Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Bhawanipur

করোনা: কলকাতার কোন অঞ্চলগুলো নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন

কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণার ক্ষেত্রে এলাকা চিহ্নিতকরণ ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভবানীপুর-সহ বিভিন্ন থানাকে।

হুঁশ ফিরছে না কারও।— ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

হুঁশ ফিরছে না কারও।— ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০ ০৩:২৫
Share: Save:

দক্ষিণে ভবানীপুর, আর উত্তরে বাগবাজার। করোনাভাইরাস সংক্রমণের নিরিখে আপাতত এই দুই এলাকাই সব চেয়ে বেশি উদ্বেগে রেখেছে পুলিশকে।

কন্টেনমেন্ট জ়োনের সংজ্ঞা পাল্টে যাওয়ায় কলকাতা পুলিশ এলাকায় তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮। এর মধ্যে ভবানীপুর থানা এলাকাতেই রয়েছে চারটি। একটি থানা এলাকায় এতগুলি কন্টেনমেন্ট জ়োন থাকায় চিন্তিত লালবাজার। একই ভাবে বাগবাজারে শুধু শ্যামপুকুর থানা এলাকাতেই রয়েছে দু’টি কন্টেনমেন্ট জ়োন।

কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণার ক্ষেত্রে এলাকা চিহ্নিতকরণ ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভবানীপুর-সহ বিভিন্ন থানাকে। বিশেষত, যাদের এলাকায় রয়েছে নতুন কন্টেনমেন্ট জ়োন। ভবানীপুরে কন্টেনমেন্ট জ়োন এত বেশি কেন, তা খতিয়ে দেখতে সোমবার সেখানে যান খোদ পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। ডিসি (সাউথ) মিরাজ খালিদ, থানার ওসি এবং ওই ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) মুরলীধর শর্মার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। কিছু কিছু পাড়ায় সংক্রমণ কেন বেশি ছড়াচ্ছে, সে সম্পর্কেও খোঁজ নেন তিনি। তাতে দেখা যায়, একটি কন্টেনমেন্ট জ়োনে আক্রান্ত বাসিন্দারা সকলেই সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন।

লালবাজার সূত্রের খবর, এর পরেই কমিশনার নির্দেশ দেন, কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলি ঠিক ভাবে চিহ্নিত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। সেই সঙ্গে ভবানীপুরের বাসিন্দারা অন্যান্য জায়গার তুলনায় কেন বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছেন, তা নিয়েও আলোচনা করেন পুলিশের আধিকারিকেরা। মার্চের শেষ থেকে জুন পর্যন্ত ১০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা আক্রান্ত হয়েছেন ভবানীপুরে। যার মধ্যে রয়েছেন পুলিশের এক আধিকারিকও। সেই কারণে ওই এলাকা নিয়ে চিন্তায় স্বাস্থ্য দফতর থেকে শুরু করে পুরসভার কর্তারা। ভবানীপুর আট নম্বর বরোর অধীন। ওই বরোর ন’টি এলাকা রয়েছে কন্টেনমেন্ট জ়োনে। এক পুলিশকর্তা জানালেন, ভবানীপুরে আক্রান্ত বাসিন্দাদের অধিকাংশই মেহতা বিল্ডিংয়ের ওষুধ ব্যবসায়ী। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বরোয় আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে মোট ২১০টি। যার মধ্যে বালিগঞ্জ, লেক, গড়িয়াহাট ও কালীঘাটের মতো এলাকাও রয়েছে।

এ দিন রাতে কমিশনার থানার ওসিদের এক বার্তায় নিজের নিজের এলাকার হটস্পটগুলি খতিয়ে দেখতে বলেছেন, যেগুলি কন্টেনমেন্ট জ়োনের আওতায় আনা যেতে পারে। এ নিয়ে কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে তাঁদের। পুরসভাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারগুলি জীবাণুমুক্ত করতেও বলা হয়েছে ওসিদের। রাতেই শোভাবাজার, হাতিবাগানের মতো বাজার সেই কাজ হয়। এ ছাড়া, ভবানীপুরে সংক্রমণ রুখতে পুলিশের তরফে যদুবাবুর বাজার ও পদ্মপুকুর-ল্যান্সডাউন বাজারের ব্যবসায়ীদের বসার উপরে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের এক দিন অন্তর বসতে বলা হয়েছে।

উত্তর কলকাতার বাগবাজারে রয়েছে দু’টি কন্টেনমেন্ট জ়োন। সেগুলি শ্যামপুকুর থানার অধীন। ওই দুই এলাকা নিয়েও চিন্তিত লালবাজার। সংক্রমণ যাতে আরও ছড়িয়ে না-পড়ে, তার জন্য পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সকলে যাতে মাস্ক পরেন এবং সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলেন, তা নিশ্চিত করতে এলাকায় মাইকে প্রচার চালাতে বলা হয়েছে। কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাতে ওই এলাকা থেকে কেউ বাইরে যেতে না পারেন। লকডাউনের প্রথম দিকেও কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে পুলিশকর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু ‘আনলক-১’ শুরু হতেই সেই সব কড়াকড়ি শিথিল হয়ে যায়। কিন্তু শহরে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ফের কড়াকড়ির পথেই হাঁটছে পুলিশ।

কমিশনার এ দিন প্রতিটি থানাকে বাজারে নিয়ন্ত্রণ জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যদুবাবুর বাজার, বাগড়ি মার্কেট, মেহতা বিল্ডিংয়ের মতো পুরনো যে সব বাজার রয়েছে, সেখানকার কমিটিগুলির সহযোগিতায় নজরদারি চালাতে হবে।’’ এ দিন এসএসডি ডিভিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকেও একই বার্তা দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৭ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত মহানগরে ১৮টি কন্টেনমেন্ট জ়োনের সঙ্গে আইসোলেশন ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৭২।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhawanipur Bagbazar Coronavirus in Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE