারিকের। কিন্তু দুষ্কৃতী ধরতে গিয়ে করোনার ভয়ে কনস্টেবলেরা পিছু হটছেন বলে আমাদেরই এগিয়ে যেতে হচ্ছে। অথচ আমাদেরও সংক্রমণের ভয় রয়েছে। রয়েছে চাকরির ভয়ও। দুষ্কৃতীকে ধরতে গিয়ে তাই কনস্টেবল এগিয়ে না-এলে মুশকিলে পড়ছি আমরাই।’’

আরও পড়ুন: বালক থেকে বৃদ্ধ, ২৪ ঘণ্টায় সাত অস্বাভাবিক মৃত্যু

কলকাতা পুলিশের পূর্ব ডিভিশনের এক থানার আধিকারিক জানাচ্ছেন, কয়েক দিন আগেই এক জায়গা থেকে গন্ডগোলের খবর পেয়ে কনস্টেবলকে ঘটনাস্থলে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণ দেখিয়ে তিনি প্রথমে সেখানে যেতেই চাননি। শেষে অনেক বুঝিয়ে তাঁকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।

করোনা নিয়ে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবলেরা যে তুলনায় বেশি আতঙ্কিত, সম্প্রতি পিটিএস ও সল্টলেকে সশস্ত্র বাহিনীর চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের সদর দফতরে কনস্টেবলদের বিক্ষোভেই তার প্রমাণ মিলেছিল। লালবাজারের এক কর্তা অবশ্য সাফ জানাচ্ছেন, পুলিশের চাকরিতে ভয় বরদাস্ত করা হবে না। ওই কর্তার কথায়, ‘‘দুষ্কৃতীদের স্পর্শ করার সময়ে কনস্টেবলদের প্রত্যেককেই মাস্ক পরতে হবে। সঙ্গে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার রাখতে হবে। যে কনস্টেবলেরা এই বিধি মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আরও পড়ুন: কোভিড পজ়িটিভ, শুনেই পালালেন রোগিণী

তবে করোনা আবহে কনস্টেবলদের রকমসকম দেখে রীতিমতো ভয়েই রয়েছেন শহরের উত্তর ডিভিশনের এক থানার এসআই। বলছেন, ‘‘দুষ্কৃতী ধরতে এই মাসেই ভিন্‌ রাজ্যে যাব। কিন্তু দুষ্কৃতীকে নাগালে পেয়েও যদি কনস্টেবল পিছু হটেন তখন কী করব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Kolkata Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE