Advertisement
E-Paper

ভারতীয় রাজনীতির চেহারাটাই আরও স্পষ্ট করলেন বাবুল

অনেকেই মত প্রকাশ করেন অথবা হা-হুতাশ করেন যে, ভারতীয় রাজনীতির সেই যুগটা অতীত। ভারতীয় রাজনীতির সামগ্রিক চরিত্রে অবনমণের ছাপ খুব স্পষ্ট বলে তাঁদের অভিযোগ। বাবুল সুপ্রিয় যেন সেই অভিযোগেই একটা সিলমোহর দিলেন।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০০
বিস্ময়কর ঠেকছে বাবুল সুপ্রিয়র আচরণ এবং কথাবার্তা। —ফাইল চিত্র।

বিস্ময়কর ঠেকছে বাবুল সুপ্রিয়র আচরণ এবং কথাবার্তা। —ফাইল চিত্র।

যা বলেছেন, তা খেয়াল করে বলেছেন তো বাবুল সুপ্রিয়? বিতর্কের ঝড়টা ওঠার পরে যে ব্যাখ্যা তিনি দিচ্ছেন, তার তাৎপর্যটা কী রকম দাঁড়ায়, সেটাও কি ভেবে দেখেছেন ঠিক মতো?

বিস্ময়কর ঠেকছে বাবুল সুপ্রিয়র আচরণ এবং কথাবার্তা। প্রথমত তিনি জনপ্রতিনিধি, দ্বিতীয়ত তিনি দেশের মন্ত্রী, তৃতীয়ত তাঁর একটি শিল্পীসত্তা রয়েছে। সংবেদনশীলতার পরাকাষ্ঠা হওয়া উচিত তাঁর। রাজনীতিতে আসার পরে সে ভাবে কিছুটা প্রতিভাতও হয়েছিলেন হয়তো। কিন্তু তার পরের যাত্রাপথটা বোধ হয় ক্রমাবনতির। একের পর এক বিতর্ক তাঁকে ঘিরে ঘনিয়ে উঠছিল, যার অনেকগুলোই অনভিপ্রেত। বিশেষ ভাবে সক্ষম নাগরিকদের নিয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাবুল সুপ্রিয় যা বললেন, তা দায়িত্বজ্ঞানহীন, অসংবেদনশীল, অবিচক্ষণ।

বিশেষ ভাবে সক্ষম যাঁরা, তাঁদের মধ্যে কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণের অনুষ্ঠান। বিতরণ করবেন কে? কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এই বিশেষ ধরনের জমায়েতের উদ্দেশে মন্ত্রীর বার্তা কী রকম হওয়া উচিত ছিল? বার্তা হওয়া উচিত ছিল প্রেরণার। কিন্তু মন্ত্রীর মুখে কী শোনা গেল? শোনা গেল ধমক। যে সে ধাঁচের ধমক নয়। যাঁর বাঁচার লড়াই এমনিতেই স্বাভাবিক সক্ষমতার ভিত্তিতে নয়, বিশেষ সক্ষমতার ভিত্তিতে যাঁর বেঁচে থাকা, তাঁর সক্ষমতা আরও খানিকটা কেড়ে নেওয়ার কথা বলে ধমক দিলেন এক জনপ্রতিনিধি তথা মন্ত্রী।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ভুল-ত্রুটি হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয় কারও পক্ষেই। বাবুল সুপ্রিয়ও ভুল করতেই পারেন। কিন্তু ভুলটাকে ভুল হিসেবে চিনতে পারা এবং স্বীকার করতে পারা তো জরুরি। এক্ষেত্রে তা ঘটছে না। ভুল স্বীকার করা বা তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা তো দূরের কথা, বাবুল সুপ্রিয় নিজের ভুলটাকে চিনতে পারলেন কিনা, তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। ভুল বুঝতে পেরে যদি কেউ তা স্বীকার না করেন তা হলে সে হল সঙ্কীর্ণতার পরিচায়ক। আর যদি কেউ ভুলটাকে ভুল হিসেবে চিনতেই না পারেন, তা হলে সে আরও বিপজ্জনক। কারণ তা হল অসীম অসংবেদনশীলতার আখ্যান।

আরও পড়ুন: ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেব’, প্রতিবন্ধীদের অনুষ্ঠানে বিতর্কিত মন্তব্য বাবুল সুপ্রিয়র

ভারতের রাজনীতি যে বরাবরই এমন হতদরিদ্র ছিল, তা কিন্তু নয়। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় রাজনীতিকে কিন্তু নানা ভাবে ঋদ্ধ করেছেন একের পর এক সুমহান ব্যক্তিত্ব। কেউ প্রাজ্ঞতায়, বিচক্ষণতায়, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করেছেন দেশকে। কেউ প্রশাসনিক দক্ষতায় এবং ব্যক্তিত্বের ভারে রাজনীতিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। কোনও কোনও রাজনীতিক আবার স্বাক্ষর রেখেছেন মাটির সঙ্গে এক নিবিড় সংযোগের, যে সংযোগের বলে তাঁরা অভ্রান্ত ভাবে বুঝে নিয়েছেন সাধারণ নাগরিকের মনের কথাটা যুগে যুগে।

অনেকেই মত প্রকাশ করেন অথবা হা-হুতাশ করেন যে, ভারতীয় রাজনীতির সেই যুগটা অতীত। ভারতীয় রাজনীতির সামগ্রিক চরিত্রে অবনমণের ছাপ খুব স্পষ্ট বলে তাঁদের অভিযোগ। বাবুল সুপ্রিয় যেন সেই অভিযোগেই একটা সিলমোহর দিলেন।

Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Newsletter Babul Supriyo Controversial Remark Controversy Asansol Differently Abled Twitter বাবুল সুপ্রিয়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy