Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

অফিস আছে, বাস নেই, চরম ভোগান্তি-অনিশ্চয়তা রাস্তায় নামা মানুষের

এ দিন শহরের বহু জায়গায় সরকারি বাসের চালকদের সঙ্গে বচসা হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে বাড়ি ফিরতে মরিয়া মানুষদের।

ধর্মতলার কে সি দাস মোড়ে বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র

ধর্মতলার কে সি দাস মোড়ে বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ২০:৩৭
Share: Save:

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী অয়ন চট্টোপাধ্যায়। বাড়ি টবিন রোডে। অফিস থেকে বেরিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার উপর দাঁড়িয়ে ধর্মতলায় সিইএসসি ভবনের সামনে বাসের অপেক্ষায়। কোনও সরকারি বাসেই জায়গা নেই। একের পর এক বাস চলে যাচ্ছে।

অয়নের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সুরজ প্রসাদ। ডালহৌসির অফিসপাড়ায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। যাবেন টালিগঞ্জ। দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে। কোনও বাস নেই।

ছবিটা শুধু ধর্মতলার নয়। পার্ক স্ট্রিট, উল্টোডাঙা, সেক্টর ফাইভ, পার্ক সার্কাস কানেক্টর থেকে শুরু করে ইএম বাইপাসের ধারে বেশ কিছু জায়গায় একই ছবি বিকেল নামার পর থেকেই। সন্ধ্যা নামার পরেই ঝাঁপিয়ে নামল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাসের অপেক্ষায় বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া কয়েকশো মানুষ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অনেক মহিলাও। রাস্তায় বেরিয়ে অয়ন-সুরজের মতো চরম ভোগান্তির শিকার হলেন হাজার হাজার মানুষ। প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম সরকারি বাসের জন্য অনন্ত অপেক্ষায় মানুষ।

অয়নের কথায়, ‘‘আমাদের বাড়ি থেকে কাজ করার কোনও সুযোগ নেই। তাই অফিস আসতেই হয়। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম সাড়ে ৮টায়। প্রায় ৫০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে অনেক কষ্টে বেশি ভাড়া দিয়ে একটা ট্যাক্সি পেয়েছিলাম। ফেরার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কোনও ট্যাক্সিও পাচ্ছি না। সরকারি বাসে সব আসন ভর্তি। থামছেই না। কী ভাবে কখন বাড়ি যাব জানি না।” সুরজ প্রসাদ বলছিলেন, ‘‘আমি যে সামান্য টাকা মাইনে পাই, তাতে ট্যাক্সি চড়তে পারব না। অনেক দাঁড়িয়ে সকালে একটা সরকারি বাস পেয়েছিলাম। অনেক দেরিতে অফিস ঢুকতে পেরেছি। অফিস আসতেই হবে। না হলে চাকরি থাকবে না। এখন ফেরার জন্য তো কিছুই পাচ্ছি না!”

আরও পড়ুন: পকেটের টাকায় বাস চালাতে পারব না, অনড়ই রইলেন মালিকরা

একই অবস্থা বছর তিরিশের সঙ্গীতা শাসমলের। তিনিও একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। সোমবার থেকেই কড়া কর্তৃপক্ষ। সবাইকে অফিস আসতেই হবে। অফিস না এলে মাইনে কাটা হবে। চাকরিও যেতে পারে। একটা করে সরকারি বাস আসছে, উদ্বিগ্ন মুখে সঙ্গীতা বার বার ছুটে যাচ্ছেন বাসের দিকে। বাস দাঁড়াচ্ছে না। বার বার ফোন আসছে বাড়ি থেকে স্কুল পড়ুয়া ছেলের। তাকে ফোনে আশ্বাস দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই সঙ্গীতার হাতে। তিনিও জানেন না কখন বাড়ি পৌঁছবেন।

দেখুন ভিডিয়ো:

এক দিকে চাকরি, অন্য দিকে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা এবং ভোগান্তি, এই দুইয়ের মধ্যেই লড়ে যাচ্ছেন সঙ্গীতা, সুরজ অয়নের মতো হাজার হাজার মানুষ। রাজ্য পরিবহণ নিগমের দাবি, সোমবার সরকারি বাস চলেছিল ৩৬০টি। মঙ্গলবার সেই সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০০। কিন্তু সেই সংখ্যা বৃদ্ধি যে আদৌ মানুষের ভোগান্তি দূর করতে পারছে না, তা এ দিনের ছবিতেই স্পষ্ট। অল্প কয়েকটি রুটে বেসরকারি বাস চালু হয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, বেসরকারি বাসগুলো ইচ্ছে মতো বাস চালাচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ বন্ধ করে দিচ্ছে পরিষেবা। এখনও ভরসা করা যাচ্ছে না রাস্তায় নামা সামান্য কয়েকটা বেসরকারি বাসকে। অন্য দিকে, বেসরকারি বাস রাস্তায় নামা নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি। সরকারের সঙ্গে বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠনের বৈঠকে সমাধান সূত্র এখনও অধরা।

আরও পড়ুন: কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি

এ দিন শহরের বহু জায়গায় সরকারি বাসের চালকদের সঙ্গে বচসা হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে বাড়ি ফিরতে মরিয়া মানুষদের। কারণ এ দিন সরকারি নির্দেশে খুব কড়া ভাবে সরকারি বাসগুলো আসন সংখ্যার বেশি এক জনও যাত্রী নিচ্ছে না। ফলে টার্মিনাস থেকেই বাস ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা থেকে যাত্রীরা উঠতে পারছেন না। জোর করে বাসে উঠতে গেলেই চালকরা বাস থামিয়ে দিচ্ছেন।

সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অবস্থা সামলাতে আসরে নামে পুলিশ। তারা রাস্তায় থাকা বিভিন্ন ফাঁকা বেসরকারি বাসকে প্রায় জোর করে থামিয়ে কিছু গন্তব্যে যাত্রী তুলে দেন। ‘সি’ রুটের বাস চলে হাওড়া ময়দান-পার্ক স্ট্রিট রুটে। কেসি দাস মোড়ে ‘সি’ রুটের একটি ফাঁকা বাস যাচ্ছিল পার্ক স্ট্রিটের দিকে। পুলিশ বাস উল্টো দিকে ঘুরিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে নিয়ে আসে। চালককে বলা হয় আসনের সম সংখ্যক যাত্রীকে ডানলপ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। এ রকম কয়েকটা বাস ধরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশ কর্মীরা। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘এ ভাবে রোজ রোজ ব্যবস্থা করা অসম্ভব।” তাঁর চোখেও অনিশ্চয়তার ছায়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronaivurs Lockdown Coronavirus in West Bengal Bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE