E-Paper

বিস্মৃতি থেকে আলোয় তুলে আনার প্রয়াস

বইয়ের শেষে মুদ্রিত হয়েছে ‘পুত্রযজ্ঞ’ গল্পটি, যে ‘রবীন্দ্রগল্প’-এর সূচনা-ইতিহাসের সঙ্গেও জড়িয়ে ছিলেন সমরেন্দ্রনাথ।

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ০৭:৩২
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। —ফাইল চিত্র।

তাঁর দুই সহোদর, গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বনামধন্য শিল্পী, কিন্তু মধ্যম ভ্রাতা সমরেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় অনালোচিত, এবং এ যুগে বিস্মৃতপ্রায়। অথচ রবীন্দ্রনাথের এই ভ্রাতুষ্পুত্রটি ছিলেন নানা গুণে গুণান্বিত: জমিদারি বা সাংসারিক-পারিবারিক বিষয়কর্ম পরিচালনায় মনোযোগী; বাগান পরিচর্যা থেকে সাহিত্যচর্চা, নাট্যাভিনয়, এমনকি চিত্রকলাতেও তাঁর পরিমিত কিন্তু সুস্থিত অংশগ্রহণের নানা নমুনা ছড়িয়ে আছে রবীন্দ্রবৃত্ত ও তার বাইরেরও বহুজনের লেখালিখি, স্মৃতিচারণায়। সেই সব ব্যক্তি, গ্রন্থ, পত্রপত্রিকা-সহ নানা সূত্র ধরে এই বইটি লিখেছেন শুভজিৎ সরকার। রবীন্দ্রনাথের মতোই দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন সমরেন্দ্রনাথ, দেখেছেন জোড়াসাঁকোর নানা ওঠাপড়া: জমিদারির পাটে বসা, ‘দক্ষিণের বারান্দা’ওয়ালা বিখ্যাত ৫ নম্বর বাড়ির বিক্রি হয়ে যাওয়া, পেয়েছেন দুই পুত্রের মৃত্যুশোক। প্রকৃত গবেষকের এষণায় সমরেন্দ্রনাথের জীবনের একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস রয়েছে বইটিতে, তথ্য-উপাত্ত যেখানে যেটুকু মেলে তা গেঁথে পাঠককে আগ্রহী করে তোলার কাজটি সফল, বলতে হবে। বইয়ের শেষে মুদ্রিত হয়েছে ‘পুত্রযজ্ঞ’ গল্পটি, যে ‘রবীন্দ্রগল্প’-এর সূচনা-ইতিহাসের সঙ্গেও জড়িয়ে ছিলেন সমরেন্দ্রনাথ। ছাপা হয়েছে বেশ কিছু ছবি; দ্বারকানাথ-গিরীন্দ্রনাথ-গুণেন্দ্রনাথ হয়ে সমরেন্দ্রনাথ ও তাঁর উত্তরপুরুষদের বহতা বংশধারাটিও। তবে মুদ্রণপ্রমাদ পিছু ছাড়েনি, বিরল দু’-একটি ক্ষেত্রে তথ্যভ্রান্তিও— রবীন্দ্রবিশ্ব/বৃত্ত-চর্চায় যা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত।

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সমরেন্দ্রনাথ ঠাকুরশুভজিৎ সরকার

২২০.০০

পত্রলেখা

“বিজ্ঞানে এবং দর্শনে— জড়জগতেই হোক আর চিন্তার জগতেই হোক— কার্যকারণ একটা অমোঘসূত্র, যা একজন বৈজ্ঞানিকও মানেন, একজন দার্শনিকও মেনে চলেন,” গ্রন্থভূমিকায় মত লেখকের। সেই সূত্র ধরেই সমসাময়িক দুই বাঙালি মনীষী জগদীশচন্দ্র বসু ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সৃজনশীল সমন্বয়’ কী করে সম্ভব হয়েছিল, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের ‘আপাত-ভিন্ন’ জায়গায় তাঁরা কতটা পরিপূরক ছিলেন, তা খোঁজার ও বোঝার চেষ্টা রয়েছে বইটিতে। এই সন্ধানের উপাদান দু’জনের চিঠিপত্র, অব্যক্ত ও বিশ্বপরিচয়-এর মতো বই, অন্য লেখালিখিতে ছড়িয়ে থাকা ওঁদের ভাবনাবীজ ও ব্যক্ত মতামত। জগদীশচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথের সংযোগ-সম্পর্ক নিয়ে চর্চা আগেও হয়েছে, তবে এই বইতে আরও যা আছে তা হল দু’জনের ‘জগৎ’ জুড়ে ‘আলো’র প্রভাব: ‘ফিজ়িক্স’ ও ‘মিউজ়িক’, পদার্থবিদ্যার তত্ত্ব ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের আধারে সেই আলোকে মেলাতে চান লেখক। শেষাংশে রয়েছে আজকের পরিবেশ-ভাবনা ও সঙ্কটের প্রেক্ষিতে জগদীশচন্দ্র ও রবীন্দ্র-দর্শনের তুলনামূলক আলোচনা।

দার্শনিক-বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক-কবি জগদীশচন্দ্র বসু এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সুশান্ত দত্তগুপ্ত

২০০.০০

লালমাটি

রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষে, ১৯৬১-তে প্রথম শান্তিনিকেতনে আসেন অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য, সে ছিল নেহাত দেখতে আর বেড়াতে আসা। ১৯৬৬-তে সেই তিনিই সেখানে শিক্ষকরূপে কাজে যোগ দিলেন, তার পর কেটে গিয়েছে সুদীর্ঘ কর্মজীবন, অবসর পর্যন্ত ও তার পরেও শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন দেখেছেন বারো জন উপাচার্যের কার্যকাল। ছয় দশকে শান্তিনিকেতনের ‘অজানা অন্দরের ইতিকথা’ তথা স্মৃতিকথা এই বইয়ে। কান্না-হাসির দোল দোলানো কত না টুকরো ছবি: রবীন্দ্রনাথের কন্যা মীরা দেবীর মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ আনা হয়েছে উত্তরায়ণে গেটের সামনে; উঁচু মাচায় দাঁড়িয়ে গান্ধীজির মূর্তি গড়ছেন রামকিঙ্কর বেজ; বক্তৃতারত অতিথি বুদ্ধদেব বসু বা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়; বসন্তের গান শেখাচ্ছেন শান্তিদেব ঘোষ কি কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। পৌষমেলা, অধ্যাপকদের ফুটবল ম্যাচ, শীতের শান্তিনিকেতনের রোজকার তাপমাত্রা ডায়েরিতে টুকে রাখা, রোজকার দিনযাপন, সংসার। রবীন্দ্রনাথকে যাঁরা দেখেছেন, যাঁরা ছিলেন তাঁর বৃত্তের কাছে-দূরের লোক, কিংবা আশ্রমের প্রবাদপ্রতিম মাস্টারমশাই শিল্পী সারস্বতেরা— সকলেই ফুটে উঠেছেন অমল আলোয়। ঝরঝরে কলমের লেখা পড়ার একটা আলাদা আকর্ষণ আছেই। তারিফ করতে হয় নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়েরও, ছবিতে রেখায় বইটি সাজিয়ে দিয়েছেন যিনি।

শান্তিনিকেতনে ষাট বছর

অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য

৫০০.০০

আশাদীপ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

book review Rabindranath Tagore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy