Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মারছে দেখেও পুলিশের কেউ বাঁচাতে এলেন না

ত্রিপুরার আগরতলায় বাড়ি আমাদের। ভাই, বাবা, মা সেখানেই থাকেন।

শুভাশিস দাস

শুভাশিস দাস

শুভাশিস দাস  (চিত্র পরিচালক)
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২২
Share: Save:

গ্রাম হোক বা শহর, লোককে পিটিয়ে মেরে ফেলার অনেক খবর ইদানীং শুনি। বৃহস্পতিবার তেমনই কিছু একটা যে আমার সঙ্গেও ঘটতে পারে, তা ভাবতে পারিনি। হাতে স্রেফ ভিডিয়ো ক্যামেরা দেখে আর আমি যাদবপুরেরই পড়ুয়া ভেবে টেনেহিঁচড়ে আমায় নিয়ে গিয়েছিল কয়েক জন। তাদের মাথায় গেরুয়া ফেট্টি, মুখে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান। ক্যামেরা আছড়ে ভাঙার পাশাপাশি আমাকে এমন মেরেছে যে মাথায় পাঁচটা সেলাই পড়েছে। কোনও মতে পালিয়ে আসতে না পারলে কী ঘটতে পারত, তাই ভাবছি!

ত্রিপুরার আগরতলায় বাড়ি আমাদের। ভাই, বাবা, মা সেখানেই থাকেন। দিল্লি থেকে এমবিএ পাশ করে কলকাতায় চলে আসি। কিছু দিন কাজ করার পরে ২০১৬ থেকে নিজের মতো কিছু করব বলে ঠিক করি। এখন স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি বানাই। ইউটিউবে আমার একটি চ্যানেল আছে। সেই চ্যানেলের জন্যই ভিডিয়ো তুলতে বৃহস্পতিবার যাদবপুরে গিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সামনে সেখানকার ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখাবেন বলে আগাম খবর পেয়েছিলাম।

দুপুর দুটো নাগাদ মন্ত্রী আসার আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যাই। বাবুল আসার পরে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ, রাজ্যপালের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-সহ সব ঘটনাই ভিডিয়ো করি। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের দিক থেকে পড়ুয়াদের ছুটে আসতে দেখা যায়। ওই গেটে পৌঁছে দেখি, দলে দলে বাঁশ, লাঠি, লোহার রড হাতে লোক ঢুকছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। গেটের বাইরে দাঁড় করানো সাইকেল, বাইকও জ্বালিয়ে দেয় তারা। প্রথমে গেটের ভিতর থেকেই ভিডিয়ো করছিলাম। তার পরে মনে হল, বাইরে গিয়ে করলে আরও ভাল ছবি পাব। সেখানে যেতেই ওদের কয়েক জন ঘিরে ধরল আমাকে। একটা ছেলে বলতে শুরু করল আমি নাকি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। হাতের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করল। বারবার বললাম, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নই, ভিডিয়ো তুলছি শুধু। শুনল না। রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারতে শুরু করল আমাকে।

সামনে তখন প্রচুর পুলিশ দাঁড়িয়ে। আমাকে এ ভাবে মারছে দেখেও পুলিশের কেউ বাঁচাতে এলেন না! একবার পুলিশের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। ফের টেনে নিয়ে গিয়ে মারতে শুরু করল বাইরে থেকে আসা ওই লোকেদের কয়েক জন। এর পরে কোনও মতে পালিয়ে বাঁচি। রাতেই কাছের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান যাদবপুরের ছেলেমেয়েরা। মাথায় পাঁচটা সেলাই পড়েছে। রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরতে পারি। সকালে বাড়িতে ফোন করে বাবাকে জানিয়েছি। মাকে বলতে বারণ করেছি, চিন্তা করবে। তবে একটা প্রশ্ন মনে ঘুরছে, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে কাউকে যদি এ ভাবে মার খেতে হয়, তা হলে শহরের নানা জায়গায় বা গ্রামে গণপিটুনির সময়ে কী হয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE