হাল-হকিকত: (উপরে) সাঁপুইপাড়ায় বিদ্যুতের দাবিতে পথ অবরোধে শামিল স্থানীয় বাসিন্দারা। (নীচে বাঁ দিকে) ঘূর্ণিঝড়ের চার দিন পরে বিদ্যুতের লাইন সারানোর কাজ চলছে গরফা এলাকায়। ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে সে দিকেই নজর এক বাসিন্দার। (ডান দিকে) কসবা এলাকায় রাস্তার উপরে ভেঙে পড়া গাছ কেটে সরাচ্ছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা। রবিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
ঝড়ের চার দিন পরেও অন্ধকার ঘুচল না শহরের বহু বাসিন্দার বাড়িতে। প্রায় ৯৬ ঘণ্টা নির্জলা থাকার পরেও মিটল না জলের হাহাকার। শুক্র, শনির পরে রবিবারও তার জেরে পথে নেমে অবরোধ-বিক্ষোভে শামিল হলেন অনেকে। কেউ সকাল থেকে রাস্তা আটকে রেখে সদ্য দেখা পাওয়া সিইএসসির গাড়ি জোর করে ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেন নিজের পাড়ার দিকে। কেউ আবার অসুস্থ বাবার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে শেষে গিয়ে হাজির হলেন খোদ তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে।
নাকতলার বাসিন্দা সূর্যশিখা দাস নামে ওই মহিলার কথায়, ‘‘বিদ্যুতের জন্য আর কত অপেক্ষা করব? বাবার অক্সিজেন, নেবুলাইজ়ারের দরকার। কোনও পথ না দেখে এ দিন পার্থবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। উনি দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করবেন বলে কথা দিয়েছেন।’’ সন্ধ্যায় কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমও বলেছেন, ‘‘সার্বিক ভাবে সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে। সিইএসসি জানিয়েছে, ৫০ শতাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ ফিরেছে।’’ সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিস্ট্রিবিউশন) অভিজিৎ ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘৯২ শতাংশ জায়গায় পরিষেবা ইতিমধ্যেই স্বাভাবিক হয়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাকি জায়গাগুলিতে পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।’’
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুর-প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে গত কয়েক দিনে এই ধরনের আশ্বাস একাধিক বার দেওয়া সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। জোকা ডায়মন্ড পার্ক এলাকায় রাস্তা আটকে বসে থাকা যুবক সুমন সাহা বলেন, ‘‘আর ধৈর্য ধরতে পারছি না। এত আগে থেকে ঝড়ের কথা জানা সত্ত্বেও বিপর্যয় মোকাবিলায় এত দেরি! বিক্ষোভের পরেও দেখছি, হুঁশ নেই। কোথাও সিইএসসি-র লোক পৌঁছলে পুরসভার লোক দেরিতে আসছেন। আবার কোথাও ঠিক উল্টোটা হচ্ছে। এখনও সমন্বয়ের এত অভাব?’’ জোকাতেই শনিবার অবরোধে আটকে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কাকদ্বীপে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যেতে পারেননি।
আরও পড়ুন: দিনে চার ঘণ্টা দু’চাকায় যাত্রা তিন প্রৌঢ় পুলিশকর্মীর
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাত পর্যন্ত শহরের মোট ২২টি জায়গায় অবরোধ-বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে নাকতলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরেনি জানিয়ে পথে নামেন সেখানকার বাসিন্দারা। একই ভাবে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টরের একটি অংশ অবরোধ করেন স্থানীয় সাঁপুইপাড়া এবং মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দারা। জেমস লং সরণি, বি এল শাহ রোড, বুড়োশিবতলা ক্রসিং, রিজেন্ট পার্ক, বেহালা ৩৪ নম্বর এয়ারপোর্ট রোড, বিজয়গড় হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার অবরোধ সামলাতে গিয়ে রীতিমতো কালঘাম ছোটে পুলিশের।
সিইএসসি, পুরসভার কর্মীরা গেলেও তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ শুরু হয় কসবার জি এস বসু রোড, গরফা মেন রোডের একাংশে। এ দিন বিক্ষোভ হয় পর্ণশ্রী থানার সামনেও। রাতের দিকে পথ অবরোধ হয় ই এম বাইপাসের অজয়নগর মোড়ে।
কসবা রথতলার বাসিন্দাদের আবার অভিযোগ, বিক্ষোভস্থল থেকে এ দিন দুপুরে তাঁরা কসবা থানায় গেলে পুলিশ জানিয়ে দেয় থানাতেও বিদ্যুৎ নেই। পূর্ব পুঁটিয়ারির চাকদার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের এলাকায় ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তার কেটে নিয়ে যায় কয়েক জন যুবক। পরে সেই তার ঠিক করে বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরানো হয়। অভিযোগ, ওই কাজের জন্য কয়েক জন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে টাকা দাবি করেন। কিন্তু বাসিন্দারা তা দিতে অস্বীকার করলে ওই যুবকেরা চলে যান।
গরফা থানার শহিদনগর এলাকায় আবার সিইএসসি-র গাড়ি পৌঁছলে কোন ওয়ার্ডে আগে কাজ হবে, তা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর তথা সিপিআই নেত্রী মধুছন্দা দেবের দাবি, ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক জন তাঁকে গালিগালাজ করেছেন। সিইএসসি-কে আগে তাঁদের ওয়ার্ডে কাজ করতে বাধ্য করেছেন। ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর তথা তৃণমূল নেতা তরুণ মণ্ডল যদিও বলেছেন, ‘‘৯২ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর এই পরিস্থিতিতেও রাজনীতি করছেন।’’
উত্তর কলকাতায় পথ আটকে বিক্ষোভের খবর না মিললেও বেশ কিছু এলাকা রাত পর্যন্ত অন্ধকারেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা। মানিকতলার তেমনই একটি এলাকার বাসিন্দা বছর সত্তরের স্নেহা ঘোষ বললেন, ‘‘আমার স্বামীর বয়স ৭৭। তিনি শয্যাশায়ী। আলোহীন ঘরে জলও নেই। কিন্তু কাকে বলব? এই সময়ে রাজনীতি ভুলে আমাদের সমস্যাটা একটু বুঝলে ভাল হয়।’’
আরও পড়ুন: আমপানের ধাক্কায় আরও সঙ্কটে কুমোরটুলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy