Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

৭ মাসের মেয়েকে চোবানো হয়েছিল বালতির জলে

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে নানা ভাবে অত্যাচার চালানো হত অসীমার উপরে।

মা-হারা: দিদিমার সঙ্গে সেই শিশু। মঙ্গলবার, মানিকতলায়। নিজস্ব চিত্র

মা-হারা: দিদিমার সঙ্গে সেই শিশু। মঙ্গলবার, মানিকতলায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৬
Share: Save:

ছেলের তিন বছরের বিয়ে ভেঙে নতুন করে বিয়ে দিতে চাইছিল মানিকতলার শ্রীকৃষ্ণ কলোনির বাসিন্দা শ্যামলী রায়। সে জন্য পাত্রীও দেখা শুরু হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার পুত্রবধূ অসীমা রায়ের (২৩) অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে শ্যামলী তার সাত মাসের নাতনিকেও সরিয়ে দিতে চেয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। মানিকতলা থানা সূত্রের খবর, রবিবার আশপাশের বাসিন্দারা শ্যামলীর ঘরে গিয়ে দেখেন, অসীমার নিথর দেহ বিছানায় পড়ে রয়েছে। প্রতিবেশীরাই এর পরে একটি বালতির ভিতর থেকে অসীমার সাত মাসের মেয়েকে উদ্ধার করেন।

বালতির জলে ভিজে সংজ্ঞাহীন ওই শিশুকন্যাকে এর পরে হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে পুলিশ এবং অসীমার প্রতিবেশীদের দাবি। পরে হাসপাতাল থেকে তাকে দিদা সন্ধ্যা প্রামাণিকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন মাঝেমধ্যেই জ্বর আসছে সেই শিশুর। ফুলে রয়েছে মাথার কিছুটা অংশও। সন্ধ্যা যে বস্তিতে থাকেন, সেখানকার বাসিন্দারাই এখন দিনভর দেখভাল করছেন শিশুটিকে। তবে জ্বর এলে তাকে সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ দিন ওই বস্তিতে গেলে অসীমার আত্মীয় অপর্ণা মাঝি বলেন, ‘‘আমাদের মেয়েটাকে খুন করেছে। বাচ্চাটাকেও একটা বালতিতে ঢুকিয়ে রেখেছিল। আমরা না দেখলে হয়তো সেটার মধ্যেই মরে থাকত। পরে কোথাও ফেলে দিত। এদের কড়া শাস্তি চাই!’’

রবিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ মানিকতলা থানা এলাকার শ্রীকৃষ্ণ কলোনির শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হয় অসীমার মৃতদেহ। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠায়। তরুণীর গলায় দাগ দেখে এবং‌ তরুণীর বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা শুরু করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় তরুণীর স্বামী বিশ্বজিৎ রায় এবং শাশুড়ি শ্যামলী রায়কে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারীরা। শিয়ালদহ আদালত তাদের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। রবিবার বিকেলে প্রতিবেশীরাই বিশ্বজিৎ এবং শ্যামলীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ভাঙচুর করা হয় বিশ্বজিৎদের ঘরে। বাদল জানা নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘ওদের ঘরের ভিতরে একটি বালতির মধ্যে বাচ্চাটা ছিল। তা দেখেই প্রতিবেশীরা আরও মারমুখী হয়ে পড়েন।’’

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে নানা ভাবে অত্যাচার চালানো হত অসীমার উপরে। অভিযোগ, মেয়ে হওয়ার পরে সেই অত্যাচার আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। কয়েক মাস আগে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অসীমা বাপের বাড়ি চলে যান। তবে বিশ্বজিৎ ফের বিয়ে করতে চায় জানতে পেরে মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে দিয়ে আসেন অসীমার বাবা, পেশায় ভ্যানচালক গৌতম প্রামাণিক।

এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘‘পাশাপাশি পাড়া আমাদের। জামাই লেদ কারখানার কর্মী। তবু মেয়েকে ভাল রাখবে ভেবে বিয়ে দিয়েছিলাম। ও আবার বিয়ে করবে শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে বিয়ে করলে করত, ও ভাবে মেয়েটাকে ওখানে দিয়ে আসা আমার উচিত হয়নি।’’ অসীমার মা সন্ধ্যা এ দিনও মাঝেমধ্যেই সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। নাতনিকে কোলে আঁকড়ে ধরে বলেন, ‘‘মেয়ে এসে গায়ে মারধরের চিহ্ন দেখাত। ওর কেন মেয়ে হয়েছে, এ জন্য স্বামী-শাশুড়ি মারধর করত। আমরা ওদের কোনও দাবি পূরণ করতে বাকি রাখিনি। তবু ওরা মেরে ফেলল আমার মেয়েটাকে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Maniktala Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE