Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

এক দিন প্রতি দিন

বিশ্বের বৃহত্তম একদিবসীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইল ইন্দোনেশিয়ায়। পূর্বে পাপুয়া হইতে পশ্চিমে আচে পর্যন্ত পাঁচ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বীপপুঞ্জের উনিশ কোটির কিছু অধিক নাগরিক মাত্র আট ঘণ্টায় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করিলেন

বান্দা আচের নির্বাচনী কেন্দ্রে। ছবি: এএফপি

বান্দা আচের নির্বাচনী কেন্দ্রে। ছবি: এএফপি

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

বিশ্বের বৃহত্তম একদিবসীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইল ইন্দোনেশিয়ায়। পূর্বে পাপুয়া হইতে পশ্চিমে আচে পর্যন্ত পাঁচ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বীপপুঞ্জের উনিশ কোটির কিছু অধিক নাগরিক মাত্র আট ঘণ্টায় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করিলেন। ভোটপ্রার্থীর সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। পুরা প্রক্রিয়াটিকে সম্ভব করিতে সতেরো হাজার দ্বীপ সংবলিত দেশটিতে ব্যালট কাগজ পৌঁছাইয়া দিয়াছিল বিমান, স্পিডবোট, ডিঙি, এমনকি অশ্বারোহীগণ। পুলিশ, সেনা ও আধাসেনা হিসাব করিলে কুড়ি লক্ষের বাহিনী মোতায়েন হইয়াছিল। জাকার্তা সংলগ্ন এক হাজার দ্বীপের অধিবাসীদের জন্য ভ্রাম্যমাণ বুথের বন্দোবস্ত হইয়াছিল, এবং স্পিডবোটে ছিল পুলিশ। ইন্দোনেশিয়ায় তিনটি টাইম জ়োন— রাজধানী জাকার্তার দুই ঘণ্টা পূর্বে সকাল সাতটা হইতে ভোট শুরু হয় দেশের পূর্বতম প্রদেশ পাপুয়ায়। নির্বাচনের প্রাককালে টর্নেডোর দাপটে তছনছ হইয়াছিল পূর্ব জাভার এক গ্রামের চারটি বুথ। সেই বন্দোবস্ত অন্যত্র হইয়াছিল। শেষ অবধি অবশ্য সকলই সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হইয়াছে বলিয়া সংবাদ।
ভারতেও নির্বাচন চলিতেছে, তবে সাত পর্বে, দেড় মাসের কালপর্ব লইয়া। ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণ একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন তোলে: আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া এত দীর্ঘ কেন? সন্দেহ নাই যে ভারতের ব্যাপ্তি, বৈচিত্র এবং জনসংখ্যার সহিত ইন্দোনেশিয়ার তুলনা চলে না। কিন্তু দেড় মাসের কালপর্বটি কিঞ্চিৎ ছোট করিবার প্রচেষ্টাও কি অসম্ভব? কারণ, দীর্ঘ নির্বাচনের সমস্যা স্পষ্ট। সাধারণ ধারণা অনুসারে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নিকট নির্বাচনী কালপর্বটি পীড়াদায়ক, কিন্তু এত কাল যাবৎ জনতাকে অনুমানের ক্রীড়ায় নিমজ্জিত রাখিবার প্রক্রিয়া তাহাদের প্রতিও অবমাননা। অগণতান্ত্রিকও বটে— বহু গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য মুলতুবি রাখিতে বাধ্য হন সাধারণ নাগরিক। সরকারি কার্যালয়গুলিতে অনিশ্চয়তার মেঘ জমা হয়, জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ চলে না, এবং সকল কাজেই জনতাকে ফল প্রকাশ অবধি অপেক্ষা করিবার উপদেশ দেওয়া হয়। দেশের নিরাপত্তাকর্মী এবং সরকারের সকল কর্মী দেড় মাস জুড়িয়া কেবল ইভিএম লইয়া ব্যস্ত থাকিতে বাধ্য হন।
ইহা ব্যতীত আছে আদর্শ আচরণবিধি। যে হেতু সরকার এই পর্বে কেবলই তত্ত্বাবধায়ক, অতএব নীতি-নির্ধারণের কাজ স্থগিত থাকে। জনতার হিতার্থে নূতন প্রকল্প চালু করিবার উপায় থাকে না। বিপ্রতীপে, ‘ডিজিটাল ভারত’-এর বাস্তবের মাটিতে আদর্শ আচরণবিধি যথাযথ রূপে পালিত হয় না। আচরণবিধি অনুসারে ভোটগ্রহণের দুই দিন পূর্বে প্রচারপর্ব শেষ করিতে হয়। কিন্তু নির্বাচন যে হেতু সাত দফায়, অতএব নির্দিষ্ট নির্বাচনী কেন্দ্র ব্যতিরেকে অন্যত্র প্রচার করিতে বাধা নাই, এবং টিভি-স্মার্টফোনের দৌলতে তাহা দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়াইয়া পড়িলেও অসুবিধা নাই। স্বভাবতই বার্তা সর্বত্র পৌঁছায়, এবং দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা ভাবের ঘরে চুরি করিয়াও বিবেক সাফ রাখিতে পারেন। নির্বাচন পর্বে সকল মনোযোগ যে রাজনীতির অভিমুখেই কেন্দ্রীভূত হইবে, ইহা অবশ্যম্ভাবী। নির্বাচনের কালপর্ব হ্রস্বতর করিতে না পারিলে মনোযোগের কালপর্বও ছোট করিবার ভাবনা অবান্তর। ইন্দোনেশিয়া যে উদাহরণ স্থাপন করিল, তাহা কি ভারতও বিবেচনা করিতে পারে না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Election 2019 Indonesian general election Democracy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE