Advertisement
E-Paper

মতপ্রকাশের অপরাধ

এমনিতেই নানা ভাবে এখন এই দেশে বাক্‌স্বাধীনতা যথেষ্ট বিপন্ন। তন্মধ্যে এমন একটি দৃষ্টান্ত থাকিয়া গেলে বাক্‌স্বাধীনতার পরিস্থিতি আরও মন্দ হইবার সম্ভাবনা থাকিতে পারিত।

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০০:০২

শেষ পর্যন্ত জামিনে ছাড়া পাইয়াছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি যুবনেত্রী প্রিয়াঙ্কা শর্মা। শর্তনিরপেক্ষ ভাবেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কুরুচিপূর্ণ ‘নকল’ ছবি চালাচালি করিবার ‘অপরাধ’-এ তাঁহাকে গ্রেফতার করা হয়, এবং ঘটনাক্রমে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি আনীত হয়। সর্বোচ্চ বিচারালয়ের বিচারপতিদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখিয়াও বলিতে হয় যে এত সহজ একটি মামলাকে সেখানে প্রথমে অকারণ কঠিন করিয়া ফেলিয়া প্রিয়াঙ্কার মুক্তির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনাকে একটি শর্ত হিসাবে রাখা হইয়াছিল। পরে পুনর্বিবেচনা করিয়া সেই শর্ত বাদ দেওয়া হইয়াছে, কেননা শর্তাধীন মুক্তির কথা বলিলে সংবিধান-অনুসারে দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি লঙ্ঘিত হইতে বসিয়াছিল। বিচারের দিক হইতে বিষয়টি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতেই নানা ভাবে এখন এই দেশে বাক্‌স্বাধীনতা যথেষ্ট বিপন্ন। তন্মধ্যে এমন একটি দৃষ্টান্ত থাকিয়া গেলে বাক্‌স্বাধীনতার পরিস্থিতি আরও মন্দ হইবার সম্ভাবনা থাকিতে পারিত। কর্তৃত্ববাদী শাসকরা আরওই ছড়ি ঘুরাইবার সুযোগ পাইতেন। ভুলিয়া যাইতেন যে, নাগরিক নিজের মতামত প্রকাশ করিতেই পারেন, এবং কুরুচিময় হইলেও রঙ্গ-ব্যঙ্গ-পরিহাস করিবার অধিকার গণতন্ত্রে বাক্‌স্বাধীনতার মধ্যেই পড়ে। যে রাষ্ট্র নাগরিক স্বাধীনতার এই মূল নীতিটি মানে না, সেই রাষ্ট্র গণতন্ত্রের দাবি করিতে পারে না। তাহাকে একটি নূতন বিশেষণ লইতে হয়: কর্তৃত্ববাদী। সুপ্রিম কোর্টকে আর এক বার কুর্নিশ, বিপন্ন সময়ে গণতন্ত্রের মূল নীতিটি আরও এক বার দেশে প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য।

পশ্চিমবঙ্গে প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করা হইয়াছিল। সুতরাং এই অবকাশে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশটি লইয়াও ভয় পাইতে হয়। ইহা প্রথম বার নহে। অম্বিকেশ মহাপাত্রের রাজ্যের অধিবাসীরা অনায়াসে মনে করিতে পারিবেন, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় মতপ্রকাশের কারণে আগেও নাগরিক কী ভাবে হেনস্থা হইয়াছেন, কেবল বার্তা ‘ফরোয়ার্ড’ করার অপরাধে কেমন শাস্তি পাইয়াছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সহজ কথা বুঝিতে পারিতেছেন না। ‘পাবলিক’ ব্যক্তিত্ব হইতে গেলে ধৈর্য ও সহ্যক্ষমতার প্রয়োজন। তিনি রাজনীতি করিবেন, আর নাগরিক সমাজ তাঁহাকে কেবল উদ্বাহু সমর্থন জানাইবে, কোনও বিরুদ্ধতা করিবে না, তাঁহাকে লইয়া বিদ্রুপ করিবে না, এতখানি তিনি প্রত্যাশা করিতে পারেন না। ভারতীয় রাজনীতিতে নেতাদের লইয়া ব্যঙ্গচিত্র আঁকিবার ঐতিহ্য বহুপুরাতন, আগেকার নেতারা এই বিষয়ে অনেক সহনশীল ছিলেন।

আর আজ? বিরুদ্ধাচারীকে পেয়াদা পাঠাইয়া গ্রেফতারের ঘটনা বলিয়া দেয়, কর্তৃত্ববাদের সহিত মিশিতেছে প্রতিহিংসাপরায়ণতা, সৃষ্টি হইতেছে সমাজের শ্বাস বন্ধ করিবার মতো রাজনৈতিক পরিবেশ। রাজ্যের বর্তমান ভোট-চিত্র একটি সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন-ভিত সম্ভবত আর আগের মতো নাই। অভিজ্ঞ মহল তাই অনুমানে ব্যস্ত, বিরুদ্ধ পরিসরটি কত দূর কোন দল কাজে লাগাইতে পারিবে, তাহা লইয়া। এক দিকে এই অনুমান চলমান, অন্য দিকে, আশ্চর্য, তৃণমূল সরকার এখনও আগের মতোই স্পর্ধিত ও নির্ভীক। প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টিও একই রকম প্রতিহিংসাপরায়ণ, দুরাচারী ও হিংসাপ্রবণ। বাম ও কংগ্রেস দলগুলির গুরুতর অস্তিত্ব-সঙ্কট। সব মিলাইয়া, কোন দলের কী ফলাফল হইবে, তাহা অপেক্ষাও এই বারের ভোটে রাজ্যের শুভবোধসম্পন্ন নাগরিক অধিক চিন্তান্বিত, রাজ্যের ভবিষ্যৎ কী হইবে ভাবিয়া। অনাচার ও অপশাসনের প্রতিযোগিতায় সব কয়েকটি দল পরস্পরের সহিত পাল্লা দিবার প্রতিজ্ঞায় অবিচল থাকিলে নাগরিক সমাজের কপালে আর কী-ই বা পড়িয়া থাকে!

Lok Sabha Election 2019 Priyanka Sharma Mamata Banerjee Supreme Court BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy