Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাত দিন ধরে মর্গে পড়ে বৃদ্ধের দেহ

হাঁপানির রোগী নবীনবাবু গত ২৪ মে থেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। বৃদ্ধের ছেলে গোবিন্দ অধিকারী বাবাকে নিয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালে যান। উপসর্গ শুনে চিকিৎসকেরা ব্যারাকপুরের লালকুঠিতে অবস্থিত কোভিড হাসপাতালে (লেভেল ১-২) বৃদ্ধকে আইসোলেশনে রেখে প্রথমে করোনা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করতে বাবাকে নিয়ে সেখানে যান ছেলে। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২০ ০৬:২৭
Share: Save:

আশি বছরের বৃদ্ধ দিন সাতেক আগে প্রয়াত হয়েছেন। কোভিড-নন কোভিডের টানাপড়েনে সরকারি হাসপাতালের খাতায় দত্তপুকুরের বাসিন্দা নবীনসুন্দর অধিকারীর পরিচয় এখন করোনা সন্দেহভাজন। গত এক সপ্তাহ ধরে সেই পরিচয় নিয়েই এনআরএসের মর্গে প্লাস্টিকবন্দি হয়ে রয়েছে বৃদ্ধের দেহ। মৃতের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না আসায় এখনও দেহ পাননি পরিজনেরা।

হাঁপানির রোগী নবীনবাবু গত ২৪ মে থেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। বৃদ্ধের ছেলে গোবিন্দ অধিকারী বাবাকে নিয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালে যান। উপসর্গ শুনে চিকিৎসকেরা ব্যারাকপুরের লালকুঠিতে অবস্থিত কোভিড হাসপাতালে (লেভেল ১-২) বৃদ্ধকে আইসোলেশনে রেখে প্রথমে করোনা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করতে বাবাকে নিয়ে সেখানে যান ছেলে।

গোবিন্দবাবুর কথায়, ‘‘করোনা পরীক্ষা করাতে এসেছি বলে রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামানোর সময়ে কারও সাহায্য পাইনি। প্রায় চ্যাংদোলা করে বাবাকে নামিয়ে হুইলচেয়ারে ওয়ার্ডে নিয়ে গেলাম। করোনা নিয়ে সামাজিক ভীতি-আশঙ্কার সঙ্গে সেই প্রথম পরিচয় হল।’’ কুড়ি দিন পরেও পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়নি মৃতের পরিবার।

গত ২৫ মে নমুনা সংগ্রহ হয় বৃদ্ধের। পরের দিন রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। মৃতের পরিবার আশা করেছিল করোনা সন্দেহভাজনের তকমা হয়তো মিটল। কিন্তু তা ঘটেনি। নেগেটিভের শংসাপত্র নিয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালে গেলে এনআরএসে রোগীকে স্থানান্তরিত করতে বলা হয়। গোবিন্দের অভিযোগ, ২৬ মে গভীর রাতে জরুরি বিভাগে গেলে ফের করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য বলেন সেখানকার চিকিৎসকেরা। তাঁর দাবি, ‘‘বেসরকারি ল্যাবরেটরির নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে ওঁদের আস্থা ছিল না। বলছিলেন, আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে হাসপাতালের ল্যাবে আবার পরীক্ষা করতে হবে।’’ তাতে সায় ছিল না বৃদ্ধের পরিবারের। শেষ পর্যন্ত জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে রোগীকে তিন দিন রেখে শনিবার রাতে বৃদ্ধকে মেডিসিন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করানো হয়। সেখানেই ৬ জুন রাতে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: দুই করোনা আক্রান্তের শরীরে প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ এ বার কলকাতায়

আরও পড়ুন: ২০০ ‘সেফ-হোমে’ ১০ হাজার শ্রমিককে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত

সেই থেকে বাবার দেহ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন ছেলে। তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুর তিন দিন পরে রিপোর্টের খোঁজ করতে বলা হয়েছিল। মঙ্গলবার রিপোর্টের খোঁজে এনআরএসে গেলে বলছে, এত ব্যস্ত হতে হবে না। বাবার দেহ মর্গে পড়ে। এই কষ্ট কাকে বোঝাব?’’

প্রথম দিন বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য শত চেষ্টাতেও অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে পারেননি। শেষে মোটরবাইকে দু’জনের মাঝে বাবাকে চাপিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন গোবিন্দ। ছেলের বক্তব্য, এক বার করোনা পরীক্ষা হওয়ার পরে সন্দেহের দৃষ্টি যে সহজে বদলায় না এই ক’দিন সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।

কালো প্লাস্টিকে বন্দি বৃদ্ধের পরিচয় এখন সিরিয়াল নম্বর ২৬৪৩৪! অথচ বৃদ্ধের মৃত্যুর ঠিক এক দিন আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি নির্দেশিকায় এ ভাবে কালো রঙের প্লাস্টিকে আপাদমস্তক মুড়ে দেহ রাখা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে যাতে দেরি না হয় সে জন্য পাঁচ সদস্যের একটি সেল গঠন করে বুধবার আরও একটি নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য ভবন। তা ছাড়া এনআরএসে এখন নিজস্ব আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে। এর পরেও দেহ পেতে রোগীর পরিজনেদের দীর্ঘ অপেক্ষার কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, ট্রু-ন্যাটে মৃতের নমুনা পরীক্ষা করার পরে যে রিপোর্ট ওয়ার্ডে পৌঁছনোর কথা তা কোনও কারণে না আসায় এই দেরি।

এনআরএসের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেন বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ১০ জুন মৃতের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এসে গিয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ। কিন্তু কেন মৃতের পরিজন এখনও দেহ পাননি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ আজ, শনিবার রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানান শান্তনুবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dead body coronavirus old man
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE