কখনও এমন মন নিয়েও পয়লা বৈশাখের লেখা লিখতে বসতে হবে, এ আমার সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না। অবশ্য যে-সময়ের মধ্যে দিয়ে, বা বলা উচিত যে-দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা চলেছি, তা নিশ্চিত কারও কল্পনাতেই ছিল না। আমরা অনেকেই নিশ্চয়ই গোড়ার দিকে বেশ আশাব্যঞ্জক ছিলাম এই ভেবে যে, এ পৃথিবী কত কিছু সহ্য করেছে, এ আর এমন কী। কিন্তু দেখতে দেখতে ক’দিনের মধ্যে গোটা পৃথিবীই যে বন্দি অবস্থায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় প্রহর গুনবে, এমন ধারণা আমাদের অনেকেরই ছিল না। অবশ্য, ভুল থেকে গেল একখানা, আগের বাক্যে। গোটা পৃথিবী নয়, কথাটা হবে, সমগ্র মানব-পৃথিবী। আমরা তো আমাদের বাইরে খুব একটা তাকিয়ে দেখতে শিখিনি, তাই মানুষের সঙ্কটকেই পৃথিবীর সঙ্কট বলে দাগিয়ে দেওয়ার ঔদ্ধত্য আমাদের মজ্জাগত। আসলে তো পৃথিবীর অনেক কিছু মানুষের এই বন্দিদশার সুফল ভোগ করছে এবং অন্যান্য অনেক প্রাণীও সেই হিসেবের আওতায় পড়ে। হ্যাঁ, আমরা স্থাণুবৎ হয়ে গিয়েছি প্রায়, সে-অবস্থার জের কবে কাটবে, কে জানে।
পয়লা বৈশাখকে কি আলাদা করে চিনতে পারব আর এ বার? জানি না। হয়তো কিছুটা পারব, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে, যেখানে প্রতিনিয়ত মানুষজন চেষ্টা করছেন অবসাদের হাত থেকে অন্যদের সরিয়ে রাখার, যেখানে গান গেয়ে, কবিতা পড়ে, এঁকে, আরও কত রকম ভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষজনকে একটুখানি চাঙ্গা করার ব্রত নিয়ে রোজই সময় দিচ্ছেন অনেকে। তেমনই পয়লা বৈশাখকেও নিশ্চয়ই মনে রাখব আমরা। যদিও, অস্বীকার করবার কোনও প্রশ্নই নেই যে, মনখারাপ একটা হবেই হবে।
নতুন জামা’র বয়স বা বিলাসিতা, আমার অন্তত এখন কোনওটাই না থাকলেও, যেটা নেশার মতো আছে, সেটা হল দুপুর রোদ মাথায় চড়িয়ে বইপাড়ায় হানা দেওয়া। এ আমাদের শব্দশ্রমিকদের দীর্ঘ দিনের অভ্যেস, প্রকাশকদের ঘরে ঘরে যাওয়া, আড্ডা আর হইহুল্লোড় করা, খাওয়াদাওয়া আর কুশল বিনিময়ে বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটা কাটানো। এ রীতি তো আজকের নয়। এই সুবাদে কত প্রবাদপ্রতিম লেখককে সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, আজও হয়। এ বার সেটা আর হবে না।