Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Prohibited Crackers

সরকারি বাজার অনিশ্চিত, নিষিদ্ধ বাজির রমরমার শঙ্কা

পুলিশের পাশাপাশি পথে নেমে নজরদারি চালাতে হয় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিশেষ দলকেও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০৩:১৯
Share: Save:

যত্রতত্র বিক্রি হওয়া নিষিদ্ধ শব্দবাজির উপদ্রবেই কি কাটবে এ বারের কালীপুজো এবং দীপাবলি? করোনার জেরে উৎসবের মরসুমে পুলিশ শব্দবাজি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারায় এখন এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। প্রতি বার যেখানে দুর্গাপুজোর আগেই বাজি পরীক্ষা হয়ে যায় কলকাতায়, সেখানে বাজি বাজার এ বার হবে কি না, সেই সিদ্ধান্তটাই এখনও নিয়ে উঠতে পারেনি পুলিশ!

এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই প্রশ্ন, বিনা পরীক্ষায় কোনও বাজি বিক্রি শুরু হলে শব্দ এবং বায়ুদূষণের পাশাপাশি হঠাৎ ফেটে গিয়ে সেগুলি বিপদ ঘটাবে না তো? গত বছরই কালীপুজোর রাতে তুবড়ি ফেটে বেহালায় আদি দাস নামে বছর পাঁচেকের একটি শিশুর এবং কসবায় দীপককুমার কোলে নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল।

কোনও সামগ্রী যাতে অবৈধ ভাবে বিক্রি করা না যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই ধরনের বাজারের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমতি নেওয়াটা বাধ্যতামূলক। কলকাতার ক্ষেত্রে এই অনুমতি দেয় কলকাতা পুরসভা। প্রতি বছর এই উদ্দেশ্যেই বাজি বাজারের আয়োজন করা হয়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এ বার বাজারই যদি না বসে, তা হলে অসাধু বিক্রেতাদের আটকানো যাবে কী ভাবে?

পুলিশ সূত্রের খবর, টালা, শহিদ মিনার, বেহালা, বিজয়গড় ও কালিকাপুর— কলকাতায় এই পাঁচটি জায়গায় সরকার অনুমোদিত বাজি বাজার বসে। তার জন্য দুর্গাপুজোর আগেই বাজি পরীক্ষার ব্যবস্থা করে পুলিশ। গত কয়েক বছর ধরে সেই পরীক্ষা হচ্ছিল টালা পার্কে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) ছাড়াও সেখানে দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকেরা থাকেন। এক-একটি করে বাজি ফাটিয়ে দেখা হয়, সেগুলি শীর্ষ আদালতের বেঁধে দেওয়া শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেলের নীচে রয়েছে কি না। শব্দ সেই মাত্রা ছাড়ালেই সংশ্লিষ্ট বাজিটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। গত বছর পর্যন্ত ১২৮টি বাজিকে এই ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর সেই পরীক্ষাই হয়নি।

‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সম্পাদক তথা আইনজীবী শুভঙ্কর মান্না বললেন, ‘‘বাজি পরীক্ষা বা বাজি বাজার বন্ধ থাকলে শুধু নিষিদ্ধ বাজি বিক্রিই নয়, অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে নিজের দোকান বা বাড়ি থেকে বাজি বিক্রি করতে পারেন। বড়বাজারের বহু ব্যবসায়ীরই ১৫০ কিলোগ্রাম বাজি বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে। ওই রকম ঘিঞ্জি জায়গায় অত পরিমাণ বাজি মজুত করে বিক্রি করা কতটা বিপজ্জনক, ভাবুন! এই বিপদ বুঝেই দমকল ব্যক্তিগত ভাবে বাজি মজুত করে বিক্রির ছাড়পত্র দেয়নি এত দিন।’’

দমকল বা পুলিশের নজরদারিতে বাজি বাজার বসলেও প্রতি বারই উৎসবের মরসুমে বাজির এমন দাপট দেখা যায় যে, পুলিশের পাশাপাশি পথে নেমে নজরদারি চালাতে হয় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিশেষ দলকেও। এ বারও কি সেই পথ আরও প্রশস্ত হচ্ছে? রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের মন্তব্য, ‘‘অনুমান করে বলা খুব শক্ত। প্রতি বারের মতো আমাদের নজরদারি দল তৈরি থাকবে, এটুকু বলতে পারি।’’

টালার যে পার্কে বাজি পরীক্ষা হয় বা বাজি বাজার বসে, সেটি কলকাতা পুরসভার। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘মেলা বা কার্নিভাল করার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে বাজি বাজারকে মেলা হিসেবে না ধরে এর প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে কিছু করা যায় কি না, ভাবা হচ্ছে।’’ কিন্তু কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) সুখেন্দু হীরা স্পষ্টই বললেন, ‘‘এখনও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। বাজার না বসলে পুলিশকে সত্যিই বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে নিষিদ্ধ বাজির পিছনে ছুটতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja 2020 Prohibited Crackers Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE