Advertisement
E-Paper

নজরদার

রাষ্ট্র নজরদারি করিয়াই থাকে। তাহার জন্য সার্ভাইল্যান্স হাব-এর প্রয়োজন হয় না। রাষ্ট্রকে চটাইবার দুঃসাহস যে ব্যক্তি দেখান, তিনিই জানেন এই নজরদারির মহিমা ও তীব্রতা। কিন্তু, তাহার সহিত সার্ভাইল্যান্স হাব গড়িয়া নজরদারির মধ্যে ফারাক আছে। প্রথম ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় নজরদারির আওতায় আসেন। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, প্রত্যেকে।

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০

সুপ্রিম কোর্টের ধাতানিতে হুঁশ ফিরিল। কেন্দ্রীয় সরকার জানাইয়াছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারির জন্য হাব তৈরির পরিকল্পনাটি বাতিল হইতেছে। অন্তত, সাময়িক ভাবে। কেহ আশঙ্কা করিতেই পারেন, নূতন কোনও ছদ্মবেশে পরিকল্পনাটি ফিরিয়া আসিতেও পারে। ১৩০ কোটির উপর নজরদারি চালাইবার তাগিদ এত সহজে ফুরাইবে, সেই কথায় কেহ বিশ্বাস করিতে না পারিলে দোষ দেওয়া কঠিন। কিন্তু, এখনকার মতো পরিকল্পনাটি বাতিল হইল। নাগরিক তাহার ব্যক্তি-পরিসরে কী আলোচনা করিবে, তাহার উপরও যদি সরকার নজর রাখিতে থাকে, তবে যে গণতন্ত্রের চক্ষুলজ্জাটুকুও আর বজায় থাকে না, সরকারকে কি তাহাও বলিয়া দিতে হইবে? মানুষকে তাহার খাদ্যের রুচি বজায় রাখিবার অধিকার দিতেও আদালত ভরসা, গণপ্রহারের হাত হইতে প্রাণ বাঁচাইতেও আদালত ভরসা। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় দেখা যাইতেছে, সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ ভিন্ন নাগরিকের অধিকার রক্ষার আর কোনও পথ নাই। গণতান্ত্রিক পথে নির্বাচিত সরকার, গণতান্ত্রিক সংবিধানের নামে শপথ গ্রহণ করা সরকারের হাত হইতে গণতন্ত্রকে রক্ষা করাই যখন বিচারবিভাগের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হইয়া দাঁড়ায়, তখন দুঃসময়ের অভিঘাত বুঝিতে কষ্ট হয় না। কয়েক মাসের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদীরা ফের ভোট চাহিতে নামিবেন। মানুষকে কী বলিবেন তাঁহারা? মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কাড়িয়া লইবার মতো নজরদারি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করিতেই ফের তাঁহাদের ক্ষমতায় আনা হউক?

রাষ্ট্র নজরদারি করিয়াই থাকে। তাহার জন্য সার্ভাইল্যান্স হাব-এর প্রয়োজন হয় না। রাষ্ট্রকে চটাইবার দুঃসাহস যে ব্যক্তি দেখান, তিনিই জানেন এই নজরদারির মহিমা ও তীব্রতা। কিন্তু, তাহার সহিত সার্ভাইল্যান্স হাব গড়িয়া নজরদারির মধ্যে ফারাক আছে। প্রথম ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় নজরদারির আওতায় আসেন। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, প্রত্যেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থিত, এমন সব ভারতীয় রাষ্ট্রের অতন্দ্র নজরদারির তলায় থাকিতে বাধ্য হইতেন। বস্তুত, সবার উপর নজরদারির প্রয়োজনও হইত না। সরকার নজর রাখিতেছে, এই কথাটুকুই যথেষ্ট হইত। ব্যক্তি-পরিসরেও মত প্রকাশ করিতে মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত হইতেন। ভয় পাইতেন। গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তিই নাগরিকের অসন্তুষ্টি প্রকাশের স্বাধীনতা। রাষ্ট্রীয় নজরদারির জোরে তাহা কাড়িয়া লইতে পারিলে লাভ কাহার, নাগপুরের পাঠশালার পড়ুয়ারা নিশ্চয় জানেন। অভিজ্ঞজনেরা বলিবেন, সরকারের জনপ্রিয়তা যখন ক্রমহ্রাসমান, তখনই এই নজরদারির প্রকল্পটির অবতারণা নেহাত সমাপতন ছিল না। বিরুদ্ধ মতের কণ্ঠরোধ করিবার এমন কার্যকর উপায় খুব বেশি নাই।

কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের ব্যক্তিগত কথোপকথনের উপর নজরদারি প্রয়োজন, তাহার যে যুক্তি কেন্দ্রীয় সরকার সাজাইয়াছিল, তাহা বালখিল্যও নহে। সরকারের নীতি ও প্রকল্প লইয়া মানুষ কী ভাবিতেছে, তাহা জানিতে আড়ি পাতিতে হইবে— এমন যুক্তি যাঁহার মগজ হইতে বাহির হইয়াছিল, তিনি বড় সামান্য লোক নহেন। সরকারের কাজ লইয়া মানুষ কী ভাবিতেছে, তাহা জানিবার বহু গণতন্ত্রসিদ্ধ পন্থা রহিয়াছে। কিন্তু, গত চার বৎসরে বারে বারেই সংশয় হইয়াছে, নরেন্দ্র মোদীর সরকার তাহা জানিতে আগ্রহী নহে। নাগপুর কী চাহিতেছে, তাহা জানাই যথেষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন হইল, নির্বাচনের মুখে যদি সত্যই সরকার লোকের মন জানিতে চাহে, যদি নজরদারির আর কোনও (দুষ্ট) উদ্দেশ্য না-ও থাকে, তবুও কি আড়ি পাতা চলে? মানুষের গোপনীয়তার অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকারকে কি কোনও যুক্তিতেই খণ্ডন করা চলে? গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা থাকিলে সরকার কথাগুলি ভাবিত। মোদীর সরকার ভাবিবে, সেই ভরসা নাই।

Surveillance Social Media Supreme Court Central Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy