Advertisement
E-Paper

যাহা ৫২ তাহা ৫০

আজ নোট নাকচের পর পঞ্চাশতম দিন। ক্যালেন্ডারের হিসাবে বাহান্ন, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর মতে পঞ্চাশ। মোদী সত্য, ক্যালেন্ডার মিথ্যা। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর মত বলিয়াই যখন অর্থনীতিতে এত বড় তাণ্ডব মানিয়া লইতে হইল, তখন যাহা পঞ্চাশ তাহাই বাহান্ন।

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০

আজ নোট নাকচের পর পঞ্চাশতম দিন। ক্যালেন্ডারের হিসাবে বাহান্ন, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর মতে পঞ্চাশ। মোদী সত্য, ক্যালেন্ডার মিথ্যা। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর মত বলিয়াই যখন অর্থনীতিতে এত বড় তাণ্ডব মানিয়া লইতে হইল, তখন যাহা পঞ্চাশ তাহাই বাহান্ন, এইটুকু মানিয়া লইতে কেহ আপত্তি করিবেন বলিয়া মনে হয় না। মোদীজি বলিয়াছিলেন, পঞ্চাশ দিন কাটিবার পরও যদি অর্থনীতির সমস্যা না মিটে, তবে যেন দেশবাসী তাঁহাকে জীবন্ত জ্বালাইয়া দেন। তাঁহার বাগ্‌বাহুল্যে দেশবাসী অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছেন, অতএব ‘জুমলা’-য় বিশ্বাস করিয়া কেহ কেরোসিন তেলের সন্ধান করিতেছেন না। এটিএম-এর সম্মুখে লাইনের দৈর্ঘ্য কমিয়াছে, নগদের জোগানও খানিক বাড়িয়াছে— কিন্তু, তাহা নোট বাতিলের ধাক্কা সামলাইয়া উঠিবার প্রমাণ নহে। নোটবিলুপ্তির ঘা অর্থনীতির গায়ে যে ক্ষত সৃষ্টি করিয়াছিল, তাহার উপরিভাগ শুকাইয়াছে, কিন্তু বিষ এখন অর্থনীতির শিরা-ধমনীতে বহিতেছে। নোটের জোগান বাড়াইয়া সেই অসুখের প্রতিকার হইবে না। কালো টাকার অবশ্য কোনও ক্ষতি হয় নাই। অর্থনীতিবিদদের হিসাব ছিল, দুই হইতে তিন লক্ষ কোটির কাছাকাছি টাকা ব্যাঙ্কে ফিরিবে না— নোটবিলোপের গোলায় ওই পরিমাণ কালো টাকাই নষ্ট হইবে। তাঁহাদের সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করিয়া বাজারে থাকা প্রায় সব টাকাই ব্যাঙ্কে ফিরিতেছে। মোল্লা নাসিরুদ্দিন হয়তো জিজ্ঞাসা করিতেন, তবে বিড়াল কোথায়? নরেন্দ্র মোদীর নিকট উত্তর নাই।

নোট নাকচ ছিল তাঁহার একক প্রদর্শনী। তিনি উত্তমপুরুষ একবচনে বিশ্বাসী। আশঙ্কা হয়, নিজের বিজ্ঞাপনী প্রচারে তিনি নিজেই ভুলিয়াছেন— বিশ্বাস করিয়া বসিয়াছেন, তিনি সব পারেন। দুনিয়ার কার্যত সব প্রথম সারির অর্থনীতিবিদ যে সিদ্ধান্তে মারাত্মক ভুল দেখিতে পান, নরেন্দ্র মোদী শুধু নিজের বিশ্বাসে সেই সিদ্ধান্ত গোটা দেশের উপর চাপাইয়া দিলেন। এবং, গোপনে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালান বলিয়াছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তটি লইয়া এমন গোপনীয়তার কোনও প্রয়োজন ছিল না। আসলে, ছিল। রাত আটটার ভাষণে হঠাৎ এমন একটি ঘোষণা করিয়া দেওয়ার মধ্যে যে নাটকীয়তা আছে, প্রধানমন্ত্রীর নিকট তাহা বহুমূল্য। তিনি একই সঙ্গে নিজের ‘সুপারম্যান’-সুলভ ভাবমূর্তি গড়িতেছেন এবং নিজেই তাহাতে বিশ্বাস করিতেছেন। তিনি চাহিলে, এবং একমাত্র তিনিই চাহিলে যে ভারতের সব সমস্যার সমাধান সম্ভব, এই কথাটি প্রতিষ্ঠা করিবার অদম্য তাগিদে নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় অর্থনীতির গলা টিপিয়া ধরিলেন। একা নায়ক হইবার প্রবণতাটি কতখানি বিপজ্জনক, ভারত বুঝিতেছে।

মানুষের অসুবিধা যতখানি হইয়াছে, ক্ষোভ সেই তুলনায় সামান্যই। কেন? কেহ বলিতে পারেন, ইহা সনাতন ভারতীয় মনের মাহাত্ম্য, যে মন জানে, কষ্ট না করিলে ভাল কিছু অর্জন করা সম্ভব নহে। কেহ আবার বলিতে পারেন, ইহা একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্যক প্রমাণ, যেখানে নেতা যেমন নাগরিকদের নিতান্ত মতামতহীন কিছু সংখ্যা হিসাবে বিবেচনা করেন; নাগরিকরাও নিজেদের সত্তাকে আর গুরুত্ব দেন না— তাঁহারা নেতার মুখাপেক্ষী হইয়া থাকেন। বিশ্বাস করেন, নেতা যাহা করিবেন, তাহা মঙ্গলের জন্যই। নরেন্দ্র মোদীর সমর্থকরা বলিবেন, কষ্ট কমিয়াছে বলিয়াই ক্ষোভও তীব্র নহে। সত্যই নগদের কষ্ট খানিক কমিয়াছে। কিন্তু, পঞ্চাশ দিনের বদলে পঁয়ত্রিশ দিন কষ্ট দিয়াছি, অতএব আর জবাবদিহির দায় নাই, ইহা প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি হইতে পারে না। তাঁহাকে বলিতে হইবে, যে সিদ্ধান্তে এক আনাও কাজের কাজ হইল না— হওয়ার কথাও ছিল না— তাহার জন্য মানুষকে এতখানি হয়রান করা হইল কেন?

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy