Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাসমাইনে ৭ হাজার, বর্ধমানে লক্ষ লক্ষ টাকার গয়না-গাড়ি-বাড়ির মালিক আসলে...

সম্প্রতি জামালপুর ২ পঞ্চায়েতে অডিট করার পরে সরকারি আধিকারিকরা দু’দফায় চিঠি দিয়ে জানান, ১০০ দিনের কাজ থেকে কেঁচো তৈরির প্রকল্পে ২৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও ইন্দিরা আবাস যোজনার মজুরি বাবদ ১১ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা অতিরিক্ত তোলা হয়েছে।

অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।

অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামালপুর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

বর্ধমানের একটি গয়নার দোকান থেকে এক দিনে সোনা কেনা হয়েছে ৩৬ লক্ষ টাকার। পুরনো বাড়ি ভেঙে তৈরি হয়েছে পেল্লায় বাড়ি। বাড়ি লাগোয়া গ্যারাজে রয়েছে দু’টি যাত্রীবাহী গাড়ি। যিনি এ সব করেছেন, তাঁর বেতন মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা।

সম্প্রতি জামালপুর ২ পঞ্চায়েতে অডিট করার পরে সরকারি আধিকারিকরা দু’দফায় চিঠি দিয়ে জানান, ১০০ দিনের কাজ থেকে কেঁচো তৈরির প্রকল্পে ২৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও ইন্দিরা আবাস যোজনার মজুরি বাবদ ১১ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা অতিরিক্ত তোলা হয়েছে। জামালপুর ব্লক ও পঞ্চায়েতও যৌথ তদন্তে নামে। অভিযোগ ওঠে, ওই পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুকান্ত পাল ওই দুটি কর্মসূচি ছাড়াও গাছ লাগানো, নির্মল বাংলা কর্মসূচি থেকেও টাকার গরমিল করেছেন। বুধবার পর্যন্ত ব্লক দফতরের হিসেবে ‘চুরি’র টাকার অঙ্ক আনুমানিক দু’কোটি টাকা।

বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমাদের দুটি পঞ্চায়েত এফআইআর করেছে। আমরা অন্তর্তদন্ত এখনও চালিয়ে যাচ্ছি। যা তথ্য উঠে আসছে, সেটাই পুলিশকে দেওয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টি জেলা ও রাজ্যের আধিকারিকদেরও জানানো হয়েছে।’’

অভিযুক্ত সুকান্ত পাল ২০০৭ সাল থেকে ওই পঞ্চায়েতের চুক্তিভিত্তিক কর্মী। সেখানকার এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট (ইএ) মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি জামালপুর থানায় সুকান্তর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর করেন। তাঁর দাবি, ‘‘মাস্টার রোলে অন্য নাম ধাকলেও অ্যাকাউন্ট নম্বরে নিজের বা পরিবারের কারও নম্বর দিত সুকান্ত। তারপরে টাকা এলেই তা সুকান্তদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে যেত। এ ভাবেই গত দেড় বছর ধরে দুর্নীতি চলেছে।’’ তদন্তে জানা গিয়েছে, দুটি পৃথক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ঢুকেছে।

এই ঘটনার আগে কয়েক মাসের জন্য আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বদলি হন সুকান্ত। অভিযোগ, সেখানেও একই ভাবে ৬ লক্ষ টাকা নিজের ও স্ত্রীর অ্যকাউন্টে ঢোকানোর সব ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ মূহুর্তে ব্লক ও জেলার নজরদারিতে টাকাটা আটকে যায়। পঞ্চায়েত প্রধান অশোক ঘোষ জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

আঝাপুর থেকে গত নভেম্বরে অভিযুক্ত বদলি হন বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতে। সেখানকার ইএ সোমেশ্বর মাড্ডির দাবি, “২১ জানুয়ারি থেকে সুকান্ত অফিসে আসছেন না। এখনও পর্যন্ত আমাদের পঞ্চায়েত থেকে প্রকল্পের টাকা চুরি হয়নি।’’

প্রশ্ন উঠছে, কী ভাবে পঞ্চায়েতের কর্তাদের নজর এড়িয়ে এত টাকার দুর্নীতি হল। ব্লক ও পঞ্চায়েতের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী ‘পাসওয়ার্ড’ ব্যবহার করে ব্লকের প্রকল্প আধিকারিক মাস্টার রোল তৈরি করেন। আর টাকা চাওয়ার সময় প্রধান ও ইএ-র ডিজিট্যাল সই ব্যবহার করতে হয়। প্রতিনিয়ত কাজের সুবিধার জন্যে প্রতিটি পঞ্চায়েতের ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের কাছেই ‘পাসওয়ার্ড’ থেকে ডিজিট্যাল সইয়ের জন্য ‘ই-টোকেন’ দেওয়া থাকে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই মাস্টাররোল বের করে উপভোক্তার নাম দিয়ে নিজের বা পরিবারের অন্য কোনও অ্যাকাউন্ট নম্বর বসিয়েছেন সুকান্ত।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অভিযুক্ত পলাতক। এফআইআরে উল্লিখিত টাকা ছাড়াও অনেক বেশি টাকা চুরি করেছে বলে তথ্য মিলছে। অভিযুক্ত ও তাঁর পরিবারের সমস্ত অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন বন্ধ করার জন্যে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।’’

সুকান্তর বাড়ি স্থানীয় কাঁশড়া গ্রামে। তাঁকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর বাবা সমীরবাবু বলেন, “শুক্রবার থেকে সুকান্ত বাড়িতে আসেনি। কোথায় গিয়েছে বলতে পারব না। তবে শুনেছি, অফিসে কিছু গোলমালের জন্যেই বাড়ি আসছে না। গাড়ি দুটি বৌমার নামে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Embezzlement Data Entry Operator Panchayat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE