পুলিশের ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা এবিভিপির সমর্থকদের। ছবি: পিটিআই।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে হেনস্থার প্রতিবাদে সোমবার গোলপার্ক থেকে সেলিমপুর পর্যন্ত মিছিল করল এবিভিপি। মিছিল অবশ্য যাওয়ার কথা ছিল যাদবপুর পর্যন্ত। কিন্তু পুলিশ সেলিমপুরে ব্যারিকেড করায় সেখানেই মিছিল আটকে পড়ে। সেখান থেকে ঢিল, বোতল এবং ঝান্ডার লাঠি উড়ে যায় ব্যারিকেডের অপর প্রান্তে দাঁড়ানো পুলিশের দিকে। কয়েক জন বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ডিঙিয়ে ও পারে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের বাধায় তাঁদের চেষ্টা সফল হয়নি। পুলিশের জলকামান তৈরি থাকলেও তা ব্যবহার করার দরকার পড়েনি। পুলিশের তরফ থেকে মাইকে প্রচার করা হয়, মিছিল আর এগোতে দেওয়া হবে না। কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেন। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় বসে পড়ে কিছু ক্ষণ বিক্ষোভ সভা করেন এবিভিপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সপ্তর্ষি সরকার বলেন, ‘‘যাদবপুরে বৃহস্পতিবার বামপন্থীরা বাবুল সুপ্রিয়কে হেনস্থা করেছে, আমাদের কর্মীদের মেরেছে। আমরা ২০ জনকে চিহ্নিত করেছি। তারা মাওবাদী, নকশাল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে আমরা ওই ২০ জনের নামের তালিকা পাঠাব।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য যাদবপুরের বৃহস্পতিবারের ঘটনায় বিজেপির দোষই দেখতে পাচ্ছেন। নেতাজি ইন্ডোরের শ্রমিক সমাবেশে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সব জায়গায় গায়ের জোরে সব কিছু করতে চাইছে বিজেপি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কী করল! আচরণটা দেখলেন! বাংলায় গণতন্ত্র থাকলেও দেশের অনেক জায়গায় নেই। সব কিছু গায়ের জোরে করতে চাইছে। কী আচরণ করছে দেখছেন তো? গায়ের জোরে কিছু দিন কিছু মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখা যায়। সব মানুষকে নয়।’’
এ দিন এবিভিপির মিছিলে পড়ুয়া ছাড়াও বিজেপি এবং তাদের যুব মোর্চার অনেক মুখও দেখা গিয়েছে। যেমন— যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকার, বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের দাদা শান্তনু সিংহ, ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড, যাদবপুর এলাকা-সহ বিভিন্ন জায়গার দলীয় কর্মী। এবিভিপি-র মিছিল যে হেতু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল, তাই সেখানকার চার নম্বর গেটে আগে থেকেই মানব-শৃঙ্খল তৈরি করে রেখেছিলেন শিক্ষক, পড়ুয়া, শিক্ষাকর্মীরা। একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন শিক্ষকেরা। ওই মানব-শৃঙ্খলে তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্যদেরও দেখা গিয়েছে। চার নম্বর গেটে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য, রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। সহ উপাচার্য জানান, গত বৃহস্পতিবারের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা নিয়ে তাঁরা খুবই চিন্তিত। ওই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই তাঁরা গেটে রয়েছেন।
যাদবপুর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমও এ দিন ফের আক্রমণ করেছেন গেরুয়া শিবিরকে। দুর্গাপুরে সেলিম বলেন, ‘‘শুনলাম আরএসএস, সঙ্ঘ পরিবার যাদবপুরে যাচ্ছে। সেখানে ঢোকার যোগ্যতা অর্জনের জন্য ওদের আরও চারটে জন্ম নিতে হবে। বাবুল সুপ্রিয় যাদবপুরে গিয়ে ছেলেমেয়ের বয়সী পড়ুয়াদের পায়ে পা লাগিয়ে জোর করে ঝগড়া করছেন। সে দিন সারা বিশ্বের পড়ুয়ারা জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। আর সেই দফতরের মন্ত্রী হয়ে তিনি ওই বিষয়ে একটি কথাও বলেননি।’’
কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘শিক্ষাঙ্গনের কোনও অনুষ্ঠানে বাইরের কাউকে আনতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিতে হবে— এই নিয়ম চালু করা দরকার। ছাত্রদের মধ্যে মতবিরোধ, বিবাদ চিরকাল থাকে। গণতান্ত্রিক উপায়েই তার মীমাংসা হওয়া উচিত। ঘোরালো রাজনীতির অনুপ্রবেশে হিংসা বাড়ছে। তা বন্ধ হওয়া দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy