Advertisement
E-Paper

উচ্চতার সন্ধানে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন, দুটি উন্নত দেশে সম্প্রতি প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল কমিয়াছে বৃদ্ধদের। আফ্রিকার কোনও কোনও দেশে নূতন প্রজন্মের দৈর্ঘ্য কমিয়াছে। বাড়িতেছে আবহাওয়ার বিপর্যয়।

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০৫

আর কত বড় হইলে নাদের আলী তিন প্রহরের বিল দেখাইতে লইয়া যাবে, প্রশ্ন করিয়াছিলেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। মাথা ঘরের ছাদ ছুঁইয়া আকাশ স্পর্শ করিলে তবে কি যথেষ্ট বড় হইবে বালক? ইহা কবিতা বটে, তবে নেহাত কবিকল্পনা নহে। মানুষের উচ্চতা বা়ড়িয়া চলিবে, বাপ-মায়ের চাইতে দীর্ঘ হইবে সন্তান, এমন প্রত্যাশাতেই তো অভ্যস্ত মানবসমাজ। হায়, সম্প্রতি ফরাসি বিজ্ঞানীরা বলিলেন, বাড়িবার সীমায় পৌঁছাইয়াছে মানুষ। দীর্ঘ মানুষের সংখ্যা বাড়িতে পারে, আরও অনেক মানুষ শতায়ু হইতে পারেন। কিন্তু সাত ফুট উচ্চতা বা দেড়শো বৎসরের আয়ু অসম্ভব। শুনিলে আঘাত লাগে। নিজের সীমা অতিক্রম করিবার ইচ্ছা না থাকিলে আবার মানুষ? ‘এই পর্যন্ত, আর নহে,’ এমন কথা শুনিলেই মানবমন বিদ্রোহ করে। তদুপরি প্রযুক্তি ও প্রশাসনে উন্নতির জন্য মানবজাতির উন্নয়ন সকল বিষয়ে এক সরলরেখায় ঊর্ধ্বমুখে উঠিবে, এমন একটা ধারণা গত কয়েক দশকে তৈরি হইয়াছে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি হইতে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যে উন্নতির জন্য প্রতি প্রজন্মে মানুষের দৈর্ঘ্য বাড়িয়াছে। বিজ্ঞানীদের মত, উন্নত দেশগুলিতে সংক্রামক রোগ কমা ও পুষ্টির উন্নতির জন্য গত ১৫০ বৎসরে গড়ে চার ইঞ্চি উচ্চতা বাড়িয়াছে। পঞ্চাশ বৎসরে জাপানিদের গড় উচ্চতা বাড়িয়াছে পাঁচ ইঞ্চিরও অধিক। মানুষ এত বাড়িতে পারে, কে ভাবিয়াছিল?

কেবল উচ্চতা নহে, বাড়িয়াছে আয়ু। গত পনেরো বৎসরে বিশ্বে গড় আয়ু বাড়িয়াছে পাঁচ বৎসর। দৈহিক ক্ষমতাও বাড়িয়াছে। প্রতি বৎসরই খেলোয়াড়রা আরও দ্রুত ছুটিবার রেকর্ড গড়িতেছেন। গ্রিক বা ভারতের প্রাচীন সাহিত্য মানুষকে দেবতার প্রতিস্পর্ধী বলিয়া দেখিয়াছিল। বিংশ শতাব্দী তাহাকে বাস্তব করিয়াছে। কিন্তু আর নহে। ফ্রান্সের প্যারিস দেকার্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, আরও পুষ্টি, আরও উন্নত চিকিৎসা, কোনও কিছুই মানবদেহের দৈর্ঘ্য, আয়ু বা ক্ষমতা বাড়াইতে পারিবে না। গত ১২০ বৎসরের তথ্য-পরিসংখ্যান বিচার করিয়া তাঁহাদের বক্তব্য, আধুনিক সমাজ মানুষকে তাহার দৈহিক সীমায় পৌঁছাইয়া দিতে পারিয়াছে। ইহার পর স্থিতাবস্থার মালভূমি। বরং তাঁহারা সতর্ক করিয়াছেন, দূষণের জন্য পরিবেশের অবনতি ঘটিলে দৈর্ঘ্য, আয়ু কিংবা ক্ষমতার সীমা কমিতে পারে।

সে সম্ভাবনা দৃশ্যমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন, দুটি উন্নত দেশে সম্প্রতি প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল কমিয়াছে বৃদ্ধদের। আফ্রিকার কোনও কোনও দেশে নূতন প্রজন্মের দৈর্ঘ্য কমিয়াছে। বাড়িতেছে আবহাওয়ার বিপর্যয়। ঝড়ের তীব্রতা বাড়িতেছে, মেরুবরফ কমিতেছে, খরা আরও দীর্ঘ এবং বর্ষণ আরও প্রবল হইতেছে। ‘নাল্পে সুখমস্তি,’ মানুষের এই মন্ত্র তাহাকে বিপর্যয়ের কিনারায় আনিয়াছে। অতঃ কিম্? যদি মানুষ তাহার সীমা মানিয়া থামিত, দিবার চতুর্থ ভাগে শাকান্ন খাইয়া আহ্লাদিত হইত, অতি উত্তম হইত। কিন্তু ইতিহাস তাহার বিপরীত সাক্ষ্য দেয়। উচ্চতা যেমনই হউক, মানুষের উচ্চাশা বরাবরই গগনস্পর্শী। এ বার গন্তব্য মহাকাশ। স্টিফেন হকিং ইতিমধ্যেই বাসযোগ্য নূতন গ্রহের সন্ধান শুরু করিতে বলিয়াছেন। সময় দিয়াছেন একশো বৎসর। শুরু হইয়াছে নূতন গ্রহের তল্লাশ। আয়ু বাড়িবে, কোমর সরু হইবে, চুল পড়িবে না, ব্রহ্মাণ্ডে তেমন গ্রহও কি আছে?

lifespan Height
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy