Advertisement
E-Paper

মুষলপর্বের মূল

রাজধানীর এই বিশেষ পরিস্থিতি পালটাইয়া তাহাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা যায় কি না, কিংবা তাহাকে পুরাদস্তুর রাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়া যায় কি না, ইহা সত্যই জরুরি বিবেচনা।

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০৪

ভারতীয় রাজনীতির হাল কোন অতলে গিয়া পৌঁছাইয়াছে, তাহার নূতন মাপকাঠি হাতে আসিল। দিল্লির টাটকা বিতর্ক: মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল ও আপ বিধায়করা সে-দিন চিফ সেক্রেটারিকে দুই থাপ্পড় মারিয়াছেন, না মারেন নাই। বিতর্ক আপাতত আদালত অবধি গিয়াছে। যাক, তবে মামলা-মোকদ্দমা চাপান-উতোর ইত্যাদি সাময়িক ভাবে থিতাইলে একটি কথা শান্ত মাথায় ভাবিয়া দেখা দরকার। দিল্লির পরিস্থিতি যতই দুর্ভাগ্যজনক হউক, ইহা কি অবশ্যম্ভাবী ছিল না? যেখানে একটি অঞ্চলের শাসনভার দুটি শাসকপক্ষের উপর, একটি নির্বাচিত রাজ্য সরকার, অন্যটি কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনীত লেফটেনান্ট গভর্নর ও আমলাবাহিনী, সেখানে কি এই সংঘর্ষ অবধারিত ছিল না? দ্বৈত শাসন বিষয়টি যে সুবিধার নহে, ব্রিটিশদের দৌলতে ভারত তো তাহা দিব্য জানে। অথচ দিল্লিতে রাজ্য সরকারের হাতে ক্ষমতাবিহীন দায়িত্ব, এবং এল-জি প্রশাসনের হাতে দায়িত্ববিহীন ক্ষমতা। পরিস্থিতি সম্প্রতি অধিক মন্দ হইয়াছে যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ২০১৫ সাল হইতে নূতন নির্দেশিকা দেয় যে, পাবলিক অর্ডার, পুলিশ ও জমির সহিত ‘সার্ভিসেস’ বা পরিষেবা বিষয়টিও তাহারাই দেখাশোনা করিবে। দিল্লি হাই কোর্ট পরের বৎসর নির্দেশিকার সমর্থনে রায় দেয়। অতঃপর চিফ সেক্রেটারি আর মুখ্যমন্ত্রীর মনোনীত ব্যক্তি নহেন, আজ্ঞাবহও নহেন। রাজ্য প্রশাসনের সহিত আমলাতন্ত্রের সুষ্ঠু সংযোগ না থাকিলে শাসনকাজ চালানোই মুশকিল। গত কয়েক বৎসর যাবৎ দিল্লিতে তাই অচলাবস্থা চলিতেছে। আপ সরকার যে তাহার নিজের কাজে সুদক্ষ বা নীতিস্থিত, এমন দাবি চলে না। কিন্তু আপ নেতাদের কাজ করিতে দেওয়া হয় নাই, এই অভিযোগও সংগত।

কোন পক্ষের বেশি দোষ, এই তর্ক শেষ হইবার নয়। বরং একটি মৌলিক বিষয়ে মন দেওয়া দরকার। স্বাধীনতার পর নূতন দেশকে যখন ব্রিটিশ আমলাবাহিনী দিয়াই কাজ চালাইতে হইতেছিল, একটি মৌলিক আদর্শ প্রশাসনিক মহলে মান্য হইয়া আসিত— তাহা রাজনীতি-ঊর্ধ্ব আমলা সংস্কৃতি। কোনও দল বা কোনও রাজনীতির সহিত অন্তরঙ্গ সংযোগ আমলারা রাখিবেন না, ইহাই সেই আদর্শের মূল। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্তম্ভস্বরূপ এই আদর্শ, অথচ সেই স্তম্ভ এখন সম্পূর্ণ ভগ্ন, বিদলিত। কেবল দিল্লিতে নয়, প্রতিটি রাজ্যেই এখন আমলাদের সহিত রাজনৈতিক নেতাদের অত্যধিক দহরম-মহরম, এবং ফলস্বরূপ, ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে আমলার মুখ না পালটাইলে অচলাবস্থার আবাহন। দিল্লির অবস্থা বিশেষত করুণ হইবার কারণ, সেখানে দুইটি ক্ষমতাকেন্দ্রের দৌলতে দুইটি রাজনৈতিক দল কাজ করিতে পারে, এবং কাজের বদলে সংঘর্ষে দিনাতিপাত করিতে পারে।

রাজধানীর এই বিশেষ পরিস্থিতি পালটাইয়া তাহাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা যায় কি না, কিংবা তাহাকে পুরাদস্তুর রাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়া যায় কি না, ইহা সত্যই জরুরি বিবেচনা। কিন্তু সেই বিবেচনার পরেও মূল আদর্শ-সংকটটি থাকিয়া যায়। যত দিন পর্যন্ত না আমলারা নিজেদের কেবল দক্ষতার যন্ত্র হিসাবে মানিয়া লইবেন, এবং কোনও রাজনীতির নিকট প্রণিপাত ছাড়াই নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করিতে পারিবেন, তত দিন চড়-থাপ্পড় না হইলেও প্রশাসনিক পঙ্গুত্বের সম্ভাবনা থাকিয়াই যাইবে। আমলাদের নিরপেক্ষতা হওয়া উচিত এমনই যাহাতে রাজনীতির ছোঁওয়া তাঁহাদের ছুঁইতে আসিলেও তাঁহারা ধরা না দেন। আর শাসকপক্ষের উচিত, গণতান্ত্রিক আদর্শ মানিয়া আমলাদের রাজনীতির ছোঁওয়ার বাহিরে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করিতে দেওয়া। মৌলিকতম প্রশ্নটি অবশ্য আপ ও দিল্লির আমলাদের দিকে তাকাইলেই স্পষ্ট হয়— সংকীর্ণ ও ক্ষুদ্র স্বার্থের পূজারি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এই আদর্শ মানিবেন কে বা কাহারা?

Anshu Prakash AAP Arvind Kejriwal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy